প্রিয় বর আমার বর,
আমার ভালোবাসা নিও, সাথে এক টিফিনক্যারি করে বিভিন্ন ধরণের ভালোবাসা পাঠালাম বিয়ের পরে যেগুলি তুমি চাইতে। আমাদের বিয়ে হল, বিয়েটা ছিল অভিভাবকদের পছন্দ অনুযায়ী, অনেক ঘটা করে, অনেক অনুষ্টান করে আমাদের বিয়ের মধ্যে আমাদের সুখি দাম্পত জীবনের সূচনা হলো। কলাবাগেনের খালা মনির বাসা থেকে আমার জায়গা হলো সেই কলাবাগানে তবে তোমাদের বাড়িতে, তোমাকে ঠান্ডা মাথায় কিছু কথা বুঝানোর জন্য তোমাকে এ চিঠি লেখা।
আমার লেখাপড়া শেষ হলো না, তোমার বদলী হলো নাটরে, আমাকে এখন নাটরে নিয়ে যেতে পারবে না কথাটা সবার সামনে ষ্পষ্ট করে বলে দিয়েছো, কিন্তু আমার পক্ষ্যে এখন আমার বাবার বাড়ি দিনাজপুর শহরে গিয়ে থাকা হবে না বা কলাবাগেনের খালা মনির বাসাও থাকা হবে না, অবস্থাটা যেমনই হোক তোমার বাবা-মা আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন, সীমা ও শামীম বড় ভাবী হিসাবে অনেক সন্মন করে।
সমস্যাগুলি আমি নিজে তৈরী করেছি, তাই তোমার সাথে শেয়ার করছি। খালা মনির বাসায় অনেক রাত জেগে পড়ার অভ্যাস ছিল যে অভ্যাসটির পরিবর্তন হচ্ছে না, এখন মনে হচ্ছে এটা আমার তৈরী করা একটি সমস্যা, খালা মনির বাসায় থাকার সময় ষেখানে থাকা অবস্থায় নিজে কখনো নিজের নাস্তা তৈরী করে খাই নি। বাবা খুব সকালে নাস্তা করেন আর বাবা আশা করেন যে আমি যেন বাবাকে নিজ হাতে নাস্তা তৈরি করে দেই, টেবিলে দেই। এ সব কিছুই করা যায় তবে তোমার বাসায় আসন, মান পেতে আমার লেখা পড়া করা হবে না। এখনকার লেখা পড়ার জন্য একটি ভিন্ন পরিবেশ দরকার, গ্রুপ স্টাডি, লাইব্রেরী, ইন্টারনেট বন্ধু-বান্ধবী এই সব। অতি ঘর-সংসারী হয়ে ভালো রেজাল্টের জন্য আমার যে লেখা-পড়া হবে না এটাই আমার সুষ্পষ্ট কথা।
তরকারীতে আমার কম ঝাল খাওয়ার অভ্যাস এ সবের জন্য আলাদা রান্না হোক এ সব কথা আমি বলি না, দিনাজপুর থেকে সোহেল এসে আমাদের এখান থেকে কোচিং করুক এ সব কথাও আমি বলি না।
” একটু সহ্য কর, একটু ধৈর্য ধর আর কয়েকটা মাস পরেই তো আমি ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকায় চলে আসছি, তোমার জন্য যদি প্রয়োজন পরে আর দশজনের মত আমারও আলাদা বাসা নিব, সবই হবে তোমার পছন্দ অনুযায়ী ” – এ সব কথা বলে টাইম কিল করার চেষ্টা করো না। লেখাপড়াটা আমারই খুব বেশি প্রয়োজন আর সে লেখাপড়া থেকে কেন আমি বিরত থাকতে চাচ্ছি তা অন্তত তোমার বুঝার প্রয়োজন।
অবন্থার পেক্ষাপটে মানুষের সব কথা যে রাখা যায় না, সব মানুষ যে কথা রাখতে পারে না, নানান যুক্তি দিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার রাখেন এখন এসব বুঝতে আমার আর অসুবিধা হচ্ছে না, সংক্ষেপে বলতে গেলে সব দোষ-ক্রুটি আমার। আমাদের মত মেয়েদের জীবনটা যে কোন রকমের জোড়াতালি দিয়ে চলা তা এখন আমার কাছে বেশ ষ্পষ্ট আর যা বিয়ের আগে কোন মেয়ে তা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
আমি জানি আমার বিষয়ে তোমার কোন সুষ্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেই, তোমার সিদ্ধান্ত জোড়াতালি দিয়ে, বুঝিয়ে কথা বলা, মানিয়ে চলার অনুরোধ, তাই কখনো কখনো ভাবি আমার সিদ্ধান্ত আমারই নেওয়া উচিত।
থাক. এ সব ভেবে তোমাকে অস্থির হতে হবে না, আমি লেখা-পড়াও করতে পারব, অতি ঘর-সংসারীও হতে পারব।
ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো, বেশি রাতে জেগো না, আর আমি তো তোমার সেই রবী ঠাকুরের শেষের কবিতার সেই কয়েকটা লাইন-
“যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।”
ইতি তোমার
সোনালী বউ
==================
প্রথম আলো ব্লগ প্রিয় চিঠি আয়োজন উপলক্ষে লেখা চিঠি
তারিখ জুন ১৩, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,