ধারণা করা যায় এই ছবিটি মুঘল সম্রাটদের মধ্যে দিল্লীর মসনদে বসে শাসন কার্য চালিয়েন তার একমাত্র আলোক চিত্র যা ক্যমেরায় ধারণ করা আর তিনি অবশ্যই ১৭ তম ও সর্বশেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ ( দুই ) যিনি মির্জা আবু জাফর সিরাজ-উদ্দিন মোহাম্মাদ বাহাদুর শাহ জাফর নামে পরিচিত।
মূলতঃ ৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট আরঙ্গজেবের শাসন আমলের পর থেকে মুঘল সম্রাজ্য নামে মাত্র বহাল থাকে এবং ক্রমশঃ ক্ষমতা হারাতে ও প্রশাসনিক ভাবে দূর্বল হতে থাকে।
১৮৫৭ সালে ইংরেজদের হাতে ক্ষমতা চূত হওয়ার পরে নাম মাত্র বিচারে সম্রাট বাহাদুর শাহকে ভারত বর্ষ থেকে নির্বাসনে পাঠানোর রায় হয়, নির্বাসনের স্থান নির্ধারণ হয় তৎকালিন বার্মায় বর্তমানের মায়ানমায়ের ইয়াংগুনে। কয়েক জন বেগম সহ একমাত্র জীবিত পুত্র জোয়ান বখত নির্বাসনে যেতে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত অনেকে মত বদল করেন এবং বার্মা যেতে আর রাজি হন নি, অবশেষে বাহাদুর শাহ জাফরের সাথে নির্বাসনে যেতে রাজী হন শেষ মুঘল সম্রাজ্ঞী বেগম জিনাত মহল ও পুত্র জোয়ান বখত ।
রাজ লিপি থেকে জানা যায় যে, ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের হাতে ক্ষমতা চূত হওয়ার পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে আমার সঙ্গে ইংরেজ সাহেবরা এমন আচরণ করেছে যে চোখের পানিতে এক কূয়া কালি দিয়ে তা লিখে শেষ করা যাবে না।
বিচারের ফলাফলে নির্মম নির্বাসনে যেতে তিনি রাজী হন নি বরং চয়েছিলেন অন্য পুত্রদের মত ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড। তা হলে অন্ততঃ তাতে তাঁর দেহাবশেষ তাঁর পূর্ব পৃরুষদের গড়া পবিত্র দিল্লী নগরীর মাটিতে মিশে থাকত।
অবশেষে ১৮৬২ সালের ৭ই নভেম্বর ৮৭ বছর বয়সে সাথে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের মৃত্যু হলে তাঁকে রেংগুনের কোন নির্জন স্থানে সমাহীত করা হয়, যা ঘাসে ঢাকা ছিল আর তা ইংরেজ শাসন আমল পর্যন্ত তাঁর সমাধীর কোন উল্ল্যেখ যোগ্য ঠিকানা ছিল না। ইংরেজরা খুব সম্ভবত চেয়েছিল শেষ সম্রাট্রের সমাধীটি যেন আর খুঁজে পাওয়া না যায়।
১৯৯১ সালের ১৬ই ফেব্রয়ারী কিছু সংখ্য মুসলিম মায়নমার বাসী উপযুক্ত প্রমান সহ শেষ সম্রাটের পারিবারিক সমাধী আবিস্কার করেন এর পর থেকে পাশাপাশি তিনটি সমাধী সর্বশেষ মুঘোল সম্রাট, সম্রাজ্ঞী ও তাদের এক নাতির সমাধীস্থলটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল, ১৯৯৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর মায়ানমায়ের ধর্ম মন্ত্রী ও ভারতের হাই কমিশনারের তত্বাবধানে বাহাদুর শাহ জাফরের দরগা বা সুফি সিরিনী নামে একটি মাজার শরীফের কাজ সমাপ্ত করেন। বর্তমানে মাজার শরীফটির ঠিকানা হচ্ছে- রেংগুনের বা ইংয়াগনের 6 Ziwaca Street near U Wisara Road in Dagon township.
এই ধারাবাহিকতায় ২০১২ এর ২৮শে মে ভারতের তৎকালিন প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং Bahadur Shah Zafar’s “Dargah” (Sufi shrine) পরিদর্শন করেন এবং সেখানে প্রার্থনা করেন, একই ভাবে ২০১২ সালের মে মাসে পাকিস্থানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারী Bahadur Shah Zafar’s “Dargah” (Sufi shrine) পরিদর্শণ করেন এবং কেয়ার টেকারকে মাজার উন্নয়নে ৫০ হাজার মার্কিনী ডলার দান করেন ।
রাজলিপির বর্ণনা মতে ১৭ তম ও শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ ( দুই ) যিনি মির্জা আবু জাফর সিরাজ-উদ্দিন মোহাম্মাদ বাহাদুর শাহ জাফর নামে পরিচিত তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা মুঘল সম্রাজের অনেকের জানা ছিল, সেই মোতাবেক ২০০৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ১৫০ মত বর্ষ পালনের সময় কালে বিশেষ করে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন যে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের দেহাবশেষ আবার দিল্লীতে ফিরিয়ে এনে দিল্লীর খুব কাছে বা কুতুব মিনারের পাশে অর্থাৎ মেহরলীতে তার পিতার সামাধীর পাশে তাকে পুনরায় সমাহিত করা হবে সেই লক্ষ্যে সেখানে একটি মার্বেল পাথর দিয়ে একটি খালি সমাধী তৈরী করা আছে ।
আমাদের বা আমাদের পরের প্রজন্মের দেখার বিষয় সত্যি কি সর্বশেষ মুঘল সম্রাট মোহাম্মাদ বাহাদুর শাহ জাফর কি আবারও দিল্লীতে ফিরে আসেতে পারবেন !
তথ্য ও ছবি – উইকিপিডিয়া সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহিত।
রেটিং করুনঃ ,