লেখক: আরিফুর রহমান।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী মৌজায় ১০৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে দিনরাত তিন হাজার শ্রমিকের কর্মযজ্ঞ চলছে। কাজ হচ্ছে ইউরোপ থেকে আমদানি করা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে, যা ওই অজপাড়াগাঁয়ের মানুষের কাছে এক বিস্ময়। আগে কখনো তাঁরা এমন দৃশ্য দেখেননি। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে ছয়টি কারখানা। আগামী বছর থেকে এসব কারখানায় লবণ, সিমেন্ট, চিনি, তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস (এলপিজি) ও কাগজ উৎপাদন আর জাহাজ তৈরির কথা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী সিটি গ্রুপ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তুলছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছ থেকে গত বছরের ১ জানুয়ারি চূড়ান্ত লাইসেন্স বা সনদ পাওয়া এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিটি গ্রুপ ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
সিটি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, লবণ, এলপিজি, সিমেন্টসহ বেশ কিছু ব্যবসায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে সিটি গ্রুপ। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং পণ্যের দাম কমবে।
গত শনিবার সরেজমিনে হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল দেখা গেছে, ভারী যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে একসঙ্গে ছয়টি কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে মাটি খনন ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ চলছে। তৈরি করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি)। গড়ে তোলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় পানি শোধনাগার।
জানা গেছে, হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আরও ৪২ একর জমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে সিটি গ্রুপ। সব মিলিয়ে ১৫০ একর জমির ওপর তৈরি হবে হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চল।
ইউকে বাংলা সিমেন্ট কারখানা
সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ প্রতি বছর বাড়ছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিনের চালার পরিবর্তে পাকা ঘর নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে। এতে দেশে সিমেন্টের বাজার দ্রুত বাড়ছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই সিমেন্ট ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে সিটি গ্রুপ। তাদের ইউকে বাংলা সিমেন্ট কারখানায় দিনে ১৫ হাজার টন সিমেন্ট উৎপাদিত হবে। মেঘনা নদীর নিচ দিয়ে কারখানা পর্যন্ত ৩০ মিটার দীর্ঘ টানেল তৈরি করা হবে সিমেন্ট সরবরাহের জন্য।
ঢাকা সল্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল
সিটি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রথম উৎপাদনে আসছে লবণ কারখানা। ৯ একর জমির ওপর ‘ঢাকা সল্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল’ নামের এই কারখানা ও কাঁচামাল রাখার গোডাউনের নির্মাণকাজ শেষ। এখানে বসানো হয়েছে সুইজারল্যান্ড থেকে আনা আধুনিক যন্ত্রপাতি।
ঢাকা সুগার লিমিটেড
হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৩ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা সুগার লিমিটেড নামের চিনিকল। এতে বছরে ১১ লাখ টন চিনি উৎপাদিত হবে। এ জন্য জার্মানি থেকে যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি করা হবে ব্রাজিল থেকে। ইতিমধ্যে কারখানার ৫০ শতাংশ কাজ শেষ। দুই লাখ টন কাঁচামাল রাখার জন্য দুটি গোডাউন নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইউকে বাংলা পেপার মিল
সিটি গ্রুপ প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে যাচ্ছে কাগজের ব্যবসায়। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথভাবে পেপার মিল বা কাগজের কল করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারখানার কাজও চলছে জোরেশোরে। আগামী বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ইউকে বাংলা পেপার মিলের।
হোসেন্দী জাহাজ নির্মাণ লি.
সিটি গ্রুপের আমদানি করা গম, ভুট্টা, সয়াবিন, ক্লিঙ্কার, অপরিশোধিত তেলসহ কাঁচামাল ও নিজেদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে এখন ১৫০টি জাহাজ দরকার, কিন্তু আছে ৭৩টি। তাই হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাহাজ নির্মাণ করবে গ্রুপটি। সরেজমিন দেখা গেছে, একসঙ্গে ছয়টি জাহাজের নির্মাণ কাজ চলছে। আপাতত নিজেদের প্রয়োজনেই জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাসম্পন্ন একেকটি জাহাজ নির্মাণে সময় লাগবে ১০ মাস।
সিটি এলপিজি
এই প্রথম তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছে সিটি গ্রুপ। হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের ‘সিটি এলপিজি কারখানায়’ বটলিংয়ের সক্ষমতা থাকবে এক লাখ টন। এলপিজি প্ল্যান্ট তৈরির কাজও চলছে জোরেশোরে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব। আধুনিক ও পরিকল্পিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বর্জ্য পরিশোধনে
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ১0, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,