মৌলিক শিক্ষা থাকলেই বাজারে চাহিদা থাকবে, এটা মনে করার অবকাশ আর নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই দেখা যাচ্ছে, বিশেষায়িত জ্ঞান থাকলে চাকরি পাওয়াও যেমন সুবিধাজনক, তেমনি মোটা মাইনে পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ফিউচার অব জব সার্ভে ২০২০-এ দেখা যাচ্ছে, বাজারে মৌলিক শিক্ষার চাহিদা স্থিতিশীল, চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষণ নেই।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই জরিপে দেখা যায়, বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা সতর্ক চিন্তা ও বিশ্লেষণের। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬০ শতাংশ কোম্পানি বলছে, এই দক্ষতার চাহিদা বাজারে দিনকে দিন বাড়ছে। এরপর সবচেয়ে বেশি চাহিদা সমস্যা সমাধানের দক্ষতার। এরপর যথাক্রমে আছে স্ব-ব্যবস্থাপনা, অন্যের সঙ্গে কাজের দক্ষতা, নানা ধরনের কাজের সমন্বয় ও প্রযুক্তি ব্যবহার ও উন্নয়নের।
জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় অটোমেশন বা স্বতশ্চলীকরণ ব্যাপক গতি পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আগামী ৫ বছরে সারা পৃথিবীতে সাড়ে ৮ কোটি মানুষের চাকরি যাবে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৩ শতাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বলেছে, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য তাদের কর্মী ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় নেই। তবে যন্ত্রের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মী সংখ্যা বাড়াতেও হবে। আগামী পাঁচ বছরের সব কাজ মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে মোটামুটি সমানভাবে ভাগ হয়ে যাবে।
যন্ত্রের কারণে যেমন চাকরি যাবে, তেমনি নতুন অনেক চাকরি সৃষ্টিও হবে, ঠিক যেমন কম্পিউটার আসার পর হয়েছিল। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনে নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপনা ও কনটেন্ট রচনায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রকৌশল, ক্লাউড কম্পিউটিং ও পণ্য উন্নয়নে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। তবে প্রযুক্তির বাড়বাড়ন্ত হলেও মানব যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়বে। বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতার চাহিদা তৈরি হবে।
বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে বিশ্লেষণী দক্ষতার চাহিদা বেড়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশেও টানা করে যেতে হয় এমন প্রকৃতির কাজের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে, অর্থাৎ যেসব কাজে বিশ্লেষণী দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না, সেই ধরনের কাজ। পাশাপাশি যাঁরা রুটিন কাজ করেন, তাঁদের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পক্ষান্তরে, অধিকতর দক্ষতাসম্পন্ন কাজের মজুরি বেড়েছে। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে দেশের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী এখনো মাঝারি দক্ষতার কাজে যুক্ত আছেন। আর উচ্চ দক্ষতার কাজে নিযুক্ত আছেন মাত্র ৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ।
নিয়োগকর্তা হিসেবে চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে কী দক্ষতা দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে সহজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সতর্ক চিন্তা ও বিশ্লেষণ—প্রথমেই আমি এই দক্ষতা চাইব। নতুন কিছু সহজে বুঝতে পারা এবং সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান বের করে আনার দক্ষতা থাকতে হবে। এ ছাড়া লেগে থেকে কাজটা করার মানসিকতা এবং সদর্থক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা থাকা দরকার।’
এদিকে কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে বাড়ি থেকে কাজের চল শুরু হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কর্মী ঘর থেকে কাজ করতে অক্ষম। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিবর্তিত বাস্তবতায় কাজ করতে নতুন দক্ষতা রপ্ত করতে হবে। সব ধরনের কর্মীদের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য, বলছে ডব্লিউইএফ। সে জন্য কর্মীদের নতুন দক্ষতা শেখানোর বিকল্প নেই।
প্রযুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন দক্ষতার কর্মীদের গুরুত্ব কমে যায়। এতে উচ্চ দক্ষতার কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বৈষম্য আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন দক্ষতার কর্মীদের নতুন দক্ষতা শেখানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষাও দিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ : ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,