১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কেন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যখনই আক্রমণ শুরু হয়, প্রথমে যেমন সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় বা শেখ মনির বাসায়, খবরটা আসার সাথে সাথে এবং আমাদের বাসায় যখন গুলি শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়, সেনাপ্রধান সফিউল্লাহর সাথে কথা হয়। সেনাবাহিনীরও যার যা ভূমিকা ছিল তারাও কিন্তু সঠিকভাবে করে নাই। এর পেছনে রহস্যটা কী, সেটাই কথা।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ১৫ আগস্টের ভয়াবহ নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে এই রকম একটা ঘটনার পর আমাদের দল, সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভূমিকা (রাখার কথা) ছিল, তা হয়তো তারা করতে পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকুই চাই, যারা ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, তাদের উদ্দেশ্য তো ছিল বাংলাদেশ ফেইল্ড (ব্যর্থ) রাষ্ট্র হোক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনটা ব্যর্থ হোক, স্বাধীনতার আদর্শগুলো ধ্বংস হয়ে যাক। সেটাই করতে দেব না। যে নাম তারা মুছে ফেলেছিল ২১ বছর। আজকে আল্লাহর রহমতে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখন আর কেউ তা মুছতে পারবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম এখন আর মুছতে পারবে না। সেই ইতিহাস তারা বিকৃত করেছিল, আজকে সেই ইতিহাস মানুষের কাছে উদ্ভাসিত।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তাঁর বক্তব্যে খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারী বলে আবারও উল্লেখ করেন। জিয়াউর রহমান অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন—এ রকম ইতিহাস জানা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিরা) প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জন করা ভুল ছিল এবং সে জন্যই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অস্ত্রসহায়তা দেওয়ার জন্য যারা সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল, তারা ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল।
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সম্প্রতি সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি (পুলিশের সঙ্গে) মারামারি করল। বিএনপি কি জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই বা কবরে জিয়ার লাশ নেই। খালেদা জিয়া তা ভালো করেই জানেন। সেখানে বাক্স আনা হয়েছিল, সে বাক্সের মধ্যে কেউ জিয়ার লাশ দেখতে পায়নি। বাক্সের মধ্যে যে লাশটি ছিল, তা সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু জিয়া সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আর রাষ্ট্রপতি সামরিক পোশাকে থাকেন না। তাহলে এত নাটক কেন।
উল্লেখ্য, ১৭ আগস্ট চন্দ্রিমা উদ্যানে ওই সংঘর্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছুই করেননি। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টির জন্য তাঁদের দায়ী করেন তিনি।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ২৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,