গত বছর অনেকের মা ছিলেন এ বছর মা দিবসে অনেকের মা নেই। এভাবে অনেকেরই মা ছিল কিন্তু আজ মা নেই। মা একটি নিরাপদ আশ্রয়। নিরাপদ জায়গা। বিশেষ করে শিশুদের পাশাপাশি বড়দের জন্যও। মাকে নিয়ে হাজার পৃষ্ঠার লেখা লিখে মায়ের গুরুত্ব মাপা যাবে না। অতীতে যায় নি, আজও যাবে না, আগামীতেও না।
শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র আছে, শরীরে রক্ত চলাচল মাপার যন্ত্র আছে, ব্যাথা পরিমাপের যন্ত্র আছে, কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ের উৎকন্ঠা, অনুভূতি, মমতা মাপার কোন যন্ত্র নেই সেই সাথে মায়ের গুরুত্ব মাপারও কোন যন্ত্র নেই। শিশুর মুখে না ফুটা কথা, শিশুর ভাষা বুঝার কোন যন্ত্র আজো আবিষ্কার হয় নি কিন্তু মা শিশুর সব না বলা বা অ-উচ্চারিত সব কথাই সঠিক ভাবে বুঝে থাকেন।
আজ যাদের মা আছেন। তাঁরা একটা আশ্রয়ে আছেন। একটা নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন। শিশুকে, সন্তানকে কঠোর এক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন্। নানান সব সজ্জিত অস্ত্র দিয়ে। অথবা, সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া ও প্রাথর্না দিয়ে।
আজ আমাদের অনেক মা ভালো নেই তা আমাদের কারণেই, অনেক মা যেন আমাদের বাড়িতেই অতিথি। এর চেয়েও অনেক মা আরো খারাপ অবস্থানে আছেন, মাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে বা রেখেছি সেবিকার তত্বাবধানে এ সব কী মায়ের স্থান !
নিজের মা বলে হয়তো কোন কথা নেই। সব মা, আমাদের মা। কেন !! রাস্তা পার হওয়ার সময় আমরা কি কোন মাকে রাস্তা পার করিয়ে দেই নি !! মা অভিন্ন একটি পরিচিতি। একটি এক অর্থ।
এতদিন যার শুধু একটাই পরিচিতি ছিল একজন দম্পত্তির মেয়ে এক পাল ভা্য়ের বোন, একজনের স্ত্রী। তিনি আজ মা হতে যাচ্ছেন। নূতন একটি পরিচিতি, পরিচয়। মা।
নয় মাস, আরো অধিক কাল, মন দুরু দুরু করেছে। উৎকন্ঠা। নূতন শিহরণ। নূতন অনুভুতি। চেহারায় পরিবর্তন। নূতন লাবন্য। শরীরে পরিবর্তন। সাবধানে চলাচল।
আজ সব কিছুর অবসান, শরীরের পনেরো বিশটা হাড় ভেঙে ফেলার মত ব্যথা শরীরে ধারণ। কাঠ কাটার বড় বড় দাঁতওয়ালা করাত শরীরে চালানো্। তিনিই তো হবেন আজ শিশু মা। আমাদের মা।
মায়ের সঠিক স্বরূপটি কেমন ! তা বর্ণনা দিতে গিয়ে রবি ঠাকুর লিখেছেন ” একেবারেই প্রেমের যোগ্য নহে এমন জীব কোথায়! যত বড়োই পাপী অসাধু কুশ্রী সে হউক-না কেন, তাহার মা তো তাহাকে ভালোবাসে। ”
আমি, আপনি, বা অনেকেই আজ আমরা বড়ো পাপী, অসাধু কুশ্রী কিন্তু আপনার মা যে সকল সময় আপনাকে আমাকে ভালোবাসেন, স্নেহ করেন কথাটি কিন্তু অস্বীকার করতে পারি না, কিন্তু তারপরেও মনে সংসয় কাজ করে, প্রশ্ন জাগে মাকে কি ভালো রেখেছি ! সাধ্য মত যেমনটি নিজ স্ত্রী ও সন্তানদের মর্যদা ভালোবাসা দিয়ে থাকি, আজ অনেকেই আমরা নিজে নিজে চলার স্বক্ষমতা অর্জন করেছি এখন তো মা আমাদের কাছে সেই শিশুটির মত ( যেমন একদিন আমরা নিজেরাই ছিলাম ) তিনি তো আজ কিছুই বলেন না মুখ ফুটে, কি তাঁর প্রয়োজন ! তিনি তো আমাদের সেই শিশুকালের না বলা কথা, ভাষা বুঝেছিলেন আমরা কি তাঁর না বলা কথা আজ বুঝতে পারি ! তিনি তো নিঃস্বার্থ মনে সন্তানের জন্য দোয়া বা প্রার্থনা করেই চলেছেন !
আমাদের আজ যাদের মা নেই সেই মায়ের কবরটি কি ফুল ঘাস দিয়ে কি সাজিয়ে রাখি ! প্রার্থনার আয়োজন কি করি !
তারিখ ০৪/২০/১৫
রেটিং করুনঃ ,