Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

হোল ইন দ্য ওয়াল বা দেয়ালের ভেতর গর্ত (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।

‘দেয়ালের ভেতর গর্ত’ কথাটি আসলে স্বশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিখ্যাত নিরীক্ষার নাম ‘হোল ইন দ্য ওয়াল’–এর বাংলা অনুবাদ। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৯ সালে। দিল্লিতে বসবাসকারী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার বাঙালি অধ্যাপক শ্রী সুগত মিত্র একদিন ভাবলেন, বাচ্চারা কি নিজে নিজে কম্পিউটার শিখতে পারবে? বিষয়টা বোঝার জন্য তিনি তাঁর অফিসের পাশে একটা বস্তির দেয়ালে গর্ত করে তাতে ইন্টারনেটের সংযোগসহ কয়েকটা কম্পিউটার গেঁথে দিলেন, পরে যা ‘হোল ইন দ্য ওয়াল’ নামে পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, বস্তির ৮-১২ বছরের যেসব বাচ্চা জীবনে কখনো কম্পিউটার দেখেনি এবং কম্পিউটার যে ভাষায় চলে, সেই ইংরেজি ভাষাও যাদের অজানা, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেরাই কম্পিউটার চালানো কিংবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা শিখে গেল।

‘এটা আর এমন কী!’ শ্রী মিত্রের সহকর্মীরা বললেন, ‘দেখো, আশপাশে হয়তো কম্পিউটার চালাতে জানা কোনো ছেলে-ছোকরা ছিল, সে–ই ওদের শিখিয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু পরে যখন সুগত রাজস্থানের মরুভূমি কিংবা দক্ষিণ ভারতের গন্ডগ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে একই কাজ করলেন, তিনি দেখলেন, ওখানকার বাচ্চারাও দিল্লির ছেলেমেয়েদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

শ্রী মিত্র এবার হায়দরাবাদে গেলেন। দেখলেন ওখানে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি উচ্চারণ খারাপ। ভাবলেন, ওরা নিজেরা নিজেদের চেষ্টায় বোধগম্য ইংরেজি বলাটা আয়ত্ত করতে পারে কি না, দেখা যাক। তিনি ওদের কম্পিউটারের সঙ্গে একটা সফটওয়্যার দিলেন যাতে কেউ ব্রিটিশ উচ্চারণের কাছাকাছি উচ্চারণে কোনো কথা বললে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার স্ক্রিনে টাইপ হয়ে যায়। ইংরেজি শেখার দায়িত্বটা ছেলেমেয়েদের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে তিনি চলে এলেন। দুই মাস পর তিনি গিয়ে দেখেন যে তখন কম্পিউটার ওদের ইংরেজি উচ্চারণ পরিষ্কার বুঝতে পারছে।

এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে একসময় নিউ ক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক পেলেন। তারা তাঁকে এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেড় মিলিয়ন পাউন্ড দিল; কিন্তু তার সঙ্গে ছুড়ে দিল নতুন চ্যালেঞ্জ—সুগতর এই পদ্ধতিতে কি বাচ্চারা বায়োটেকনোলজির মতো বিষয় শিখতে পারবে? সুগত চ্যালেঞ্জটা নিলেন। এবার একেবারে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রথাগত গবেষণা। কন্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে ঠিক করা হলো দিল্লির একটা নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের আর এক্সপেরিমেন্টাল গ্রুপ করা হলো দক্ষিণ ভারতের পদুচেরির গ্রাম কালিকুপ্পুমের বাচ্চাদের।

সুগত যথারীতি কম্পিউটার নিয়ে গেলেন। তবে ছেলেমেয়েদের কিংবা তাদের গ্রাম দেখে খুব একটা ভরসা পেলেন না। কোনোভাবেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারলেন না যে ওই তামিল ভাষাভাষী বালক-বালিকারা নিজে নিজে ইংরেজিতে বায়োটেকনোলজি শিখতে পারবে। তিনি ধরেই নিলেন, এবার আর কিছু হবে না।
যা–ই হোক, তিনি বাচ্চাদের ডেকে বললেন,
‘আমি এমন কিছু বিষয় কম্পিউটারগুলোয় দিয়ে দিয়েছি, যা খুবই কঠিন। তোমরা হয়তো বুঝবে না, কিন্তু এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর খুবই মজার।’
বাচ্চারা বলল, ‘সেগুলো কী?’
উত্তরে সুগত সত্য কথাই বললেন, ‘আমিও ঠিক জানি না।’
সুগত ওদের ওই রকম ধন্ধের মধ্যে ফেলে চলে এলেন। দুই মাস পর ফিরে গিয়ে ওই ছাব্বিশজন ছেলেমেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কিছু বোঝা গেল?’
সবাই একদম চুপ, কোনো কথা নেই। তারপর একসময় বলল, ‘কিছুই বুঝিনি।’
‘কিছুই বোঝনি?’
‘না। সব ইংরেজিতে, বড় বড় কেমিস্ট্রি শব্দ। আমরা কিছুই বুঝিনি।’
‘তোমরা যে কিছুই বোঝনি, এটা বুঝতে তোমাদের কত সময় লেগেছে?’
‘আমরা তো প্রতিদিনই ওগুলো দেখি।’
এবার একটু খটকা লাগল সুগতর। জানতে চাইলেন, ‘তোমরা কিছুই বোঝনি, অথচ প্রতিদিন দেখ! কী কর ওখানে?’

একটা মেয়ে হাত তুলল, তামিল আর ইংরেজি মিলিয়ে বলল, অ্যাপার্ট ফ্রম দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট ইমপ্রপার রেপ্লিকেশন অব দ্য ডিএনএ মলিকিউল কজেজ জেনেটিক ডিজিজ।

বড় একটা ধাক্কা খেলেন সুগত। সঙ্গে সঙ্গে একটা বাচ্চারা কতটা শিখেছে তার একটা পরীক্ষা (পোস্ট টেস্ট) নিয়ে নিলেন এবং অবাক বিস্ময়ে দেখলেন যে তারা শতকরা ত্রিশ ভাগ নম্বর পেয়ে গেছে। কিন্তু তাতে সমস্যা ফুরাল না। নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন হৃদয়ের অধ্যাপক-গবেষকেরা এত অল্পে সন্তুষ্ট হবেন না। শতকরা ত্রিশ ভাগ নম্বর তো ফেল মার্কস। কী করা যায়! তিনি ওই বাচ্চাদেরই বন্ধুস্থানীয় একজন বাইশ বছর বয়সী হিসাবরক্ষক ভদ্রমহিলাকে ধরলেন। বন্ধুস্থানীয় বললাম এ কারণে যে তিনি ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। সুগত অনুরোধ করলেন,
‘আপনি কি একটু ওদের বায়োটেকনোলজি শেখাতে পারবেন, যাতে ওরা পরীক্ষায় পাস করতে পারে?’
‘আমি কীভাবে শেখাব? ওই বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই নেই।’
‘না, আপনাকে ওইভাবে কিছু শেখাতে হবে না। আপনি শুধু দাদিমার ভূমিকা পালন করবেন।’
‘সেটা কেমন?’
‘ওরা যখন কাজ করবে, আপনি ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে “বাহ”, “বেশ তো”, এ রকম কিছু একটা বলে প্রশংসা করবেন।’ দুই মাস ধরে ওই ভদ্রমহিলা তা–ই করলেন। এরপর আবার একটা পোস্ট টেস্ট হলো। এবার তারা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ নম্বর পেয়ে পাস করল যা নতুন দিল্লির নামকরা স্কুলের অর্থাৎ ওই কন্ট্রোল গ্রুপের প্রাপ্ত গড় নম্বরের সমান।

সুগত এ রকম আরও বহু পরীক্ষা–নিরীক্ষা বহু দেশে করেছেন। প্রায় একই পদ্ধতিতে করা এসব নিরীক্ষায় তিনি প্রায় একই ফল পেয়েছেন। এ বিষয়ে সুগতর একটা তত্ত্বও আছে। তাঁর মতে ‘সেলফ অরগানাইজিং সিস্টেম’ বলে একটা ব্যবস্থা আছে যা কেবল নিজে নিজে কাজ করে, বাইরের কোনো কিছু তাকে প্রভাবিত করতে চাইলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। যা–ই হোক, এ বিষয়ে তাঁর লেখা নিবন্ধ নামকরা জার্নালে ছাপাও হয়েছে। সবই ঠিক আছে, শুধু একজন রিভিউয়ারের মন্তব্যে আমাদের একটু খটকা লাগে। তিনি লিখেছেন যে এটা ছাপার যোগ্য, কিন্তু এত ভালো যে সত্য বলে মনে হয় না। হয়তো এই কারণে আমাদের দেশে অনেকে এসব বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিন্তু ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক নতুন শিক্ষাক্রম শুরু করার প্রাক্কালে শ্রী মিত্রের এসব অভিজ্ঞতা ও তত্ত্ব থেকে সরকার-শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকেরা যে চিন্তার অনেক খোরাক পাবেন, এতে নিশ্চয়ই কেউ দ্বিমত করবেন না।

****সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মাউশির সাবেক মহাপরিচালক।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: মে ২৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ