প্রাণের ঋতু শরৎ এর আগমন হলো আজ, বাংলা মাসের ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে আমাদের শরৎ কাল, সেই হিসাবে আজ ভাদ্র মাসের এক তারিখ, আর গতকাল ছিল ৩১ শে শ্রাবণ অর্থাৎ বর্ষা ঋতুর শেষ দিন। শরৎ এর প্রথম ভাগে বর্ষার অনেক বৈশিষ্ট থেকে যায়- কখনও আকাশ ঢেকে যাবে কালো মেঘে, অ-ঝরে বৃষ্টি ঝরতেই থাকবে, শ্রাবষের দিন মনে হতে পারে, এর পরে প্রকৃতির নিয়মে আকাশে মেঘের ঘনঘটা ধীরে ধীরে বিদায় নিয়ে সারা আকাশ হবে নীল আর নীল আকাশে ভাসবে এক খন্ড বা খন্ড খন্ড মেঘের দল।
এক দিনের আকাশকে দেখে শরৎ কালকে বিচার করা যায় না। ছয় ঋতুর তুতীয় ঋতু শরৎ কাল, ভাদ্র ও আশ্বিন বাংলা মাস মিলে শরৎ কাল বা শরৎ ঋতু। আজকের আকাশকে দেখলেও মনে হবে শ্রাবণ যেন প্রকৃতি ঘিরে রেখেছে।
হঠাৎ রোদ আর হঠাৎ বৃষ্টির এক অদ্ভুত খেলা চলবে মধ্য শরৎ পর্যন্ত অর্থাৎ ভাদ্রের দিন গুলিতে আর সময়টিতে থাকে এক অন্য ধরণের গরম যাকে আমরা বলি ভ্যাপসা গরম আর লোক গাঁথা কথার মত বলি – তাল বা কাঁঠাল পাকার গরম আর বলতেই হয় এই সময়টিতে বাজারে মিলে কাঠাল, তাল সহ আরও স্বুসাদু ফল, যদিও আমের মৌসুমটা বিদায়ের পথে।
সেই সাথে এই শরৎ কালে বৃক্ষ রাজি থাকে সব চেয়ে সবুজে ভরা যেন একটা ঘাঢ় সবুজে ছোঁয়া লেগে আছে গাছে গাছে, ভরা খাল-বিল নদী-নালা, বিল জুড়ে সাদা-লাল শাপলার মেলা আর পদ্ম ফুলে ফুলে। বিলের পাড়ে নদীরে পাড়ে অনেক গাছ এখনো ডুবে আছে পানিতে বা গাছের পাতাগুলি ছুঁয়ে আছে নদী বিলের পানিতে। শান্ত নদীতে ভেসে চলেছে একটি বা অনেকগুলি নৌকা এমন দৃশ্যে কে না প্রকৃতি পাগল হয় ! এসব দেখেই আমরা বুঝতে পারি কত বিচিত্র আমাদের এই ছয় ঋতুর দেশ।
শুধু শাপলা আর পদ্ম ফুলে ফুলের মেলা নয়, খালে বিলে নানান লতা, এর সাথে আছে বাগান বা পথের ধার জুড়ে কামিনী, মালতি, জবা, টগর, হাসনাহেনা আর আমাদের মনে শরৎ এর আগমনী বার্তা বেশি করে জানান দেয় কাশ ফুল আর শিউলি ফুল, কবিরা লিখেছের কত কবিতা গান এই শরৎ এর ফুল নিয়ে তা উল্ল্যেখ করে শেষ করা যাবে না।
শরৎ কালকে মন থেকে অন্তর থেকে উপভোগ করার মত এ বাংলায় আছেন বহু শরৎ প্রেমি, মরৎ-এর প্রেমের আমরাও দিশে হারা হয়ে রবি ঠাকুরের সুরে সরে বলি –
কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই,
কোন্ মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি। আহা, হাহা, হা।
কেয়া- পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে–
তাল দিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।
রাখাল ছেলের সঙ্গে ধেনু চরাব আজ বাজিয়ে বেণু,
মাখব গায়ে ফুলের রেণু চাঁপার বনে লুটি। আহা, হাহা, হা॥
শরৎ এর আগমনে বা শরৎ কে পেয়ে আমরা যেন রবি ঠাকুরের –
” কী করি আজ ভেবে না পাই,
পথ হারিয়ে কোন্ বনে যাই”
এমনটাই হয়ে যাই তবেই আমরা পাব শরৎ কে একেবারে প্রাণের মধ্য খানে। কোথাও হারিয়ে গিয়ে শান্তি প্রশান্তির মধ্য খানে।
ইদানিং কালে শরৎ ঋতু যেমনই হোক আমাদের মানস পটে আঁকা থাক শরৎ ঋতু সেই আমাদের চির চেনা প্রাণের জানা বিশাল নীল আকাশের মাঝে খন্ড খন্ড সাদা মেঘের ভেলা। প্রাণের শরৎ – শরৎ, শুভ হোক তোমার আগমন।
তারিখ: আগষ্ট ১৬, ২০১৬
রেটিং করুনঃ ,