আগের গল্পের কিছুটা অংশ আবার বললাম তোমাদের বুঝতে সুবিধা হবে।
একটি পানি জাহাজ চলেছে সমুদ্রে। হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়। জাহাজে প্রায় দুই মতের মত যাত্রী ছিল। অনেক ধাক্কা সামলিয়ে জাহাজটা যখন একটা দ্বীপের কাছে ঠিক তখনই জাহাজটা পানির নিচে ডুবে গেল।
কিছু তরুণ তরুণী, কিছু শিশু, কিছু বাবা মা এমন প্রায় একশত জন দ্বীপটাতে উঠলো। কিন্তু সবাই একে বারে খালি হাতে। অনেকটা টারজনের মত জীবন শুরু হল। ডাবের পানি পান, আর তাজা তাজা ফল ছাড়া ওদের আর কিছুই খাওয়া হত না। গাছের পাতা, ছাল আর পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক আর রাতে ঘুমাতো গাছে। টারজনের যেমন গাছে ঘর ছিল, ঠিক তেমন। এর মধ্যেই দুইটি বছর কেটে গেল। মিলে মিশে সবাই থাকত। সুখেই বসবাস করত।
এবার শোন পরের অংশ। “ক” দ্বীপের রাজা দ্বীপটার সবার সাথে ভালো ভাবেই বসবাস করে আসছিল। রাজা অনুমান করল যে, “ক” দ্বীপে কোন একটা অঘটন ঘটেছে, বিশৃঙ্খলার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দ্বীপের অনেকেই রাজার কাছে এসে নানান ধরণের অকল্যানের কথা বলেছে। রাজা বেশ চিন্তিত হলেন।
দ্বীপের সবাইকে একদিন বিকালে ডাকলেন। সবাই আসলেন। রাজার সামনে সবাই সবাই বসলেন। খুব ভালো করে রাজা সবাইকে দেখলেন। হঠাৎ রাজা কি যেন লক্ষ্য করলেন। ভাবলেন অনেকক্ষণ, সবাই চিন্তিত হলেন। রাজা কী বলবেন!! বা না বলবেন !!
রাজা ধীরে ধীরে বললেন ” তোমরা যারা এই দ্বীপে আছো ১০০ জন তাদের মধ্যে দুই জনের মধ্যে একটা মিল আছে যা অন্য কারো মধ্যে নেই, সাত দিন সময় দিলাম এমার কাছে ঐ দুজন আসবে। বতে আমি জানি ঐ দুজন কারা!! আর যদি কেউ না আসে তবে আমি ঐ দুজনকে আমি ধরে “খ” পাঠিয়ে দিব।
সবাই ভীতু হয়ে পড়লো। সবাই সবার মধ্যে মির খুঁজতে থাকলো, আগেই বলা আছে যে, দ্বীপে কোন আয়না পর্যন্ত নেই।
একজন ছেলে ও একজন মেয়ে রাজার সামনে এসে বলল আমারা বেশ লম্বা, রাজা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা লম্বা কিন্তু উচ্চতায় এক সমান নও, তাছাড়া তোমরা একজন ছেলে ও একজন মেয়ে। তোমরা যাও তোমাদের মধ্যে কোন মিল নাই। এরপর একজন ছেলে ও একজন মেয়ে রাজার সামনে এসে বলল আমারা বেশ ফর্সা, রাজা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমরা ফর্সা হলেও ছেলেদের আর মেয়েদের গায়ের রঙ এক রকম হয় না তাছাড়া তোমরা একজন ছেলে ও একজন মেয়ে। তোমরা যাও তোমাদের মধ্যে কোন মিল নাই। এর পর দুজন মোটা ছেলে আসল। রাজা না করে দিল, বলল কোন মিল নেই।
দ্বীপের সকলেই একটা উৎকন্ঠায় পড়ে গেল। অনেকেই রাজার কাছে গেল, কিন্তু রাজা কারো মধ্যে কোন মিল খুঁজে পেল না। কাকে রাজা দোষি বলবেন এই চিন্তায় সবাই অস্থির।
দ্বীপে একটা ছেলে আছে নাম তিমপি বয়স বারোর মত হবে আর একজন আছে নাম থিমপি সম বয়সি হবে।
এদদিন তিমপি থিমপিকে বলল ” কি ব্যাপার তোমার চোখ এতো লাল কেন!!” থিমপি বলল ” তাই নাকি !! ”
থিমপি বলল – তোমার চোখতো লাল
– তাই নাকি !! ”
– সত্য বলছি লাল
– সত্য লাল
– দু জনরই চোখ লাল !!
– তাই তো দেখছি এখন দু জনরই চোখ লাল
– তুই সত্য বলছো্ !!
– সত্য বলছি
– তা হলে আমাদের মনে হচ্ছে রাজা আমাদেরকেই খুঁজছে।
– আমারো তাই মনে হচ্ছে।
– চল আমরা দুজনই রাজার কাছে ডাই
তিমপি ও থিমপি দুজনই পরের দিন সকালে রাজার কাছে গেল।
দেখেই রাজা বলল – তোমরা কেন এসেছো আমি জানি, আর আমি তোমাদেরকেই খুঁজছি। তোমাদের দুজনরেই চোখ লাল, যা এ দ্বীপে আর কারো নেই।
রাজা ওদের ঘরে নিয়ে গেল। সব জেনে নিল। অনেক প্রশ্ন করল। তিমপি ও থিমপি দুজনই সব অবাক হল। ওরা দুই ভাই। ঝড়ের রাতে ওরা ভাসতে ভাসেতে দ্বীপে উঠেছে। তারপর তাদের আর কিছু মনে নেই। এখন বুঝল ওরা ওদের বাবাকে ঝড়ের রাতে। রাজাকে বলেছে ওর বাবা ছিল চোর। জাহাজে ওদেরকে উঠিয়েছিল দামি গয়না চুরি করার জন্য। আগেও চুরি করার সময় ওরা ওদের বাবাকে সাহায্য করেছিল।
দ্বীপে কোন আলো ছিল না এবং রাজা নিশ্চিত হল যে, তিমপি ও থিমপি দুজনই রাতের অন্ধকারে গাছে ফল চুরি করত, খেয়ে না খেয়ে ফলগুলি ফেলে দিত, নষ্ট করত।
রাজা তিমপি ও থিমপি ভাবলো ওদেরকে “খ” দ্বীপে পাঠাবে। এবং হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো, রাজা ওদেরকে অনেক বুঝালো আর বলল ওদেরকে “খ” পে পাঠাবে না। ওদেরকে কড়া নজরে রেখে সংশোধন করবে।
কিন্তু তিমপি ও থিমপিকে নিয়ে রাজার অনেক ভয়।
শিশুরা তোমরা কি বুঝতে পেরেছে “ক” দ্বীপের রাজার কেন এত ভয় তিমপি ও থিমপিকে নিয়ে!!!
তা হলে শোন-
আমরা প্রায়ই বলি ব্যবহারে বংশের পরিচয়, চোরে ছেলে চোর হয়,
বড় হলে এ বিষয়ে জেনে নিও। বংশে রক্তের ধারা রক্ত থাকে। খুব শক্ত কথা। বড় হলে বুঝতে পারবে।
তাছাড়া আমাদের সব সময় ভালো থাকতে হয়, নিজের উন্নত পরিচয় দিতে হয়। ধর আমরা যখন প্রাইমারি স্কুল থেকে অন্য হাই স্কুল ভর্তি হলাম কিছু একটু দুষ্টামি করলে আমাদের শিক্ষক বলত : এই ছেলে দাঁড়াও তুমি কোন স্কুল থেকে পাশ করে এসেছো।
আবার যখন কলেজে ভর্তি হলাম কিছু একটু দুষ্টামি করলে আমাদের শিক্ষক বলত : এই ছেলে দাঁড়াও তুমি কোন স্কুল থেকে পাশ করে এসেছো।
আবার যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম কিছু একটু অন্য রকম কথা বললে আমাদের শিক্ষক বলত : এই ছেলে দাঁড়াও তুমি কোন কলেজ থেকে পাশ করে এসেছো।
সব সময় ভালো থাকবে। আর মানুষকে ভালো জানবে। বড়দের শ্রদ্ধা করবে।
তারিখ: আগষ্ট ১১, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,