এ পি জে কালাম – অনেক কথার বাড়ি – ১( সংগ্রহিত)
08/03
তরুণদের জীবনের দর্শন কী হওয়া উচিত, জানতে চাইলে আবদুল কালাম বলেন, ‘আমি যা বলব তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে তা উচ্চারণ করো। আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখব। ছোট লক্ষ্য থাকা অপরাধ। আমি অব্যাহতভাবে জ্ঞান আহরণ করে যাব। সমস্যা সমাধানের অধিনায়ক হব। সমস্যার সমাধান করব। এভাবেই সফল হব। এটাই হবে আমার লক্ষ্য।’
গত বুধবার ছিল আবদুল কালামের ৮৩তম জন্মদিন। সঞ্চালক আইনুন নিশাত এ জন্য তাঁকে জন্মদিনের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানান। আইনুন নিশাত বলেন, বৈমানিক হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত বৈমানিক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেননি আবদুল কালাম। তবে এটাকে শাপে বর ধরা উচিত। কারণ, তা হলে বিশ্ব এমন একজন সফল বিজ্ঞানীকে পেত না।
বক্তৃতার শুরুতে আবদুল কালাম তিনটি বিষয়ের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা জানান। তিনি বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিস্তৃত জলরাশি, তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্য আর বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী তাঁকে আকৃষ্ট করেছে। এর পাশাপাশি ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি আর সম্পদে দুই দেশের নৈকট্যের কথা বলেন তিনি।
এ পি জে আবদুল কালাম বলেন, বিপুল জনগোষ্ঠী মানে বিপুল স্বপ্ন। এর পাশাপাশি থাকে সমস্যাও। তবে সমস্যাকে পুঁজি করতে হবে। একে জয়ের মাঝেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের সোপান। আর সফলতার জন্য বড় স্বপ্ন দেখা, জ্ঞান আহরণ আর কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য।
07/28
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করতেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান পরমাণুবিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নাল আবেদিন আবদুল কালাম। তাঁদের মনে আলো জ্বালাতে চাইতেন তিনি। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছেন এপিজে আবদুল কালাম। জীবন তাঁকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। জীবন থেকে নেওয়া সেসব শিক্ষার কথা খুব সহজ করে বলতেন তিনি। কেবল বিজ্ঞান নয়, শিক্ষা, সাহিত্য, স্বাস্থ্য, বিচারব্যবস্থা জীবনের সবকিছু নিয়েই তিনি কথা বলতেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আর এসব টুকরো টুকরো কথা থেকেই পাওয়া যেত অনেক বড় বড় দর্শন। যা কাজে লাগাতে পারলে জীবনটা বদলানো সম্ভব।
নানা সময় বলা এপিজে আবদুল কালামের এমনই কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো এখানে।
নিজেকে একা মনে হলে আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পৃথিবীটা আমাদের বন্ধু। যারা কাজ করে ও স্বপ্ন দেখে প্রকৃতি তাঁদের সাহায্য করে।
যদি সূর্য হতে চাও তবে সূর্যের মতো নিজেকে পোড়াও।
মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।
জীবন এক কঠিন খেলা। সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারলেই এ খেলায় জেতা যায়।
তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।
কেউ যখন অসাধারণ হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করে তখন সে আসলে আর সবার মতোই সাধারণ হয়ে যায়।
নেতা সমস্যায় ভয় পাবেন না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাঁকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সম্মতি দেওয়া। আমি মনে করি পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষ অপরাধ করে। অপরাধের জন্য দায়ী সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। শাস্তি দিই ব্যবস্থার শিকার মানুষদের।
স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।
যারা পরিশ্রম করেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সাহায্য করেন।
স্বপ্নবাজরাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।
উন্নত ও নিরাপদ ভারত রেখে যেতে পারলেই পরের প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে।
মন থেকে যারা কাজ করে না তাঁদের জীবন ফাঁপা। সাফল্যের স্বাদ তাঁরা পায় না।
সত্যি হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যেতে হবে।
কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।
তরুণদের নতুন চিন্তা করতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তবেই তারুণ্যের জয় হবে।
উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
এখন বিজ্ঞান জানতে ইংরেজি জানা দরকার। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দুই দশকের মধ্যে আমাদের ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা শুরু হবে। আর তখন আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানে জাপানিদের মতো এগিয়ে যাব।
সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।
যদি আমরা স্বাধীন হতে না পারি কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করবে না।
গভীর দুঃখে বা প্রচণ্ড আনন্দে মানুষ কবিতা লেখে
বিজ্ঞান মানুষের জন্য উপহার। ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞান নয়।
স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়।
আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে। চেহারায় নয়। এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে।
07/28
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে, ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর জন্ম আবদুল কালামের। ছোট্ট শহরে এক মৎস্যজীবী পরিবারে খুব দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিলেও তাঁর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। আর এই স্বপ্নের অনেকটাই পূরণ করে দেখিয়েও গেছেন তিনি। খাবার জোটাতে ও পরিবারকে সহায়তা করতে মাত্র আট বছরেই খবরের কাগজ বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে।
আবদুল কালাম তাঁর বইয়ে লিখে গেছেন নিজের আকাশসম স্বপ্নের কথা। তাতে জানান, যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হন তিনি। পরবর্তী সময়ে রকেটবিজ্ঞানী হন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আবদুল কালাম হয়ে ওঠেন ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে দেশের ১১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় মুসলিম রাষ্ট্রপতি। দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ ছাড়াও ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবেও ভূষিত হন তিনি।
বিমান প্রকৌশলে পড়াশোনা করে ভারতের প্রথম মহাকাশযান তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন আবদুল কালাম। ওই মহাকাশযান দিয়েই ১৯৮০ সালে দেশটি প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনীউৎক্ষেপণ করে। ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে মূল পরীক্ষা চালানোর পর দীর্ঘ ২৪ বছরে ভারতের এটাই ছিল প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা। দেশটিকে পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত করার জন্য যিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, পরে সেই তিনিই নিজেকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রচারে যুক্ত করেন।
এ পি জে আবদুল কালাম একাধিকবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে (১৭ অক্টোবর) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন।
বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে আমার দুটি কারণে অনেক ভালো লাগে। এক. এ দেশের বিস্তৃত জলরাশি। আজও যখন দিল্লি থেকে উড়ে এলাম, তখন দেখছিলাম দেশজুড়ে কত নদী! আসলে তোমাদের নাম হওয়া উচিত “ওয়াটার পিপল”। তোমরা খুব সৌভাগ্যবান। আর দুই. এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। তোমরা নিজেরাও হয়তো জানো না তৈরি পোশাকশিল্পে তোমরা কতটা উন্নত।’
আবদুল কালামের আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার (১৯৯৯) তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে বইটি। তাঁর আরেক উল্লেখযোগ্য বই ইগনাইটেড মাইন্ডস।
[এএফপি, বিবিসিসহ একাধিক বার্তা সংস্থার সহায়তায় প্রতিবেদনটি তৈরি]
রেটিং করুনঃ ,