আমাদের কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অন্যতম বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘এই সব দিন রাত্রী’ প্রচারিত হওয়ার সময় বলেছিলেন ‘এই সব দিন রাত্রী‘ এই কথাটি রবীন্দ্র নাথের, তাঁর বিখ্যাত চলচিত্র আগুনের পরশ-মণি প্রদর্শনের সময় ‘আগুনের পরশ-মণি‘ কথাটি রবীন্দ্র নাথের তেমনি ভাবে তিনি বলেছিলনে ‘আমার আছে জল‘ উপন্যাসটিও রবীন্দ্র নাথের কবিতা থেকে নেওয়া।
ধরা যাক, এখন আষাঢ় মাস, আকাশে মেঘ দেখি, হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে আসে, এমন অবস্থায় আকাশের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে মেঘের পরে কথাটা লিখতে গিয়ে আমারও মনে পড়ল একথাটি রবীন্দ্রনাথের ” মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে-” অথবা আবার আসিব ফিরে কথাটা লিখতে গিয়ে আমারও মনে পড়ে গেল এটা বিখ্যাত কবিতার ( আবার আসিব ফিরে) লাইন গুলি।
আবার আসিব ফিরে
– জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
একজন নবীন ব্লগ লেখক হয়ে নূতন কিছু লিখতে যদি হোচট খেতে হয় তবে আমাকে ভাবতেই হবে যে এসব আমার পাঠ ও ভাবনার সীমাবদ্ধতার কারণে, আমার কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ মহা-কাব্য পাঠের ভান্ডার বড় সীমিত। একটি কূয়া থেকে কয়েক বালতি বা পাত্র পানি তোলার পর কূয়া যদি পানি শূন্য হয়ে যায় তবে ধরে নিতে হয় যে আমার ভাবনার বা মেধার গভীরতা সেই পানি শূন্য কূয়ার মত বা আমার জ্ঞান ভান্ডারের সাথে পানি শূন্য কূয়ার বেশ মিল। জাত কবি বা লেখক তিনিই. যার বর্ণিত কূয়া থেকে কখনই পানি ফুরাবে না।
লেখা শুরুর সময়ে ভাবা প্রয়োজন যে আমার ভাবনার বা লেখার ক্ষমতার গভীরতা কত ! কত গভীর ভাবনার গভীরতা ! লেখার বিষয়ের গভীরতা !! সল্প শিকড়ে কী কোন বৃক্ষ দাঁড়িয়ে থেকেছে বহুকাল !! কিম্বা বৃক্ষের শিকড়ে যদি রোগে ধরে বা ক্ষয়ে যায় !
ভাবার গভীরতা কম হলে স্বল্প পানির মাছের মত ক্ষাণিক ক্ষণ লাফিয়ে ঝাপিয়ে লেখা থেমে যায়, আবার অনেকগুলি কারণে ভাবনার আকাশ ছোট হয়ে আসলে লেখক এক সময় নিস্তেজ হয়ে তাঁরও লেখা থেমে যায়, একই ভাবে ভাবনার পুকুর ছোট হয়ে আসলে মাছ যতই গভীর পানির বড় মাছ হোক না কেন ! এমন লেখক এক সময় নিস্তেজ হয়ে তাঁরও লেখা থেমে যায়।
ছোট কাল থেকে আমার যে দেখা, বুঝা, জানা, অভিজ্ঞতা সেখান থেকে যদি লেখা শুরু করার পর লেখার ভুবন ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসে তবে আমি ঝরে পড়া লেখকের দলে। সজীব ফলন্ত বৃক্ষের মত একজন লেখক হতে চাইলে দরকার বৃক্ষের চর্চা, পানি সারের ব্যবস্থা করা। আঞ্চলিক সাহিত্যের সাথে, দেশের সাহিত্যের সাথে, বিশ্বের সাহিত্যের সাথে মিল রাখা তাল মিলিয়ে চলা, তবেই প্রতি ক্ষণে ক্ষণে যুগে যুগে পাত্রে পাত্রে পানি তোলার পরেও কূয়া থাকবে কানায় কানায় পূর্ণ। যেখানে লেখার কলম অবিরত লিখবে, সাফল্য গাঁথা সব লেখা, উন্নত গাথঁনিতে লেখা সাথে উন্নত লেখার ভান্ডার।
তারিখ ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,
:yes: :yes: :yes: :rose: :rose: :rose: :rose:
লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
শিক্ষক আস্তে আস্তে গভিরে যাইতেছে,
যেমন চায়ে চিনি দেয়ার ব্যপার, চিনি দিন কিন্তু ঘুটবেন না,
আস্তে আস্তে গলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, দারুন ভাই
শিক্ষক আস্তে আস্তে গভিরে যাইতেছে,
যেমন চায়ে চিনি দেয়ার ব্যপার, চিনি দিন কিন্তু ঘুটবেন না,
লেখায় উৎসাহ যোগানো মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, মান্নান ভাই।
আমরা বর্তমানে যারা লিখছি তারা (ব্যতিক্রম আছে) তারা
শুরুতেই খ্যতির মগডালে চড়তে চাই। তাই না হই লেখক
না হই পাঠক। লিখতে হলে যে পড়তে হয় তা আমরা
অবজ্ঞায় একপাশে সরিয়ে রাখি। তাই আমাদের লেখা
পূর্ণতা পায় না। কারণ লেখা শুরুর সময়ে আমরা ভাবিনা
যে আমার ভাবনার বা লেখার ক্ষমতার গভীরতা কত !
ধন্যবাদ রব্বানী ভাই চমৎকার উপদেশ দেবার জন্য
যা নবীন লেখকদের চলার পথকে সুগম করতে
সহায়ক হবে।
মন্তব্যে বর্তমানের সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো বিশ্লেষণ।
লেখা শুরুর সময়ে ভাবা প্রয়োজন যে আমার ভাবনার বা লেখার ক্ষমতার গভীরতা কত ! কত গভীর ভাবনার গভীরতা ! লেখার বিষয়ের গভীরতা !! সল্প শিকড়ে কী কোন বৃক্ষ দাঁড়িয়ে থেকেছে বহুকাল !! কিম্বা বৃক্ষের শিকড়ে যদি রোগে ধরে বা ক্ষয়ে যায় !
খুব মন দিয়ে পড়লাম লেখাটি ! কত ক্ষুদ্র লেখার জগতে, যদিও আমি পথিক।
এই বিশাল জগত সংসারে সবা্রই কিছু না কিছু অবদান আছে, তাই সেই অবদানের কথা নিয়মিত লিখে রাখা উচিত।
// লেখা শুরুর সময়ে ভাবা প্রয়োজন যে আমার ভাবনার বা লেখার ক্ষমতার গভীরতা কত ! কত গভীর ভাবনার গভীরতা ! লেখার বিষয়ের গভীরতা !! সল্প শিকড়ে কী কোন বৃক্ষ দাঁড়িয়ে থেকেছে বহুকাল !! কিম্বা বৃক্ষের শিকড়ে যদি রোগে ধরে বা ক্ষয়ে যায় ! //———–
লেখার আড়ালে অনেক অনেক ভাবনা জমেছে!!
সেই ভাবনার ফসল এই লেখাটির জন্ম দিয়েছে!!
মনের কোণে জমে থাকা কথাগুলি কোথাও না কোথাও লিখে রাখাটা সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আমার ধারণা, তাই সময়ের ফাকে ফাকে কিছু না কিছু লিখে রাখার চেষ্টা করি।