প্রসিদ্ধ ইরানী কবি, গণিতজ্ঞ বৈজ্ঞনিক, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম লিখেছিলেন ফার্সী ভাষায় তাঁর বিখ্যাত রোবাইয়াৎ- এ।
আন কাসর কেহ বাহরাম দারু জাম গেরেফত্
আহু বাচ্চেকরদ ও রুবাহু আরাম গেরেফত্
বাহরাম কেহ গুরমী গেরেফ তি হামে উম্ র
দী দি কেহ চেগুনেহ গুর বাহরাম গেরেফত্
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদেঃ
They say the Lion and the Lizard keep
The Courts where Jamshyd gloried and drank deep:
And Bahram, that great Hunter – the Wild Ass
Stamps o’er his Head, but cannot break his Sleep
( Rubai XVII )
নূরুন নাহার বেগমের অনুবাদে –
ঐ যে দেখ প্রসাদ, বাহরাম সেখানে সুরা পানে মত্ত থাকতেন
এখন সেখানে হরিণেরা জন্ম দেয় তাদের সন্তানদের এবং নেকেড়ে
নেয় আশ্রয়। যে বাহরাম সারা জীবন বন্য গাঁধা শিকার করল
দেখেছ সে কেমনে সে সহজেই কবরে শিকার হয়েছেন !!
কান্তি ঘোষের অনুবাদে-
জামশিয়েদের সুরায় পিছল
খাস-দেওয়ানের খিলান মাঝ
বাস বেঁধেছে আজকে সেথায় টিকটিকি আর সিংহরাজ।
রাজার সেরা রাজ শিকারী
বাহরাম কোথায় ঘুমিয়ে রয়
আজকে তো তার মাথার ‘পর
চাট মেরে যায় বন্য-হয় !
জীবনটা খুব ক্ষণ কালের- এ কথাটি আমাদের সবারই জানা, মূল সমস্যার জন্ম হয় যখন ধন-দৌলতের আবরণে, ক্ষমতার মসনদে বা ক্ষমতার চেয়ারে বসে ভুলে যাই আমরা অনেক কিছুই, কুঁড়ে ঘর, দালান কিম্বা রাজ প্রসাদ এ সবই ক্ষণ কালের বিচারে তৈরী। কুঁড়ে ঘর তেমন সময় জুড়ে টিকে থাকে পৃথিবীর ‘পরে, ওমর খৈয়াম তাই তাঁরে লেখায় দালান কিম্বা রাজ প্রসাদ কথাই তুলে ধরেছেন, এই সব প্রসাদে নরম বা আরামের শয্যায় যাদের বসবাস তাদের শেষ পরিণতির কথা বলেছেন তাঁর এই বিখ্যত রুবাইয়ে। ইরাণের এক সময়য়ে দৃষ্টি কাড়া রাজপ্রসাদ তৈরী করে সেখানে রাজত্ব করতেন, রাজা বাহরাম অনেক কিছু আক্রমন করেছেন অনেক কিছু জয় করেছেন কিন্তু তার গড়া প্রসাদ ত্যাগ করে এক সময় তাকে চলে যেতে হয়েছে, ওমর খৈয়াসের ভাষায় খুব সহজে তিনি কবরের শিকারী হয়েছেন অর্থৎ কবর তাকে শিকার করেছেন।
যে প্রসাদে একসময় জমজমাট আয়োজন হতো রাজা, মন্ত্রী, উজির নাজির, রানী নর্তকীর আয়োজনে নাচে, গানে, অনেকেই মদ্য পানে মত্ত থাকতেন সবাইকে এক সময় সেই সুখের প্রসাদ ত্যগ করতে হয়েছে আর তাগের বিদায়ের পরে পরে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে হরিণ, বাঘ্র কিম্বা টিকটিকু কিম্বা তেলে পোকা, অথবা মাকড়াশা। মাকড়াশার জালে ঢাকা পড়েছে সেই সব নরম বিছানা, নানান পানীয়ের পাত্রগুলি তাদের ব্যবহার্য মূল্যবান দ্রবাদি, ময়লা অথবা ধূলার আবরণে।।
পৃথিবীর এই রঙ্গ মঞ্চে বা সুকুমার বৃত্তির এই জগতে জীবনের দর্শন বুঝে পাওয়া অনেক সাধারণ মানুষের জন্য প্রায় অসাধ্য কিম্বা জটিল, চির বিদায়ের পর পরেই অনেকেই মিশে যায় মাটিতে বা বাতাসে, আবার অনেকের কৃর্ত্তিমান গুনাবলিগুলি রাতের আকাশের তারা মত বহুকালের জন্য জ্বল জ্বল করে আবার অনেকের খারাপ কর্ম বা দৃষ্টান্তগুলি বিভিন্ন স্থানে, মানুষের মনে, পুস্তুকে জায়গা দখল করে কুৎসিত মানুষ হিসাবে জগতের স্বাক্ষী হয়ে থাকে।
দালান কিম্বা রাজ প্রসাদে বসবাসকারী অনেকেই জীবনের সঠিক অর্থ উদ্ধার না করতে পেরে, সুখ বিলাসে মত্ত থেকে জ্ঞানের পরিধীকে সংকির্ণ করে ফেলে একটি স্বেচ্ছাচার জীবন যাপন করে শূণ্য হাতে কিম্বা মূল্যহীন হয়ে কিছু বুঝার আগের শেষ আশ্রয় স্থল বা কবরে শিকার হয়ে পড়েন। যে মুখ ছিল হুকুমদাতা তা হয়ে যায় বাকহীন, যে হাত বা আংগুল দিত নির্দেশনা তা হয়ে যায় অচল, সারা জীবনের রক্ষিত রত্ন-ভান্ডার, ধন-দোলত সম্পত্তি সবই হয়ে যায় মূল্যহীন, সকল ক্ষমতা হয়ে পড়ে নিস্ক্রিয়, সবই হয়ে যায় শূণ্য আবার অনেকের বেলায় অথবা যারা জীবনের সঠিক দর্শণের পথ ধরে পৃথিবীর পরে পথিক হয়ে হয়ে চলে অদৃশ্যমান অনেক অর্জন সহ বিদায় গ্রহন করেন আর সাথে রেখে যান নানান খ্যাতিমান কৃর্তি, অবদান, জ্ঞানের ভান্ডার যা ভালো মানুষের জন্য হয় অনুকরনীয়।
শাহী দরবারে একদা যেখানে সম্রাট জামশীদ
( অসমাপ্ত )
রেটিং করুনঃ ,