বিগত কয়েক সপ্তাহ থেকে বিশেষ করে দূর্নীতির কারণে দেশের কিছু বিশ্ব-বিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতেই ঢাকা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে বুয়েটে আর সারা দেশের বিবেক নড়েচড়ে বসে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠতে থাকে ছাত্র রাজনীতি বন্দের। বর্তমান ধারার ছাত্র রাজনীতি ধংস্ব করে দিতে চলেছে স্বচ্ছ আদর্শ রাজনীতির চেতনা। পরের প্রজন্মের জন্য এক অনিরাপদ ভবিষৎ। বিষয়টি নিয়ে সরকার বেশ বিব্রত ও কথা কম বললেও প্রধান মন্ত্রী আজ কথা বললেন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের চলমান বিষয়ে।
শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে বুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খুনিকে খুনি হিসেবেই তাঁর সরকার দেখে।
আজ শনিবার (অক্টোবর ১২, ২০১৯) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিল-২০১৯–এর উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছাত্রদের ১০ দফা দাবিই তো মেনে নিয়েছেন বুয়েট উপাচার্য। তারপরেও তারা কেন আন্দোলন করবে, আন্দোলনের কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে। শিক্ষাঙ্গনে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে অন্যায়কারী যে কারও বিরুদ্ধেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের কথা স্পষ্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। কোনো অন্যায়–অবিচার আমরা সহ্য করি নাই, ভবিষ্যতেও করব না। অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিকে খুনি হিসেবেই তাঁর সরকার দেখে। তিনি বলেন, তিনি এক মিনিটও দেরি করেননি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, এ ধরনের অন্যায় কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু পিছিয়ে থাকিনি, কোনো দল করে সেটা দেখিনি। খুনিকে খুনি হিসেবে, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে, অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবেই দেখেছি।’
হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে আমি কারও আন্দোলন বা নির্দেশের অপেক্ষা করিনি। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি, ওদেরকে গ্রেপ্তার করো এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করো।’
এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাধারণ তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টির উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পুলিশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের সময় তারা (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) কেন বাধা দিয়েছিল আমি জানি না।’
পুলিশের আইজিপি এসে তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী) বিষয়টি জানানোর পর ছাত্রদের দাবি মতে, ভিডিও ফুটেজের কপি সরবরাহ করে সেটি সেখান থেকে তড়িঘড়ি নিয়ে গিয়ে আসামি চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনাও তিনি প্রদান করেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সেখানেও ফুটেজ আনতে পুলিশকে বাধা প্রদান না করলে আরও আগেই অপরাধী চিহ্নিত করা যেত, অনেকেই পালাতে পারত না।’
পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারাই এই বাধার সৃষ্টি করেছে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকক্ষণ তাদের (ফুটেজ সংগ্রহে আসা পুলিশ) আটকে রাখা হয়। আর এর মাধ্যমে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগই করে দেওয়া হয় কি না, সেটা আন্দোলনকারীরা বলতে পারবে।
ধারণা করা যায় সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র লীগ দ্বারা আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সরকারকে বড় ধরণের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে আর আবরারকে পিঠিয়ে হত্যা করা হয় ভারতের সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী কিছু কথা ফেস-বুকে লেখার কারণে।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশে যাতে সরকার তথা ভারত বিরোধী মনোভাব গড়ে না উঠে তাই হয় তো প্রধান মন্ত্রীর কঠোর উচ্চারণ। এর আগেও তিনি সংবাদ সন্মলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন সব দাবি মানার পরও বুয়েটে কিসের আন্দোলন!!
তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০১৯।
মূল সংবাদটি প্রথম আলো থেকে সংগ্রহিত।
রেটিং করুনঃ ,