আগের লেখার থেকে বর্তমানের লেখায় অনেক গভীরতা প্রয়োজন, বিশেষ করে পাঠক তৈরী করার জন্য, স্থায়ি পাঠক একজন লেখক ও কবির জন্য বড় সম্পদ, এই কথাটির অর্থ এই নয় যে আগের লেখক ও কবির লেখার মধ্যে গভীরতা ছিল না, বরং বলা যায় তাদের লেখার মধ্যে আরও বেশি গভীরতা ছিল।
পূর্বের লেখক ও কবির অনেক পান্ডুলিপি অপ্রকাশিত অবস্থায় থেকে গেছে হয় তো তাদের লেখাগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেন নি, কিন্তু বর্তমানে অন লাইন বা ইন্টারনেটের সুবাদে একটি লেখা খুব সহজে পাঠকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে তবে সাময়িক বা স্থায়ি পাঠক মহল তৈরী করা অনেক কঠিন আর শংকাটি আরও বেড়ে যায় যখন লেখকের সংখ্যা বাড়ছে, দিনে দিনে সেই সাথে জানা থাকছে না কোন গতিতে বা অনুপাতে পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে !
একটি লেখায় পাঠক আকর্ষণের বিষয়টি বড় বিষয়, তা ভাবের বা জ্ঞানের গভীরতা, ছন্দ সহ আবেগ কিম্বা সত্য আবেগের প্রকাশ যাই হোক না কেন ! এমনিতেই বর্তমানের পাঠক বিশাল জ্ঞানের সমুদ্র সাঁতার কাটেন মূহুর্তে লেখার নানান সূত্র বিস্তৃারিত বর্ণনা পেয়ে যান অনেক মধ্যমে। এ কথায় বলা যায় বর্তমানের পাঠক অনেক অভিজ্ঞ আর পাঠকের চাহিদাও অনেক, লেখায় নানান বৈচিত্রতা খুঁজেন যা জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে সেই সাথে মানবিক সুকুমার বৃত্তিকে।
আজকাল পাঠক সময় ব্যয় করে নাম না জানা বা পরিচিত নয় এমন লেখকের লেখা পড়া সময় কই ! পাঠকের প্রয়োজন জ্ঞানগর্ভ লেখা এবং লেখার মধ্যে প্রিয়তা খুঁজে পাওয়া যা মন ও মেধা বিকাশে সহায়তা করে।
কাগজের গন্ডি ছেড়ে বর্তমানের লেখক ও কবিগন যত তাদের লেখা অন লাইন বা ইন্টারনেটের সুবাদে বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ততই তারা নানান কাঠিন্যের আবহাওয়ায় মিছে যাচ্ছেন, নিজের মধ্যে যতই লেখকত্ব বা কবিত্ব নিজে আবিষ্কার করে ফেলছেন কিন্তু তিনি কতটা লেখক ও কবি তা নির্ধারণ বহু সময়ের পথ।
তবে সখের বশে আমরা যারা খেলা-ধূলা করি, গল্প আড্ডা দেই কোন লাভ-লোকসান হিসাব না করে ঠিক তেমনি আমাদের প্রতি নিয়ত লিখে যাওয়া উচিত নিজে একজন ভালো পাঠক হয়ে। বর্তমান প্রযুক্তির এই সুযোগটি যদি কাজে না লাগাতে পারি তবে হবে আমাদের পিছনের দিকে হাঁটা।
বর্তমান প্রযুক্তির অর্থই হচ্ছে কাল কী আসছে আমাদের সামনে তা অজানা, জানার জন্য বর্তমান প্রযুক্তির উপর ভর করে চলা, আর যাদের লেখায় হাত আছে তাদের লিখে যাওয়া আর লিখতে পারলেই নিজেকে লেখক বা কবি হিসাবে পরিচিত না করা, এটি সময়ের বিষয় ! কে কাকে কখন কোন মর্যদায় আসন দেয় !
বর্তমান সময়ে লেখার প্রতিবন্ধকতাগুলিকে চিহ্নিত করে তা জয় করে নিত্য আমাদের লেখার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখা, লেখার পাশাপাশি একটি জরিপের বিষয় আছে দিনের শেষে, মাসের শেষে, কিম্বা বছরের শেষে কত জন পাঠক আছেন বিভিন্ন কৌশলে এই সংখ্যাগুলিও আমাদের জানা সম্ভব। কাগজের লেখায় বা ছাপায় কিছু প্রকাশ করতে চাইলে বর্তমানের ধারায় নিজেকেই প্রকাশাক হওয়া উচিত ! নিজেকেই ছাপানো বইয়ের বিক্রয় কর্মী হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ লেখক, পাঠক, সম্পাদক, প্রকাশক ও নিজের লেখার নিজেই বিক্রয়কর্মী হওয়া উচিত যেহেতু বিষয়টি এখন বেশ জটিল তাই পাঠকের সংখ্য বৃদ্ধি ও নিজে লেখক ও কবি হওয়া আগের যে কোন অবস্থার চেয়ে অনেক কঠিন।
(সত্যিকারভাবে পৃথিবীর সব লেখা, যত ভালোই হোক, একজন ব্যক্তির পক্ষে পড়া সম্ভব নয়। তাই তাকে নির্বাচন করে পড়তে হয়। তাই বলি, ব্লগে যারা আমার মতো হাতুরে লেখকের পোস্ট পড়ে তাতে মন্তব্য দেন, তারা আমার বড় উপকার করেন। তাদের কতটুকু উপকার হয়, সেটি পরের কথা।
২. আমি যখন পড়ি- কখনোই মনে করি না যে কবি বা লেখক কী বলতে চেয়েছেন তা আমি জানি।
আমি সাধারণ পাঠক। আমি কবিতাকে নিজের মতো পাঠ করবো। এবং নিজস্ব ব্যাখ্যান প্রকাশ করবো।
বাংলা সাহিত্যের বিরল প্রতিভা সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙ্গালীর গ্রন্থ-বিমুখতা নিয়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন। বই পাঠের সুফল সম্পর্কেও অবহিত করেছেন পাঠকদের। আজ প্রায় এক শতাব্দী পরেও মুজতবা আলীর সেই হতাশার সুরই যেন প্রতিধ্বনিত হয় বর্তমান লেখক-প্রকাশকদের কণ্ঠে। লেখক ও প্রকাশক বলছেন – পাঠক নেই। আর পাঠকরা বলছেন – ভালো লেখক নেই বাংলাদেশে, তার উপর বইয়ের দাম সাধ্যের সীমানার অনেক বাইরে। লেখক-প্রকাশক এবং পাঠকের এই বিপরীতমুখী অবস্থান সত্ত্বেও এই বাংলাদেশেই বই লিখে কোটিপতি হয়েছেন এমন লেখকের উদাহরণও রয়েছে। তাহলে `পাঠক কমে যাচ্ছে’ বলে কেন এই অভিযোগ? বইয়ের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা নিয়মিত বইয়ের পাঠক তাদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। এ অভিযোগ প্রায় সব পাঠকেরই। তবে যাদের বইয়ের নেশা, তাদের অন্য বিনোদনে বাঁধা যায় না।
৩. পাঠক হচ্ছে লেখকের বড় অনুপ্রেরণা ! একজন ভাল লেখক মানে তিনি খুব ভাল পাঠক ও বটে! সে পাঠ শুধু পুঁথিগত নয় বরং পারিপার্শ্বিক !
লিখতে থাকুন, পাঠক হব!)
তারিখঃ ৪ অক্টোবর ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,