মুঘল সম্রাট শাহ-জাহান – মমতাজ দম্পত্তির শাহজাদীগন – পর্ব – এক ( গৌহারা বেগম )
সম্রাট জহির-উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর কিম্বা সম্রাট জাহাংগীরের পুত্র সম্রাট সাহাব-উদ্দিন মোহাম্মদ শাহ-জাহান এ নাম গুলি সবই মুঘোল সম্রাজ্যের স্তম্ভ এ ছাড়াও প্রায় ২৮ জন মুঘোল মুকুট ধারী সম্রাট মুঘল সম্রাজের মসনদে আসিন ছিলেন ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত। নানান পটভূমিকায়, ক্ষমতার অন্তরালে সম্রাটদের পাশাপাশি অনেক মুঘোল সম্রাজ্ঞী ও শাহজাদীগন ক্ষমতার কল-কাঠি নেড়েছেন যেমন রাজপুত কুমারী যোঁধা বাঈ অরফে মরিয়ম উজ-জামানী, সম্রাজ্ঞী নূর জাহান আর মমতাজ মহলের পাশাপাশি সম্রাট শাহ জাহান কন্যা শাহজাদী জাহানারা বেগম ইতিহাসে পরিচিত মুখ অথবা মুঘোল সম্রাজে প্রভাবশালী নারী হিসাবে খ্যতি অর্জন করেছিলেন।
ঠিক তেমনি ভাবে মুঘল সম্রাজের আর এক রাজ কুমারী বা শাহজাদী গৌহারা বেগম মুঘোল সম্রাজে তেমন পরিচিত নাম ছিলেন না , ইতিহাসের পাতা খুঁজে তেমন কোন তথ্য খুঁজে বের করা বেশ কষ্ট সাধ্য বিষয়। তবে জীবনের ৭৫টি বছর ধরে মুঘোল সম্রাজের মধ্যে বসবাস করে নিঃরব ভূমিকায় থেকে তিনি অনেক কিছু লক্ষ্য করে গেছেন। জন্ম লগ্ন থেকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ ছিলেন ১৬৩১ সালে ১৬ই জুন ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যে বোরহান পুরে যুদ্ধের তাঁবুতে সম্রাট শাহ জাহানের রাজকীয় চিকিৎসকের তত্বাবধায়নে সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহল তাঁর ১৪ তম কণ্যা সন্তানটি ( রাজকুমারী গৌহারার) জন্মদানের অল্প সময়ের মধ্যে সম্রাজ্ঞী পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন অর্থাৎ রাজকুমারী গৌহারা পৃথীবির আলো বাতাসের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে সম্রাজ্ঞী মমতাজ পৃথীবির মায়া ছেড়ে চলে যান।
আমার ধারণায় তাজ মহল গড়ে উঠার অন্তরালে ছিলেন রাজকুমারী গৌহারা আর তার জন্মদানের অল্প সময়ের মধ্যে সম্রাজ্ঞী মমতাজ থিবী থেকে চির বিদায় নেন , মুঘল সম্রাট শাহ জাহান – যার অর্থ হল সারা দুনিয়ার মালিক তাঁর প্রিয়মতা স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলকে চির তরে হারানোর মধ্য দিয়ে তাঁর সীমাহীন বেদনাকে স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে প্রাকাশ করেছেন যা জগৎ বিখ্যাত প্রেমিক যুগলের সমাধী তাজ-মহল।
মাতৃহীনা এই রাজকুমারী আগ্রা কেল্লায় অবস্থা নিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন তাঁর মায়ের সমাধীর উপর কী ভাবে বিশ্বের সেরা সমাধী সৌধ তাজ-মহল নির্মিত হচ্ছিল ! বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ প্রকৌশলি, অমূল্য পাথরের বিদেশী বণিকদের আনাগোনা লক্ষ্য করেছিলেন সেই সাথে তিনি শুধু লক্ষ্য করে গেছেন পিতার রাজ সিংহাসন দখলের চেষ্টায় রাজ-মহলের ভিতরে নানান চক্রান্ত আর নানান চক্রান্তের সাাথে নানান ভাবে নিজ পরিবারের অনেকেই জড়িত ছিলেন কখনও পিতা শাহ-জাহান ও ভ্রাতা আরংগোজেবের মধ্যে, এ ছাড়াও অন্যান্য ভ্রাতারা কখনও দারা সুকো, মুরাদ বাকশ, শাহ সুজা, সেই সাথে পিতার পক্ষ্য নেওয়া নিজ বড় ভগ্নী শাহজাদী জাহানারা ও ভ্রাতা আরংগোজেবের পক্ষ্য নেওয়া নিজ আর এক ভগ্নী শাহজাদী রওশনারা বেগম।
মুঘোল সম্রাজ্য ক্ষমতা শাহ-জাহানের পুত্র সম্রাট আবু মোজাফ্ফর উদ্দিন মোহাম্মদ আরংগোজেবের হাতে চলে যাওয়ার পরে আনুমানিক ১৬৭০ সালের দিকে তিনি আগ্রা ত্যাগ করে পিতার গড়া বিশ্বের অন্যতম কীর্তি দীল্লির লাল বাগ কেল্লায় বসবাস শুরু করেন। শাহ-জাহান – মমতাজ দম্পত্তির ১৪ সন্তানের মধ্যে সর্বশেষে সম্রাট আরংগোজেব ও শাহজাদী গৌহারা বেগম বেঁচে ছিলেন এবং অবশেষে ১৭০৬ সালে ৭৫ বছর বয়সে তিনি ( গৌহারা বেগম) মৃত্যু বরণ করলে অনুমান করা হয় দীল্লিতে নিজাম উদ্দিন আওলিয়ার দরবার শরীফ প্রঙ্গনে বড় ভগ্নী শাহজাদী জাহানারা বেগমের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। কোন কোন ইতিহাসবিদের মতে তাকে আগ্রায় তাজ-মহলের পাশে পারিবারিক সমাধীস্থলে সমাহিত করা হয়।
ছবিঃ সম্রাট শাহ-জাহান নির্মিত দীল্লির লাল কেল্লার ছবিটি উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহিত।
রেটিং করুনঃ ,