ভারতের রিলায়েন্স ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের প্রধান মুকেশ আম্বানি কেবল ভারতের নয়, এশিয়ার শীর্ষ ধনী। গত দুই বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর আসনে থেকেছেন আম্বানি। যদিও এ বছরের শুরুতে নতুন একটা মোড় নিয়েছিল এই শীর্ষত্ব নিয়ে। চীনা ধনকুবের পানি ব্যবসায়ী ঝং শানশানের কাছে এশিয়ার শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান তিনি। পরে মার্চে শানশানের বোতলজাত পানি কোম্পানির শেয়ারের দাম রেকর্ড ২০ শতাংশ পড়ে যাওয়ায় আবার শীর্ষস্থানে আসীন হন আম্বানি।
সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বসের ৩৫তম বার্ষিক বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ভারতের শীর্ষ ধনী নিয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি, আম্বানিই আছেন। তবে চমক এসেছে দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর অবস্থান নিয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন গৌতম আদানি। মজার বিষয় হচ্ছে, কেবল মুকেশ নন বিশ্বের সব শীর্ষ ধনীকে এ বছর টেক্কা দিয়েছেন ভারতের আদানি গোষ্ঠীর এই চেয়ারম্যান। চলতি বছরে জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক, মুকেশ আম্বানিদের ছাপিয়ে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে সম্পত্তি বাড়িয়েছেন গৌতম।
ফোর্বসের তালিকায় ভারতের যে শীর্ষ ১০ ধনীর কথা বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দুজনই স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত। মহামারির মধ্যে এ খাতের পণ্যের যে বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে, তাতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে তাঁদের সম্পদ। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ভারতের শীর্ষ ১০ ধনীর নাম।
১. মুকেশ আম্বানি
ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৮৪ বিলিয়ন ডলার। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের নিট ঋণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গড়েছেন আম্বানি। গত বছর তিনি তাঁর টেলিকম ইউনিট জিওর এক-তৃতীয়াংশ ফেসবুক এবং গুগলের মতো বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করেছেন।
২. গৌতম আদানি
ফোর্বসের তালিকায় ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৫০ বিলিয়ন ডলার। ১৯৮৮ সালে আদানি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি। ক্রমেই তা ভারতের শীর্ষস্থানীয় পাওয়ার জেনারেটর ও পোর্ট অপারেটর সংস্থা হয়ে ওঠে। ২০১৯ সালে এই গ্রুপ বিমানবন্দরের ব্যবসায় নামে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে আদানি গ্রুপের ছয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। চলতি বছরে কেবল একটি ক্ষেত্র ছাড়া আদানি গোষ্ঠীর সব কটি ব্যবসার শেয়ারের মূল্য ৫০ শতাংশ হারে বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যবসায় আদানিদের মুনাফার হার ছাপিয়ে গেছে ৯০ শতাংশও।
৩. শিভ নাদার
২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তিনে রয়েছেন এইচসিএল টেকনোলজিসের শিব নাদার। ভারতের তৃতীয় সর্ববৃহৎ সফটওয়্যার এক্সপোর্টের এইচসিএল। দিল্লির বাসিন্দা শিভ নাদার গত বছরের জুলাইতে এইচসিএল টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একমাত্র মেয়ে রোশনি নাদার মালহোত্রার হাতে তুলে দেন দায়িত্ব।
৪. রাধাকৃষ্ণ দামানি
রিটেইল ও বিনিয়োগের অন্যতম নাম রাধাকৃষ্ণ দামানি। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে আর্থিক ক্ষতির মুখে প্রায় গোটা বিশ্ব। ব্যবসা-বাণিজ্যে একরকম অচলাবস্থার কারণে এই সময় সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে ভারতের অনেক শিল্পপতির। তবে রাধাকৃষ্ণ দামানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে সাড়ে ১৬ বিলিয়নে পৌঁছেছে। মূলত গত বছর তাঁর অ্যাভিনিউ সুপারমার্কেটের শেয়ার দর তরতর করে বাড়ায় ধনীর তালিকায় এ অবস্থানে চলে এসেছেন তিনি।
৫. উদয় কোটাক
কোটাক মহিন্দ্র ব্যাংকের মালিক উদয় কোটাক। ব্যাংকটি ভারতের বেসরকারি খাতে শীর্ষ চারে রয়েছে। ২০২১ সালে এসে ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়নের মালিক তিনি। গত জুনে কোটাক ৯৫ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকটিতে তাঁর শেয়ার পরিমাণ কমিয়ে রিজার্ভ ব্যাংকের আদেশ অনুসারে ২৬ শতাংশে নামিয়ে আনেন।
৬. লক্ষ্মী মিত্তাল
লক্ষ্মী মিত্তালের ব্যবসার মূল ভিত্তি স্টিল। তিনি অবশ্য এখন থাকেন লন্ডনে। ২০২১ সালে তিনি ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়নের মালিক। গত বছর কোম্পানি ‘আরসেলর মিত্তালের’ প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যান লক্ষ্মী। এ দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ছেলে। লক্ষ্মী এখন কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান।
৭. কুমার বিড়লা
ভারতের সপ্তম শীর্ষ ধনী কুমার বিড়লার মালিকানায় রয়েছে অনেক সংস্থা, যার মধ্যে রয়েছে ভোডাফোন আইডিয়া, সিমেন্টসহ আরও অনেক কোম্পানি। তিনি এখন ১২ দশমিক ৮ বিলিয়নের মালিক।
৮. সায়রাস পুনেওয়ালা
করোনার এই সময়ে পুনেওয়ালা পরিবার যেন নতুন করে পরিচিতি লাভ করেছে। সায়রাস পুনেওয়ালার ভ্যাকসিন তৈরির সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হচ্ছে করোনার টিকা। ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে সায়রাস এখন ভারতের অষ্টম ধনী। যদিও এখন সেরামের মূল দায়িত্ব রয়েছে সায়রাসের ছেলে আদর পুনেওয়ালার হাতে।
৯. দিলীপ শাংঘাভি
ভারতে ওষুধের তৈরির জগতে রয়েছে দিলীপের নাম। তার কোম্পানি সান ফার্মাসিউটিক্যালসের বড় উত্থান হয়েছে এই করোনার সময়ে। ২০২১ সালে ১০ দশমিক ৯ বিলিয়নের মালিক তিনি।
১০. সুনীল মিত্তাল ও পরিবার
টেলিকম খাতের সুনীল মিত্তাল ভারতের দশম শীর্ষ ধনী। দিল্লির বাসিন্দা সুনীল মিত্তালের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার। তাঁর ভারতী এয়ারটেল, সিঙ্গাপুরের সিঙ্গেলেলের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ, আম্বানির জিওর পরে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ১৬,২০২১
রেটিং করুনঃ ,