” দলে দলে আসে আমের মুকুল
বনে বনে দেয় সাড়া ।” – রবি ঠাকুর।
রবীন্দ্র নাথের এই বিখ্যাত কবিতার লাইনটি নিজের কন্ঠে বা সমস্বরে উচ্চারণের সাথে আমাদের আর জানতে বাকি থাকে না আজ কোন দিন ! ছয় ঋতুর দেশে ৬ষ্ঠ বা শেষ ঋতু, ঋতু রাজ বসন্তের আগুন ঝরা ফাগুনের শেষ মাস চৈত্রের প্রথম দিন আজ, আবার আজ চৈত্রের প্রথম দিন হলেও বাংলা মাস চৈত্রই হচ্ছে বাংলা পন্জিকার শেষ মাস।
চৈত্র মাসের এই প্রথম দিনে আমের গাছগুলিতে এখন কাঁচা আমের সমারহো। গত ফাল্গুনে আমের গাছগুলি ভরে উঠেছিল আমের মুকুলে মুকুলে।
আমাদের চোখে দেখা যে বসন্ত সেখানেও তো দেখি গাছে গাছে ফুল ফুটার এক মহা আয়োজন আর এই আয়োজনের বড় অংশীদার আমাদের চৈত্র। এই চৈত্রের প্রথম ধাপে গাছে গাছে, বাগানে বাগানে, বনে নানান রঙের বাহারে এক মহা উৎসবের আয়োজন । গাছের নূতন পাতায় পাতায় রঙের আর আলোর নাচন যেন বাঙালির মনেও দোলে নানান দোলা।
গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের আগমনী বার্তা বাহী কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক চৈত্রেও বর্তমান , যে ডাকে পাগল প্রায় আমাদের মন। নানান ব্যাকুলতায় আমরা আমাদের স্বযত্নের হৃদয় !
আমাদের ঋতু বলয় থেকে গত কয়েক সপ্তাহ আগে বিদায় নিয়েছে শীত কাল আর শীত মাসের বিদায়ের সাথে সাথে শীতের দেয়াল ভেঙ্গে প্রবেশ করতে শুরু করেছে গাছের পাতার ফুলে নানান রঙের মেলা । কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল গাছে গাছে রঙের আগুন মেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব যার বড় অংশীদার এই চৈত্রও।
একটি সমোরম শীত শীত অনুভূতির বিদায় আর চৈত্রের উষ্ণতায় প্রকৃতি আজ অভিষিক্ত, এমনি এক মনোরম আবহাওয়ায় বসন্তকে যেন আমরা পাই একেবারে প্রাণের মধ্য খানে, কোথাও হারিয়ে গিয়ে শান্তি প্রশান্তির মধ্য খানে।
” চৈত্র আমার রোদে পোড়া , শুকনো যখন নদী ,
বুনো ফলের ঝোপের তলায় ছায়া বিছায় যদি , ” – রবি ঠাকুর।
রবি ঠাকুরের এই কবিতার লাইনে থেকে আমরি বুঝে নেই চৈত্র আমাদের রোদে পোড়া, থৈ থৈ পানির নদীগুলি শুকিয়ে গিয়ে শীর্ণ রূপ ধারণ করা। মাটিতে, গাছে গাছে শুষ্কতা তবুও কবির বর্ণনার মত এই চৈত্রে বুনো ফলের ঝোপের তলায় আহা কী শীতল ছায়ার পরশ।
” জানব আমার শেষের মাসে ভাগ্য দেয় নি ফাঁকি ,
শ্যামল ধরার সঙ্গে আমার বাঁধন রইল বাকি ।” – রবি ঠাকুর।
বিশ্ব কবির আশাবাদের সাথে আমাদেরও একই আশাবাদ যে, বাংলা পন্জিকার শেষ মাস প্রিয় চৈত্র আমাদের কর্মে ভাগ্যে কোন ফাঁকি দিবে না, শ্যামল ধরার সঙ্গে আমাদের বাঁধন রইল চির দিনের ও অটুট।
আরও আশাবাদী হই প্রিয় চৈত্রকে নিয়ে যখন রবি ঠাকুর দেখেন
চৈত্র-হাওয়ায় পাল তুলে দিই,
ওই যে মেতে ওঠে নদী।
পার করে নিই ভরা তরী,
মাঠের যা কাজ সারা করি
বড় আশাবাদী হয়ে উঠি যাবার বেলায় চৈত্র যখন দিয়ে যাবে নদীতে খাল বিলে থৈ থৈ পানির আভাস।
তবুও আশা ও সর্বনাশে দোলায় রবি ঠাকুর যেমন দুলে ছিল, আমরাও সেই চৈত্রের দোলায় দুরে উপভোগ করি প্রাণের চৈত্রকে-
” প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঋতু রাজ বসন্তের ফাগুনের আর এক অংশীদার চৈত্র যেমনই হোক আমাদের মানস পটে আঁকা ! চৈত্র থাকুক আমাদের প্রাণের মধ্যখানে, বসন্ত ঋতুর সেই আমাদের চির চেনা প্রাণের জানা চৈত্রের বিশাল আকাশে, গাছে গাছে নানান রঙের মেলা, আমাদের মনকে রাজকীয় করে রাখুক প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে আমাদের এই চৈত্র।
প্রাণের ঋতু রাজ বসন্তের প্রিয় মাস, হে চৈত্র – শুভ হোক তোমার আগমন এই বাংলায়……………………………..।
রেটিং করুনঃ ,