বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবারের নির্বাচন প্রমাণ করেছে খালেদা জিয়ার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, ‘নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন পুরোপুরি পূর্বপরিকল্পিত এবং ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে সুপরিকল্পিত। সে কারণে এই নির্বাচন নিয়ে জনগণের যে আশা ছিল, ১০ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগের যে সুযোগ ছিল, জনগণ সেটি প্রয়োগ করতে পারল না। জনগণকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে এই নির্বাচন পুনরায় সংঘটিত করতে হবে এবং সেটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে হবে। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারবে না। এবার এই সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগসাজশে করে যেভাবে নির্বাচন করল, তা জাতির নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। নির্বাচনে যেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য কয়েক মাস আগে থেকে ভৌতিক, গায়েবি মামলা করা হয়েছে। আসনভিত্তিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার সংখ্যা তখনই পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এসব মামলায় প্রতিটি আসনে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এসব মামলার সূত্র ধরে পুলিশ বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি ভোটের দিনও গ্রেপ্তার করেছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ‘সন্ত্রাসের’ মধ্য দিয়ে নজিরবিহীন নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে থেকে একটি যুদ্ধাবস্থা, ত্রাসের অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। মূলত বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতা-কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে। যাঁরা নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন, তাঁদের টার্গেট করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে এবং নির্বাচনের আগের দিন তোলা (গ্রেপ্তার) হয়েছে।
ভোট কারচুপির বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় যে অভিজ্ঞতা, তা ভয়ানক। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনের আগের সন্ধ্যা থেকে কারচুপি শুরু হয়েছে। আগের রাতে পুলিশ-র্যাব কেন্দ্রে গিয়ে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের বা যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। তারা সেখানে একদফা সিল মেরে রাতে কাজ সেরেছে।’ তিনি বলেন, সরকার প্রথম দিকে কিছু কিছু আসন দখল করার চেষ্টা করেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত সাধারণ উপায়ে ভোট হয়েছে। এ সময় যখন দেখেছে যে প্রচুর ভোটার আসছে, তখন তারা আবার ১১টা থেকে দখল করা শুরু করেছে। এটি এমন ভয়াবহভাবে চলেছে যে, কোনো বাছবিচার করা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ও ভোটারদের তাড়ানোর কাজ করেছেন।
এত অত্যাচার-নির্যাতনের পর নির্বাচনে থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যাও দেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি দল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য বিএনপি মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের পরও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো- ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮,
রেটিং করুনঃ ,