Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

দি আর্ট অব ওয়ার

Share on Facebook

দি আর্ট অব ওয়ার বইটি ২ হাজার বছরেরও বেশি আগে লেখা। প্রাচীন চীনা জেনারেল সান-জু বইটি আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব ৫০০ সালের দিকে রচনা করেন।

হাজার বছরের পুরনো হলেও দি আর্ট অব ওয়ার আজও মিলিটারি ও বিজনেস লিডারদের জন্য একটি অপরিহার্য গাইড। বিশ্বের বড় বড় অনেক জেনারেল, সিইও, এবং উদ্যোক্তা এই বইটি থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলেন।

বইটি মূলত লেখা হয়েছিল যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করার কৌশল বিষয়ে। তবে বইটি শুধু যুদ্ধ ছাড়াও, ব্যবসা, খেলাধুলা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকার জন্য দারুন কিছু শিক্ষায় পূর্ণ।

বিশ্বের অন্যতম ব্যবসা বিষয়ক ওয়েবসাইট “বিজনেস ইনসাইডার” এর সূত্র অনুযায়ী, ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ একবার স্ন্যাপচ্যাট সিইও ইভান স্পিজেলকে পরোক্ষ ভাবে হুমকি দেন। তিনি ইঙ্গিতে ইভানকে বলেন, স্ন্যাপচ্যাটকে ফেসবুক দাঁড়াতে দেবে না। বলার মত কিছু করার আগেই তিনি স্ন্যাপচ্যাটকে শেষ করে দেবেন।

কেবল গড়ে উঠতে থাকা স্ন্যাপচ্যাট তখন কেবল মাত্র ৬ জনের একটি প্রজেক্ট। আর ফেসবুক তখন পুরোপুরি জায়ান্ট হয়ে গেছে। ইভান এর একটু ভয় হওয়ারই কথা। সেই মিটিং থেকে ফেরার পথে তিনি টিমের সবার জন্য সান-জু এর লেখা আর্ট অব ওয়ার এর ৬টি কপি কিনে নিয়ে যান।

বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকায় স্ন্যাপচ্যাটের ইউজার গ্রোথ (ব্যবহারকারী বাড়ার হার) ফেসবুকের চেয়ে বেশি। এটাকেই বলা হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের প্রধান সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম।

ফেসবুকের মত জায়ান্টের হুমকির মুখে এতদূর আসার পেছনে স্ন্যাপচ্যাট সিইও সান-জু’র বইটিকে অনেকটাই কৃতিত্ব দেন।

আপনি যদি জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকতে চান – তবে দি আর্ট অব ওয়ার আপনাকেও অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে। আর সেকারণেই আমরা বইটির মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরছি এই বুক রিভিউয়ে। যাতে আপনি বইয়ের মূল আইডিয়াগুলো বুঝে কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া মূল বইটি পড়ার সময়ে বিষয়বস্তুগুলো বুঝতেও আপনার সুবিধা হবে।

দি আর্ট অব ওয়ার এর বিস্তারিত বুক রিভিউ:
দি আর্ট অব ওয়ার বইটি মোট ১৩টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায় যুদ্ধের আলাদা আলাদা কৌশল নিয়ে কথা বলেছে। এর কিছু নিজের সৈন্যদের পরিচালনা করার সাথে জড়িত, আর কিছু জড়িত প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন ভাবে পরাজিত করার কৌশলের সাথে।যুদ্ধ ছাড়াও অন্য ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিযোগীতার জন্য প্রস্তুত করা, সঠিক টিম ওয়ার্ক এর জন্য নিজের টিমকে প্রশিক্ষণ দেয়া, এবং সত্যিকার প্রতিযোগীতায় প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার জন্য এই বইয়ের কৌশলগুলো খুবই কাজে আসবে।

এই কৌশলগুলোর মূল বিষয়গুলো আমরা ১৩টি পয়েন্টে ভাগ করে আপনার সামনে তুলে ধরব।

০১. ম্যানেজমেন্ট: টিমের সদস্যদের প্রতি যত্নশীল, কিন্তু প্রয়োজনে কঠোরও হোন
সান-জু এর মতে একজন টিম লিডার এর ৫টি ভুল ভয়ঙ্কর ফলাফল বয়ে আনতে পারে

I) না ভেবে কাজ করা, এটা যে কোনও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে

II) সাহস না থাকা, এটা হারার আগেই মানুষকে হারিয়ে দেয়

III) মাথা ঠান্ডা না রেখে হাল্কা অপমানেও রেগে যাওয়া। এটা প্রতিপক্ষকে অনেক সুবিধা দেয়।

IV) সবার কাছ থেকে সম্মান পাবার আশা করা। এটা প্রয়োজনের সময়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়।

V) নিজের লোকদের জন্য অতিরিক্ত দু:শ্চিন্তা করা। এটা প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করতে বাধা দেয়।

সান-জু বলেছেন, “তোমার সৈন্যদের সাথে এমন আচরণ করো, যেন তারা তোমার সন্তান। তাহলে তারা তোমার পেছনে পেছনে সবচেয়ে বিপদ সঙ্কুল এলাকাতেও যাবে। তাদের দিকে এমন ভাবে তাকাও – যেমন ভাবে তুমি তোমার নিজের ছেলেদের দিকে তাকাও। তাহলে তারা হাসি মুখে তোমার সাথে মৃত্যুর মুখেও দাঁড়িয়ে থাকবে”।

আর্ট অব ওয়ার বইতে সান-জু সৈন্যদের সাথে বাবার মতই আচরণ করতে বলেছেন। বাবা যেমন পরম ভালোবাসায় সন্তানকে জড়িয়ে রাখেন, তেমনি প্রয়োজনে সন্তানের ভালোর জন্য চরম কঠোরতাও দেখাতে পারেন।

ওপরের বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি এই কথাগুলোও বলেছেন:

যদি তুমি তাদের প্রশ্রয় দাও, কিন্তু নিজের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারো; যদি দয়ালু হওয়ার পাশাপাশি নিজের নির্দেশগুলোর গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারো; যদি বিশৃঙ্খলা দূর করার ক্ষমতা তোমার না থাকে – তাহলে তোমার সৈন্যদের সাথে বখে যাওয়া সন্তানের কোনও পার্থক্য নেই। তারা সত্যিকার কোনও কাজেই আসবে না”।

তিনি আরও বলেছেন, “অধিনায়ক যদি দুর্বল আর কতৃত্ব শূণ্য হয়; যখন তার নির্দেশগুলো স্পষ্ট এবং শক্তিশালী হয় না; যখন অফিসার ও সৈন্যদের জন্য সুনির্দিষ্ট কাজ ঠিক করা থাকে না; এবং যখন সদস্যদের র‍্যাঙ্ক গুলো সুনির্দিষ্ট হয় না – তখন ফলাফল হয় বিশৃঙ্খলা”।

০২. ম্যানেজমেন্ট: সেরা লোকদের দলে নিতে হবে; কারণ দুর্বল ও হতাশ কর্মীরা তোমাকেও পঙ্গু করে দেবে
যখন সৈন্যরা তাদের অফিসারদের চেয়ে মানুষ হিসেবে শক্তিশালী হয়, তখন আদেশ অমান্য হওয়া শুরু হয়। আর যখন অফিসাররা সৈন্যদের তুলনায় অতিরিক্ত শক্তিমান চরিত্রের হয়, তখন সৈন্যরা অচল হয়ে পড়ে।

যখন কর্মকর্তারা কমান্ডার ইন চিফ এর নির্দেশ অমান্য করার সাহস রাখবে – তখন তারা নিজেরাই ইচ্ছেমত প্রতিপক্ষের সাথে লড়াইয়ে নামবে। কমান্ডার ইন চিফ এর নির্দেশের অপেক্ষা করবে না। আর এর ফলাফল হবে নিশ্চিত ধ্বংস।

০৩. কৌশল: শত্রু/প্রতিপক্ষকে ভালো মত চিনতে হবে
আর্ট অব ওয়ার – এ সান-জু বলেছেন, “যদি আমরা জানি আমাদের সৈন্যরা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এটা জানি না যে আমাদের শত্রু প্রস্তুত কি প্রস্তুত নয় – তাহলে আমরা পুরোপুরি জয়ের পথে নেই”।

শত্রুর সাথে সরাসরি মোকাবেলা করতে নামার আগে নিচের কয়েকটি বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে:

I) দুই দলের মধ্যে কোন দলনেতা সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ?

II) কোন পক্ষের লোকজন বেশি শৃঙ্খলা মেনে চলে?

III) কোন বাহিনী অস্ত্র ও লোকবলের দিক দিয়ে বেশি শক্তিশালী?

IV) কোন পক্ষের অফিসাররা বেশি উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত?

V) কোন বাহিনীটি ভালো কাজের পুরস্কার ও খারাপ কাজের শাস্তি বেশি দেয়?

– যে কোনও প্রতিপক্ষের সাথে লড়তে গেলে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা খুবই জরুরী। কোন জায়গায় আপনি প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে আছেন – সেটা বুঝে সেই অনুযায়ী আক্রমনের ছক সাজান। যেখানে শত্রুপক্ষ আপনার চেয়ে শক্তিশালী সেই জায়গাটি আপাতত এড়িয়ে যান, এবং আপনার নিজের বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের সেই অংশটি শক্তিশালী করার কাজে মন দিন।

সত্যিকার লাভ না থাকলে নিজের সৈন্যদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। রাগ বা জেদ এখানে মূল্যহীন। অপরিহার্য না হলে সরাসরি লড়াই করবেন না।

শুধু নিজের শক্তি ও আক্রমনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানলেই হবে না। শত্রুর শক্তি ও প্রস্তুতির সঠিক ধারণাও থাকতে হবে। নাহলে জয় সুনিশ্চিত হবে না।

০৪. কৌশল: সব ভালো যুদ্ধ কৌশলই ধোঁকা দেয়ার ওপর নির্ভর করে
আর্ট অব ওয়ার এর এই পর্যায়ে সান-জু’র মত হল, মাছের জন্য বড়শি পাতার মত শত্রুর সামনে টোপ ফেলুন। তাকে বিশ্বাস করান যে, আপনি এখন দুর্বল অবস্থায় আছেন – আপনাকে হারানো এখন সহজ হবে। প্রয়োজনে ভুয়া খবর শত্রুর কানে দিন। অভিনয় করুন। সে যদি টোপ গিলে আপনাকে আক্রমণ করতে আসে, আপনি তখন তাকে চমকে দিতে পারবেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুকে চমকে দেয়ার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। ভালোমত চমকে দিতে পারলেই অনেক সময়ে প্রতিপক্ষ হাল ছেড়ে দিয়ে পরাজয় মেনে নেয়। ইতিহাসে বহু যুদ্ধে এমন কৌশল কাজে দিয়েছে।

০৫. কৌশল: নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এবং এই কাজের গতি দ্রুত হতে হবে
সান-জু এর মতে, চালাক মানুষ কখনো সঠিক কাজ করতে দেরি করে না। অযথা সময় নষ্ট করা বোকার লক্ষণ।

দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে কখনও কোনও দেশের লাভ হয়নি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবায়ন করা হল বাজ পাখির ছোঁ মেরে শিকার ধরার মত। যা তার শিকারকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই শেষ করে দেয়।

একারণে, একজন ভালো যোদ্ধাকে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। একটি আঘাত করে পরের আঘাত কি হবে – তা নিয়ে বেশি চিন্তা করে সময় নষ্ট করলে দেখা যাবে শত্রু আঘাত করে বসেছে।

এই ব্যাপারে আর্ট অব ওয়ার এর আরও একটি শিক্ষা হল, যে বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে আগে উপস্থিত হবে, তারা এগিয়ে থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশ দেখে পরিকল্পনা সাজাতে পারবে – এবং অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকবে। অন্যদিকে যারা পরে আসবে – তারা পিছিয়ে থাকবে।

গতি হল যুদ্ধজয়ের একটি মৌলিক উপাদান। যে যত দ্রুত প্রস্তুতি নিতে পারবে – তার আক্রমণ তত বেশি প্রভাব ফেলবে।

০৬. কৌশল: শত্রুর দুর্বলতার সুযোগ নিতে হবে; তার শক্তির জায়গাগুলো এড়াতে হবে
সান-জু বলেন, “তোমার প্রতিপক্ষ যদি সহজে ক্ষেপে যায়, তবে তাকে বিরক্ত ও অপমান করে আরও রাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করো। দুর্বল হওয়ার ভাণ করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দাও। সেই জায়গায় আঘাত করো, যেখানে তার প্রস্তুতি নেই, সেখানেই দেখা দাও যেখানে সে তোমাকে আশা করছে না”।

দি আর্ট অব ওয়ার

তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা চাই তবে শত্রুকে খোলা মাঠে নিয়ে আসা সম্ভব। এমনকি যদিও সে উঁচু দূর্গে অথবা গভীর গর্তে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর জন্য আমাদের শুধু এমন জায়গায় আঘাত করতে হবে, যেখানে সে প্রতিরোধ করতে আসতে বাধ্য হবে”।

যুদ্ধের সময়ে সঠিক পথ হল, শত্রু যেখানে শক্তিশালী সেখানে বাদ দিয়ে, যেখানে সে দুর্বল সেখানে আঘাত করা।

প্রাচীন যুগে শত্রু বাহিনী শুধু শুধু একটি দেশের সম্পদ নষ্ট করতো না। এর প্রধান কারণ, এই অনিষ্ট ঠেকাতে যেন প্রতিপক্ষ তাদের শক্তিশালী দূর্গ থেকে বের হয়ে আসে।

০৭. কৌশল: শুধু করার জন্য কিছু করবেন না, আগে নিশ্চিত হোন এটা আপনার কাজে আসবে
শুধু মনের ইচ্ছা বা আবেগের বশে কিছু করবেন না। যে কোনও কিছু করার আগে তার লাভ এবং ক্ষতি ভালোমত বিচার করুন। যদি কোনও কাজ করে সত্যিকার কোনও লাভ না আসে – তবে সেই কাজ করবেন না। যুদ্ধক্ষেত্রে ফলাফল বিচার না করে কাজ করার মানে মানে পরাজয় এবং মৃত্যু।

০৮. কৌশল: আগে থেকে পরিকল্পনা করুন; কাজ আর পরিকল্পনা একসাথে করবেন না
যুদ্ধে বা কাজে নামার অনেক আগেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন। সময় নিয়ে সব দিক বিবেচনা করুন।

নিজের দলের লোকজনের অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তাদের সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেবেন না। এর পাশাপাশি নিজের শক্তির ওপরও নজর দিন, শারীরিক ও মানসিক এনার্জি বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আর সবচেয়ে বড় কথা নিজের সঙ্গীদের নিয়ে এমন পরিকল্পনা করুন, যা বাইরের লোকের পক্ষে আন্দাজ করা কঠিন।

আর্ট

সান-জু একজন সত্যিকার যুদ্ধকৌশলীকে তুলনা করেছেন সুয়াই-জান নামক এক প্রজাতির পাহাড়ি সাপের সাথে। এই সাপের মাথার দিকে আঘাত করলে সে তার লেজ দিয়ে আক্রমণ করে। লেজে আক্রমণ করলে সে মাথা দিয়ে আক্রমণ করবে। আর যদি তার শরীরের মাঝখানে আক্রমণ করা হয়, তবে সে মাথা ও লেজ – দু’টো দিয়ে একসাথে আক্রমণ করবে।

সান জু বলেন, “আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও দেশকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত নই, যতক্ষণনা আমরা সেই দেশের পুরো চেহারা সম্পর্কে জানতে পারছি। তার পাহাড় ও জঙ্গল, খানাখন্দ, নদী নালা – সবকিছু আমাদের জানতে হবে। নাহলে প্রতিপক্ষ তাদের পরিবেশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। এই কারণে সেই দেশ সম্পর্কে জানতে হবে। সেই দেশের কাউকে গাইড বানাতে হবে”

মোটকথা, একজন সত্যিকার কৌশলী নেতা কাজের অনেক আগেই পূর্ণ ভাবে পরিকল্পনা করে। সম্ভাব্য সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।

০৯. সতর্কতা: কেউ রাগিয়ে দিলেই তাকে আক্রমণ করা যাবে না
আর্ট অব ওয়ারের এই পর্যায়ে সান-জু বলেন, “কোনও বুদ্ধিমান নেতারই উচি‌ৎ হবে না তার নিজের রাগ বা গর্বের জন্য সৈন্যদের লড়াইয়ে নামানো। কোনও সত্যিকার জেনারেল শুধুমাত্র ক্ষোভের বশে যুদ্ধ করেন না”

১০. তথ্যের গুরুত্ব: প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সব তথ্য নিশ্চিত হয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে
একজন সেনা নায়ককে যুদ্ধ জয় করতে সবচেয়ে বেশি যা সাহায্য করে – তা হল শত্রু সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য। এমন তথ্য যা সাধারণ মানুষ কখনওই হাসিল করতে পারে না।

সান-জু বলেন, এই ধরনের তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে জাদু-টোনার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এসব অসম্ভব রকম গোপন তথ্য কোনও জাদুটোনার মাধ্যমে বা ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য শুধু শত্রুশিবিরে অবস্থান করা নিজের বিশ্বস্ত লোক দিয়েই পাওয়া সম্ভব। সোজা কথায়, গুপ্তচর বা স্পাই ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে।

অত্যন্ত বুদ্ধিমান, সাহসী ও চৌকস না হলে তাকে গুপ্তচর বানানো যাবে না। গুপ্তচরদের খুব সাবধানে বাছাই করতে হয়। সেইসাথে তাদের কাজ পরিচালওনাও করতে হয় খুব চৌকস ভাবে।

যিনি এই স্পাই বা গুপ্তচরদের পরিচালনার ও তাদের রিপোর্ট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন – তাঁকে প্রখর বুদ্ধিমান হতে হবে। তাদের রিপোর্টের সত্যতা খুব সূক্ষ্ণ ভাবে যাচাই করতে পারতে হবে। গুপ্তচরদের ঠিকমত ব্যবহার করতে পারা মানে শত্রুর একদম ভেতরের খবর আপনার কাছে থাকবে।

প্রতিপক্ষ সম্পর্কে যদি নির্ভুল তথ্য না থাকে, তবে একজন জেনারেল একটি বড় সৈন্যদলের বিপক্ষে ছোট সৈন্যদল পাঠানোর মত ভুল করতে পারেন। কোনও একটি অভিযানের জন্য সঠিক যোগ্য লোক বাছাই করতে হলে জেনারেলের কাছে সেই অভিযানের টার্গেট সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য থাকতেই হবে। না হলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

যত শক্তিশালী অস্ত্র আর সৈন্যদলই থাকুক, শত্রুর শক্তি ও দুর্বলতা, তাদের অভ্যাস ও লড়াইয়ের কৌশল সম্পর্কে যদি নির্ভুল ধারণা না থাকে – তবে অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তির একটি বাহিনীও ছোট একটি বাহিনীর কাছে পরাজিত হতে পারে। আবার এই সঠিক তথ্যই একটি ছোট ও অস্ত্রশস্ত্রে দুর্বল বাহিনীকে বিরাট শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়ী হতে সাহায্য করতে পারে।

১১. যেভাবে হারতে হয়: সৈন্যদের এমন কিছু বলা, যা তারা পারবে না; অযোগ্য লোকদের প্রমোশন দেয়া; টিমকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাটানো
আর্ট অব ওয়ার বইয়ের এই পর্যায়ে সান-জু বলেন, একজন নেতা তার বাহিনী/দলের জন্য ৩ ভাবে দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারেন:

I) অযৌক্তিক ভাবে বাহিনীকে (যুদ্ধে) সামনে এগুতে বা পেছাতে বলা। অসম্ভব জানার পরও জেদের বশে নিজের লোকদের কিছু করতে বাধ্য করার চেষ্টা করা। এটা একটি বাহিনী বা দলকে পঙ্গু করে দেয়।

II) রাজা যদি রাজ্যের অন্যান্য বিষয় পরিচালনার মত করে সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করতে চান। অনেক জায়গায় রাজার ইচ্ছাই শেষ কথা। কিন্তু দল পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা হয় না। এটা সৈন্যদের মধ্যে অস্থিরতা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

III) সঠিক যোগ্যতা বিবেচনা ছাড়া অফিসারদের নিয়োগ দেয়া। অবস্থা না বুঝেই অযোগ্য লোককে পদায়ন করা।এটা সাধারণ সৈন্যদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে।

একজন বুদ্ধিমান সেনানায়ক ব্যক্তিগত শক্তির বদলে দলগত শক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেন। তিনি সঠিক জায়গায় সঠিক লোককে বসিয়ে পুরো দলের শক্তিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করেন।

দি আর্ট অব ওয়ার – বুক রিভিউ

দলগত শক্তি একটি বাহিনীকে গোলাকার পাথরের মত আকার দেয়। ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল হলে বাহিনী চার কোণা কাঠের আকৃতি ধারণ করে। গোলাকার পাথর সমতলে শক্ত ভাবে অবস্থান নিয়ে থাকতে পারে, আবার ভূমি ঢালু হলে একসাথে গড়িয়ে যায়। অন্যদিকে চারকোণা কাঠের টুকরো সব অবস্থায়ই এক জায়গায় থেমে থাকে।

দল যেন প্রয়োজনের সময়ে একসাথে এক দিকে যেতে পারে – সেজন্য তাকে গোলাকার পাথরের মত করে গড়ে তোলা আবশ্যক।

১২. পরিচালনা: কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ
সকাল বেলা একজন সৈনিকের কাজ করার অবস্থা সবচেয়ে ভালো থাকে।দিনের মাঝামাঝি তা হাল্কা হতে শুরু করে। সন্ধ্যা হলে তার মন ক্যাম্পে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে।

সান-জু বলেন, “যদি দেখ তোমার সৈন্য অস্ত্রের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তবে বুঝবে সে ক্ষুধায় দুর্ববল হয়ে পড়েছে। যাদের পানি আনতে পাঠাবে, তারা যদি সেখানেই পান করতে শুরু করে – তবে পুরো বাহিনী তৃষ্ণায় কষ্ট পাবে”

আর্ট অব ওয়ার এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল:

# যদি ক্যাম্পের মধ্যে ঝামেলা হয়, তবে জেনারেলের কতৃত্ব দুর্বল।

# যদি দেখ ব্যানার ও পতাকা জায়গামত নেই, তবে বুঝবে আইন কানুন ঠিকমত মানা হচ্ছে না।

# যদি দেখ অফিসারা রেগে আছে, বুঝবে সৈন্যরা ক্লান্ত।

এইসব সমস্যা সমাধানে আর্ট অব ওয়ারের পরামর্শ হল: একজন দক্ষ জেনারেল এমন ভাবে তাঁর বাহিনীকে পরিচালনা করবেন – যেন তিনি মাত্র একজন মানুষকে পরিচালনা করছেন। এর মানে হল সবার প্রতি তাঁর সমান নজর থাকবে।

একজন সেনাপতিকে গম্ভীর, স‌ৎ ও সোজাসাপ্টা হতে হবে, যাতে করে শৃঙ্খলা বজায়ে থাকে।তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করবে ও ভালো বাসবে – কিন্তু তাঁর অফিসার ও সৈন্যদের মাঝে সব সময়ে তাঁর ব্যপারে একটা রহস্যের মধ্যে রাখতে হবে। তিনি কি ভাবছেন, এটা যেন কেউ পুরোপুরি জানতে না পারে। এর ফলে এই ক্ষেত্রে অফিসার ও সাধারণ সৈন্যরা একই অবস্থানে থাকবে।

মাঝে মাঝে তিনি তাঁর অধিনস্থদের হঠা‌ৎ পুরস্কৃত করে বা কোনও নির্দেশ দিয়ে চমকে দেবেন। তাহলেই তিনি একজন মানুষকে পরিচালনা করার মত করে পুরো বাহিনীকে পরিচালনা করতে পারবে।

১৩. বিজয়: কে জেতে? এবং কেন জেতে?
আর্ট অব ওয়ার বইয়ে মূলত সান-জু বর্ণনা করেছেন, কে যুদ্ধে জেতে এবং কেন জেতে। তিনি বিজয়ের জন্য ৫টি অপরিহার্য উপাদানের কথা লিখেছেন। এগুলোকে পুরো বইয়ের সারাংশও বলতে পারেন। চলুন সংক্ষেপে দেখে নেয়া যাক:

I) সে জিতবে, যে জানে কখন লড়তে হবে, আর কখন হবে না।

II) সে-ই বিজয়ী হবে, যে নিজের চেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল – দুই ধরনের প্রতিপক্ষকেই সামলাতে জানে।

III) সে জিতবে, যার পুরো বাহিনীর সবার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও অনুপ্রেরণা এক।

IV) সে জিতবে, যে নিজে প্রস্তুত হয় এবং শত্রুর অপ্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষা করে

V) সে-ই বিজয়ী হবে, যার সামরিক শক্তি আছে, এবং যে বাইরের অসামরিক লোকদের দ্বারা প্রভাবিত নয়।

সান-জু এর মতে, সবচেয়ে ভালো বিজয় হল শত্রুর দেশকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় দখল করতে পারা। অযথা সম্পদ ধ্বংস করায় কোনও লাভ নেই। তিনি আরও লিখেছেন, শত্রু বাহিনীকে ধ্বংস করার বদলে বন্দী করা বেশি লাভজনক।

একজন সত্যিকার দক্ষ সেনা নায়ক প্রতিপক্ষকে যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করতে পারেন; তিনি অবরোধ ছাড়াই শহর দখল করেন; দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম ছাড়াই তিনি রাজাকে সিংহাসন থেকে নামাতে পারেন।

একজন সত্যিকার ভালো যোদ্ধা পরাজয়কে নিজের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেন, কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কখনওই মুখোমুখী যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করার নিশ্চয়তা দিতে পারেন না।

এই জন্যেই আর্ট অব ওয়ার এর সেরা পরামর্শ হল: “(সঠিক কৌশল ব্যবহার করলে) জেতার শক্তি না থাকলেও মানুষের পক্ষে বিজয়ী হওয়া সম্ভব”

পরিশিষ্ট:
আর্ট অব ওয়ার এর শিক্ষাগুলো হাজার হাজার বছর ধরে একই রকম কার্যকর আছে।বহু আগেই এই বইয়ের গন্ডি যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়িয়ে, বড় বড় স্পোর্টস টিম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান – সহ সব ধরনের প্রতিযোগীতা মূলক ক্ষেত্রে একটি বেস্ট গাইডে পরিনত হয়েছে। শক্তি না থাকলেও যে শুধু কৌশল ও বুদ্ধি দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় – তা সান-জু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তাঁর দর্শনের কার্যকারিতা হাজার বছর ধরে প্রমাণিত হয়ে আসছে।

প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার, নিজের শক্তিকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার এই গাইডলাইন আপনারও উপকারে আসবে বলে আমরা আশা করি। জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়ার পথে এই বুক রিভিউটি যদি আপনাকে একটু সাহায্য করে – তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সফল।

সংগৃহীত: নেটে থেকে (লড়াকু)
তারিখ: অক্টোবর ১১, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ