Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

১৯৯৯ সালে তালেবান শাসনে এক নারীর অভিজ্ঞতা(২০২১)

Share on Facebook

তালেবানের হাতে গত রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন ঘটে। এখন তালেবান নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে সংগঠনটি তালিকাভুক্ত আফগানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজতে শুরু করেছে। প্রায় দুই দশক ধরে যেসব আফগান নানাভাবে দেশটিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করেছে তারা। এমনকি দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যেও বিদেশি সহায়তাকারীদের খোঁজা হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি গোপন নথির বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এ কথা জানিয়েছে।

এমনই এক ঘটনা ১৯৯৯ সালে ঘটেছিল ফ্রিবা (ছদ্মনাম) নামের এক শিশুর বাবার সঙ্গে। তখন তার বয়স ১০ বছর। সেই শিশু এখন ৩২ বছরের তরুণী। বসবাস করছেন লন্ডনে। ফ্রিবা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর বাবাকে হারানোর সেই ঘটনা খুলে বলেন বিবিসির কাছে।

রিবাদের বাড়ি ছিল আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে। পরিবারের বিশ্বাস, তাঁর বাবাকে তালেবান তুলে নিয়ে গেছে। ফ্রিবিয়া বলেন, ‘তালেবান শাসনের অধীনে বসবাস করা ছিল খুবই অপমানজনক। প্রথম দিকে তারা ভালো ছিল। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এরপর তারা বুঝেশুনে পা ফেলতে শুরু করে। এমনকি তারা কিছু কিছু প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে। কিন্তু যখন তাদের মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাসে মানুষ বিশ্বাস করতে লাগল, তখনই তারা তাদের আসল পরিকল্পনা করতে শুরু করে।’

ফ্রিবার ভাষ্যমতে, দ্রুতই এবং একটু একটু করে বিশ্বের নজর আফগানিস্তানের ওপর থেকে সরতে শুরু করে। আর গণমাধ্যমও অন্য খবরের দিকে ঝুঁকে যায়। সেই সুযোগে দিন দিন তালেবান তাদের শক্তিকে জোরদার করে। শুরু হয় নতুন করে নিষ্ঠুরতা।
ফ্রিবার বাবার জন্ম হেরাতে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষে তিনি বিয়ে করেন এবং তখনকার আফগান সরকারের জন্য ছোট একটি দলে অংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

আফগানিস্তান থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিদায় নেওয়ার পর আফগান মুজাহিদিনরা দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলে ফ্রিবার বাবার চাকরি জোটে একটি বেসরকারি সংস্থায়। ‘তালেবান যখন হেরাতে এল, তখন বাবার সেখান থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু তিনি যাননি। তিনি তাঁর কাজকে ভালোবাসতেন, হেরাতকে ভালোবাসতেন’—বলেন ফ্রিবা।

আমি মায়ের মুখটা ভুলব না

তালেবান শাসনের অধীন জীবন অনেক পাশবিক ছিল। আমরা চার বোন ও এক ভাই। কিন্তু তালেবান শাসনে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বাবা তাঁর কাজ ও আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। বাবার কাজটা ছিল পশু–প্রাণী নিয়ে। এর মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা শান্তি খুঁজে পেতেন।

১৯৯৯ সালের জুনের মাঝামাঝি এক সকালে বাবা সকালের নাশতা শেষ করে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেলে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দেন ও চলে যান। ঠিক কয়েক মিনিট পর আমাদের কয়েকজন প্রতিবেশী বাবার মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন। বলেন, তালেবান বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি ওই সময়কার আমার মায়ের চেহারাটা ভুলব না। এটি তাঁর জন্য অনেক বড় মানসিক ধাক্কা ছিল। তিনি আতঙ্কে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন। মা আমার পাঁচ বছরের ভাইটির হাত ধরে বাবাকে খুঁজতে ছুটে বের হয়েছিলেন। সারা দিন এদিক–সেদিক খোঁজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। তখন পৃথিবীর সব ভার যেন মায়ের কাঁধে। আমার বাবার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কে নিয়ে গেছে , তিনি জীবিত আছেন কি না, আমরা কিছুই জানতে পারিনি। আমার মামা-চাচারা ও বন্ধুরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।

আমার মা প্রতিদিন তালেবান দপ্তরে ঢুঁ মেরেছেন। কিন্তু তারা তাঁর কথা শুনতে চায়নি। সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে আমার চাচা কান্দাহারে যান। তিনি শুনেছিলেন তালেবান সেখানে বেশ কয়েকজনকে আটকে রেখেছে। কিন্তু সেখানেও বাবার খোঁজ মেলেনি। এরপর তিনি কাবুল ও মাজার-ই-শরিফ যান। সেখানেও পাননি।

আমাদের প্রতিবেশী যারা বাবাকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছেন, তাঁরা একই তালেবান সদস্যদের অন্য আরও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছেন। পরে তাঁদের হেরাতে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

ফ্রাবিয়া তাঁর মাকে শক্ত মনোবলের অধিকারী উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার মায়ের মনের জোর ছিল অনেক বেশি। তাঁর বিশ্বাস ছিল বাবা ফিরবেন। তিনি হাল ছাড়েননি। পরিবারের লোকজন না করার পরও মা একদিন আমার ছোট ভাইটিকে সঙ্গে নিয়ে কান্দাহারে তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের দপ্তরে যান। তালেবান সেখানে মাকে মারধর করে ও হুমকি দেয়। তারা মাকে বলে, আবার যদি মাকে দেখে তাহলে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে। আমার মা হতাশ ও পরাজিত হয়ে বাড়ি ফেরেন।’
আমরা তালেবানকে ক্ষমা করতে পারি না

তালেবান শাসনের জীবন হলো নিরাশার কৃষ্ণগহ্বরে যাওয়ার মতো। মা আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকতেন। এরপর তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমাদের নিয়ে পাড়ি দেন ইরানের মাসহাদে। ২০০৪ সালে যখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়, আমরা আবার আফগানিস্তানে ফিরে আসি। আমরা পড়াশোনা শুরু করলাম ও নিজেদের জন্য কিছু করতে চাইলাম। আমাদের নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। আমরা সেটা পূরণ করতে চাইলাম। এখনো বাবার সেই হাসিমুখটা মনে পড়ে। তিনি আমাকে যে কলমটা দিয়েছিলেন, তা আজও আমার কাছে আছে। আমরা তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করতে পারি না, আমরা তাঁকে ভুলব না। যখনই খবরে দেখলাম তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তখন ভয় লাগছিল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

এখন আমার বিয়ে হয়েছে। আমি ইংল্যান্ডে থাকি। কিন্তু আফগানিস্তানে থাকা আমার মা, ভাই ও বোনদের জন্য আমার খুব ভয় হয়। নিজের পরিবার ছাড়াও লাখো মানুষ যাদের নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বা যারা আমাদের মতো কাউকে হারিয়েছে বা হারাবে, তাদের কথা ভেবে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। আফগানিস্তানে জন্মই আসলে অপরাধ।

বিবিসি অবলম্বনে লিপি রানী সাহা

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ২২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ