বাংলাদেশের আর্থিক খাত তেমন একটা ঝুঁকিতে নেই বলে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এ মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি সাপেক্ষে সরকারি ঋণ, বিদেশি ঋণ, সুদসহ ঋণের অন্যান্য খরচ ও রিজার্ভের পরিস্থিতি—এই চার সূচকে বাংলাদেশ মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। গত শনিবার প্রকাশিত ইকোনমিস্ট-এর ‘হুইচ এমার্জিং মার্কেটস আর ইন মোস্ট পেরিল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের ৬৬টি উদীয়মান দেশের একটি ক্রমতালিকাও করা হয়, সেখানে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। অর্থাৎ এই অঞ্চলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য সবচেয়ে ভালো।
ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আর্থিক খাত সম্পর্কে যে মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন এ দেশের গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিবেদনে যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সরকারের সামর্থ্যের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রকৃত চিত্র নয়।
জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই হিসাব করা হয়েছে জিডিপির সাপেক্ষে। জিডিপি সরকারের আয় নয়, জনগণের আয়। আর সরকারের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য জিডিপির ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে রাজস্ব আয়ের ওপর। রাজস্ব আয় কমছে। তাতে সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কমছে। এ অবস্থায় ইকোনমিস্ট-এর পরিসংখ্যান সরকারের সামর্থ্যের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত করে না।
ভিন্নমত থাকলেও বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করেন, এর ফলে বিদেশ থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য বেশ ভালো, সেহেতু বিদেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।
ইকোনমিস্ট-এর তালিকা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। ১৮তম স্থানে ভারত, ৪৩তম পাকিস্তান ও ৬১তম স্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে তারা সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের ঋণই বিবেচনায় নিয়েছে। এ ছাড়া তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ বছর কী পরিমাণ বিদেশি বিল দেশগুলোকে পরিশোধ করতে হবে, তাও হিসাবে ধরা হয়েছে।। প্রতিটি সূচকে দেশগুলোর পয়েন্ট যোগ করার পর গড় করে তালিকাটি তৈরি করা হয়। এ তালিকায় শীর্ষ তিন অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে বতসোয়ানা, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ : মে ০৪, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,