প্রসিদ্ধ ইরানী কবি আবুল ফতেহ্ গিয়াসউদ্দীন হাকিম ওমর খৈয়াম, অনেকটাই কুম্ভকারের দার্শনিক হিসাবে পরিচিত।
মূল রোবাই – এ ওমর খৈয়াম লিখেছেন –
“দর কারগাহ্ কুজেহ গরি বুদম দোশ
দীদম দোহেজার কুজেহ গোইয়া ও খাদোশ্
হর ইয়েক্ বেযবানে হাল বা মন্ গোফ তান্দ
কো কুজেহ খরও কুজেখরও কুজেহ ফরোশ।”
ফিটজেরাল্ডের ইংরেজী অনুবাদে :
Thus with the Dead as with the Living, What ?
And why ? so ready, but the Where for not,
One a sudden peevishly exclaimed,
“ which is the Potter, Pray, and which the Pot “
( Rubai LXXXVI)
নূরুন নাহার বেগমের বাংলায় অনুবাদে –
গত রজনীতে আমি ( খৈয়াম) গিয়েছিলাম এক কুম্ভকারের কর্মশালায়।
দেখলাম দুই সহস্র মাটির পাত্র-কোনটা মুখর, কোনটা বা মূক।
প্রত্যেকেই নীরব ভাষায় আমাকে (খৈয়াম) প্রশ্ন করল।
কোথায় সেই কুম্ভকার, কোথায় সেই ক্রেতা! আর কোথায় বা সেই বিক্রেতা! ”
ওমর খৈয়ামের মতে জন্ম- মৃত্যুর মত আমাদের ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই।
মানুষকে তিনি কখনো কখনো মাটির হাড়ি পাতিলের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি সৃষ্টিকর্তাকে কুম্ভকার হিসাবে মনে করেছেন। একজন কুম্ভকার যেমন মাটি থেকে বিভিন্ন আকৃতিতে হাড়ি পাতিল তৈরী করেন। আবার তৈরী করা হাড়ি পাতিলগুলি এক সময় ভেংগে টুকরা টুকরা হয়ে আবার মাটিতে মিশে যায়, সে ভাবে আমরা মানুষ মাটি থেকে তৈরী হয়ে রক্তে মাংশে মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে বিচরণ করে আবার মাটিতে মিশে যাই।
তৈরীর সময় কিছু কিছু হাড়ি পাতিল যেমন বাঁকা, আকৃতিতে বেআকৃতি হয় ঠিক তেমনি মানুষ জন্মের সময় কেউ কেউ বিকালাংগ, বোবা, বধির হয়ে জন্মায় এখানে মানুষের কোন হাত নেই। বা কোন নিয়ন্ত্রন নেই। মানুষের তাই এখানে কোন দুঃখ, কষ্টেরও কোন কারণ নেই, এর উ্দ্দেশ্যও খোঁজা অর্থহীন। এসবই কুম্ভকারের নিয়ন্ত্রনে।
আবার একটি হাড়ি বা পাতিল ফুটা হয়ে গেলে বা ভেংগে অর্ধেক হয়ে গেলে মানুষ সেটি ব্যবহার করে বিকল্প হিসাবে, হাড়ি পাতিল ফুটাকে সিমেন্ট জাতিয় পদার্থ দিয়ে মেরামত করা হয়, আবার মানুষের যখন কোন অংগহানি হয়, অংগ বিকল হয় তখন মানুষও দেহে কিছু সংস্থাপন করে মানুষ স্বাভাবিক বা কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে চলে।
রেটিং করুনঃ ,