রবীন্দ্র গবেষকগনের মতে নিচের বিখ্যাত গান দুইটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাদম্বরী দেবীকে, ( কবির ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পত্নী ) উদ্দেশ্য লিখেছিলেন, উল্লেখ্য যে রবীন্দ্রনাথের বিবাহের অল্প সময় কালের মধ্যে কাদম্বরী দেবী আত্ম হননের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী খেকে বিদায নেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবন কাহিনীত লিখেছেন ————
” ইতিপূর্বে মৃত্যুকে আমি কোনোদিন প্রত্যক্ষ করি নাই। মা’ র যখন মৃত্যু হয় আমার তখন বয়স অল্প। …………. বাড়িতে যিনি কনিষ্ঠা বধূ ( কাদম্বরী দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পত্নী ) ছিলেন তিনিই মাতৃহীন বালকদের ভার লইলেন। তিনিই আমাদিগকে খাওয়াইয়া পরাইয়া সর্বদা কাছে টানিয়া আমাদের যে কোনো অভাব ঘটিয়াছে তাহা ভুলাইয়া রাখিবার জন্য দিনরাত্রি চেষ্টা করিলেন। যে-ক্ষতি পূরণ হইবে না, যে-বিচ্ছেদের প্রতিকার নাই, তাহাকে ভুলিবার শক্তি প্রাণশক্তির একটা প্রধান অঙ্গ— শিশুকালে সেই প্রাণশক্তি নবীন ও প্রবল থাকে, তখন সে কোনো আঘাতকে গভীরভাবে গ্রহণ করে না, স্থায়ী রেখায় আঁকিয়া রাখে না। এইজন্য জীবনে প্রথম যে-মৃত্যু কালো ছায়া ফেলিয়া প্রবেশ করিল, তাহা আপনার কালিমাকে চিরন্তন না করিয়া ছায়ার মতোই একদিন নিঃশব্দপদে চলিয়া গেল। ………………….. কিন্তু আমার চব্বিশবছর বয়সের সময় কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে। শিশুবয়েসের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটাইয়া ছুটিয়া যায়— কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই। তাই সেদিনকার সমস্ত দুঃসহ আঘাত বুক পাতিয়া লইতে হইয়াছিল।
জীবনের মধ্যে কোথাও যে কিছুমাত্র ফাঁক আছে, তাহা তখন জানিতাম না; সমস্তই হাসিকান্নায় একেবারে নিরেট করিয়া বোনা। তাহাকে অতিক্রম করিয়া আর কিছুই দেখা যাইত না, তাই তাহাকে একেবারে চরম করিয়াই গ্রহণ করিয়াছিলাম। এমনসময় কোথা হইতে মৃত্যু আসিয়া এই অত্যন্ত প্রত্যক্ষ জীবনটার একটা প্রান্ত যখন এক মুহূর্তের মধ্যে ফাঁক করিয়া দিল, তখন মনটার মধ্যে সে কী ধাঁধাই লাগিয়া গেল। চারি দিকে গাছপালা মাটিজল চন্দ্রসূর্য গ্রহতারা তেমনি নিশ্চিত সত্যেরই মতো বিরাজ করিতেছে, অথচ তাহাদেরই মাঝখানে তাহাদেরই মতো যাহা নিশ্চিত সত্য ছিল— এমন-কি, দেহ প্রাণ হৃদয় মনের সহস্রবিধ স্পর্শের দ্বারা যাহাকে তাহাদের সকলের চেয়েই বেশি সত্য করিয়াই অনুভব করিতাম সেই নিকটের মানুষ যখন এত সহজে এক নিমিষে স্বপ্নের মতো মিলাইয়া গেল তখন সমস্ত জগতের দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল, এ কী অদ্ভুত আত্মখণ্ডন! যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া! ”
” তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,
ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মত সত্য নও।
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥
নয়নসমুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই– আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
নাহি জানি, কেহ নাহি জানে–
তব সুর বাজে মোর গানে,
কবির অন্তরে তুমি কবি–
নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥” তুমি কি কেবলি নও ছবি নও ছবি ”
অপর বিখ্যাত গানটি –
” আমার প্রাণের ’পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো ।
সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে–
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত ।
সে চলে গেল, বলে গেল না– সে কোথায় গেল ফিরে এল না ।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল–
তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে ।
সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে, চাঁদের আলোর দেশে গেছে,
যেখান দিয়ে হেসে গেছে হাসি তার রেখে গেছে রে–
মনে হল, আঁখির কোণে আমায় যেন ডেকে গেছে সে ।
আমি কোথায় যাব, কোথায় যাব, ভাবতেছি তাই একলা বসে ।
সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর ।
সে প্রাণের কোথায় দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর ।
কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল,
ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলে গেল ।
হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এল রে–
কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে ॥”
তারিখ: নভেম্বর ২৬, ২০১৮
রেটিং করুনঃ ,
কবি তার ব্যক্তিজীবনের অনুভুতি নিয়ে গান বা কবিতা রচনা করেন, স্বার্থক হয় তখন যখন তা ছড়িয়ে যায় সমস্ত শ্রোতা, পাঠক/ পাঠিকার হৃদয়ে।
গান দুটি এমনই স্বার্থকভাবে আমাদেরকে নাড়া দেয় যে, আবেগে আপ্লুত হতে হয়।
ভাল কথা কিন্তু এক রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আর কতকাল?
তার বলয় থেকে বেরুবার কোন পথই কি খোলা নাই!!!
এই কবি এমনই এক রাক্ষুসে লেখক সকলের সব অনুভুতি হরণ করে নিয়ে রচে গেছেন কালজয়ী অজস্র রচনা।
তাকে স্যালুট কিন্তু এ প্রত্যাশাও করি কেউ তার বলয় থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে আসুক।
চমৎকার আলোচনা, কোন লেখায় এমন আলোচনাকে খুব সহজে বলা যায় একটি লেখার অলংকার। আলোচনা মতামত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে জমে উঠার কথা আমাদের এই লিখালিখি এর প্রাঙ্গণ।
রবীন্দ্র বলয় থেকে বেড়িয়ে আসার সকল পথ আমরাই বন্দ করে দিয়েছি বলে আমার ধারণা। বড় একটি কারণ সহজী করণ।
মাইকেল মধু-সুদন দত্ত মহা-কাব্য রচনা করেছিলেন, কিছুটা আরও সহজ ভাবে বাংলা সাহিত্যে আধিপত্ত বিস্তারের লক্ষ্যে হয় তো রবীন্দ্রনাথ বেশি সময় ব্যয় করা হবে তাই সহজীকরণের পথ ধরে কোন মহা কাব্য রচনা করেন নাই।
সহজীকরণের পথ ধরে আজ প্রায় বহু জনই পাঠকের ভূমিকায় না থেকে দুই এক লাইন লিখে ” লাইক” নামক একটি বিষয় দিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যেতে চায় প্রতি নিয়ত ।
লেখক যদি সাধনায় না লিখতে চায় ! তা হলে কি সাধন হবে ! লেখক কবির জন্ম হবে !! কথিত যে এখন বই মেলায় হুমায়ুন আহামেদের ২০০ বা ২৫০টির বেশি কোন প্রকাশিত সংখ্যা বিক্রি হয় না, কেন এই দশা ! তিনি নিজেই বলেছিলেন ” বাজারে লেখক তিনি, টাকার বিনিময়ে লেখা ! আজ যে প্রজন্ম ফেস-বুকিয়তে নাম লিখিয়েছে তারা কি হুমায়ুন আহামেদ পড়ে !!
অন্তত আগামী পঞ্চাশ বছরেও রবীন্দ্রনাথে সমকক্ষ তাঁর এক হাজার ভাগের এক ভাগ সাহিত্যে আধিপত্ত বিস্তার করার মত কোন কবি আর আসবেন না।
আমার কথায় মন ক্ষুণ হওয়া খুব স্বাভাবিক তবে আমার কথার উপর ভর করে যদি আপনি বা কেউ কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন তবেই বাংলা সাহিত্যের মঙ্গল, বাংলা সাহিত্যের আকাশে নতুন এক নক্ষত্র আশা করা যায়।
হাই হ্যালো।
আপনার প্রতি রইল লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। :rose:
রবীন্দ্রনাথের অনেক ভালো লাগা গানের মাঝে এ গান দুটিও আমার অনেক পছন্দের। আপনাকে ধন্যবাদ।
আমারও খুব প্রিয় গান তবে দুই জনের পছন্দ একই হলে ঝগড়া বিবাদ লেগে যায় ! তবে মনে আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া বিবাদের বালাই নাই।
রবীন্দ্রাথের গান মানেই অন্যরকম ভালোলাগা। বাঙালি রবীন্দ্রনাথের সব অবদান ভুলে গেলও তার গান বাঙালিকে আবেগাপ্লুত করে রাখবে আরও দীর্ঘসময়, এটা বলা যেতে পারে।
পোষ্টের জন্য :rose:
রবীন্দ্রাথের গান মানেই অন্যরকম ভালোলাগা। বাঙালি রবীন্দ্রনাথের সব অবদান ভুলে গেলও তার গান বাঙালিকে আবেগাপ্লুত করে রাখবে আরও দীর্ঘসময়, এটা বলা যেতে পারে।
কথাগুলির সাথে একমত, সেই সাথে শুভেচ্ছা
হৃদয় কাপানো গান দুইটি আমার আর এই গানের অন্তরালের কথা জেনে খুব ভালো লাগলো।
আসলই হৃদয় কাপানো গান দুইটি, মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
রবীন্দ্রনাথ একজনই জন্মায় এ ধরায়!!
চমৎকার গান দু’টোর উৎস জানলাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ রব্বানী ভাই!!
রবীন্দ্রনাথে উপর ভর করে এই লেখাটি, বিশেষ করে আমার লেখার মূল বিষয় রবীন্দ্রনাথে কোন ভাবনা বা কিছু লাইন তেমনি করে রবীন্দ্রনাথ বহু জনকে অনেক উপরে তুলে দিয়েছেন অনেক গায়ক-গায়িকাকে অনেক শিল্পীকে এমন কি বহু মানুষের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, আজও যারা আছেন মিডিয়ায়, প্রকাশনায়।
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপা, যে কোন লেখায় মন্তব্যই হচ্ছে লেখাটির প্রাণ।