Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

হত্যা করো আমাদের, আমরা সব প্রেতাত্মা হব! (২০২১)

Share on Facebook

ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে শাব-গাজিদা সাহার
উও ইন্তেজার থা জিসকা, ইয়ে উও সাহারতো নাহি,
ইয়ে উও সাহারতো নাহি জিসকি আরজুও লেকার
চালে থে ইয়ার কে মিল জায়েগা কাহি না কাহি
ফালাক কে দাস্ত মে তারো কি আখিরি মাঞ্জিল,

এই যে ছোপ ছোপ কালো, আলো-অন্ধকার,
রাতের ছোবলে আহত এই যে সকাল
এ রকম সকাল তো আমি চাইনি!
যার জন্যে এত দিন বসে ছিলাম
এ তো সেই সকাল না!
এ তো সেই সকাল না যার দিকে চেয়ে হেঁটেছি এতটা পথ!
ভেবেছি একদিন নিশ্চয়ই পৌঁছে যাব
আমাদের স্বপ্নের শেষ ঠিকানায়!

এই কবিতা প্রথম শুনেছিলাম নন্দিতা দাসের ফিরাক ছবিতে, নাসিরুদ্দিন শাহর অসাধারণ আবৃত্তিতে। কবিতার নাম, ‘সুবহ-ই-আজাদি’—স্বাধীনতার সকাল। খুঁজতে গিয়ে দেখি উনিশ শ সাতচল্লিশে রক্তাক্ত দেশভাগের ব্যথা নিয়ে স্বাধীনতার প্রথম সকালে কবি লিখেছিলেন, ‘এ তো সেই সকাল না যার দিকে চেয়ে হেঁটেছি এতটা পথ!’ আজীবন সংগ্রামী এই কবির হয়ে একবার নাকি আদালতেও লড়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ঘনিষ্ঠ ছিলেন শহীদুল্লা কায়সার, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হানসহ আরও অনেক সৃষ্টিশীল বাঙালির। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের যে ১৩ জন পাকিস্তানি নাগরিককে একাত্তরে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আর সম্মাননা দিয়েছিল বর্তমান সরকার, তাঁদের অন্যতম ছিলেন এই কবি, নাম ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ।

আমাদের বার্ষিক জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় উদ্‌যাপনে একুশ মানে মাথা নত না করা, মার্চ মানে স্বাধীনতা। অথচ সেই একুশের মাসেই এবার কারাবন্দী অবস্থায় মারা গেছেন উদ্যমী একজন নাগরিক, একজন সৃষ্টিশীল লেখক মুশতাক আহমেদ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ছিলেন তিনি, স্বাধীনতার ৫০তম বছরে ৯ মাসে ৬ বার নাকচ হয়েছিল এই সৃজনশীল মানুষের জামিন। এই দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আগেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। মুশতাকের মৃত্যুর পর এই মার্চেই ১০ মাস বিনা বিচারে বন্দী থেকে ৬ মাসের জামিনে আপাত মুক্তি পেয়েছেন তাঁর সহযাত্রী কার্টুনিস্ট কিশোর, দিয়েছেন ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে স্বাধীন মতপ্রকাশই ছিল তাঁদের অপরাধ।

পত্রিকায় পড়েছিলাম, বছরের পর বছর একা বদ্ধ ঘরে আটকে থাকতে থাকতে নাকি গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন জুলিয়ান আসাঞ্জও, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন যেকোনো সময়, জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। তাঁর অপরাধ—গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর বাক্‌স্বাধীনতার ধ্বজাধারী বিশ্বমোড়লদের শঠতার মুখোশ খুলে দেওয়া। ইউটিউবে দেখলাম তাঁর মুক্তির দাবিতে লন্ডনে পিংক ফ্লয়েডের সহপ্রতিষ্ঠাতা, গিটারিস্ট রজার ওয়াটার্স পড়ে শোনাচ্ছেন কবিতা—‘কিল আস, উই উইল বিকাম ঘোস্টস অ্যান্ড রাইট অব ইয়োর কিলিংস, উইথ অল দ্য এভিডেন্স। ইউ রাইট জোকস ইন কোর্ট, উই উইল রাইট জাস্টিস অন দ্য ওয়ালস!’

হত্যা করো আমাদের, আমরা সব প্রেতাত্মা হব!
ফিরে এসে সাক্ষী দেব, তোমাদের সকল হত্যাকাণ্ডের
যা খুশি তা-ই রায় দাও তোমাদের আদালতে,
আমাদের বিচারের রায় লেখা থাকবে দেয়ালে দেয়ালে!

বছরখানেক আগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদি সরকারের নাগরিকত্ব আইনের অন্যায্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চালিয়েছিল সরকারদলীয় সন্ত্রাসী আর পুলিশ। প্রতিবাদে নবীন কবি আমির আজিজ লিখেছিলেন, ‘সাব ইয়াদ রাখা জায়েগা—সবকিছু মনে রাখা হবে’, রজার ওয়াটার্সের আবৃত্তি ছিল সেই কবিতারই ইংরেজি তরজমা। সেই একই ঘটনার প্রতিবাদে কানপুর আইআইটির ছাত্ররা গেয়ে উঠেছিল কোরাস—‘হাম দেখেঙ্গে…লাজিম হায় কি হাম ভি দেখেঙ্গে!—দেখে নেব…একদিন আমরাও দেখে নেব!’ মোদি সরকারের অনুগামী একদল আবার ‘এই কবিতা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরোধী’—এই অভিযোগে তদন্ত কমিটিও বসিয়েছিল কানপুরে, যার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন জাভেদ আখতারের মতো শিল্পীরা।

‘হাম দেখেঙ্গে’ কবিতার কথা কয়েক বছর আগে প্রথম শুনেছিলাম লাহোরে, সাউথ এশিয়া মিডিয়া স্কুলে করাচির এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছে। সালটা নাকি ছিল ১৯৮৬, পাকিস্তানের মসনদে তখন গায়ের জোরে বসে আছেন জেনারেল জিয়াউল হক। মেয়েদের শাড়ি পরা নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করা হয়েছে, অভিযোগ—শাড়ি ভারতীয় পোশাক। লাহোরের আল হামরা আর্ট হলে চলছে ফয়েজ উৎসব, দুই বছর আগে মারা গেছেন ফয়েজ। ফরমান উপেক্ষা করে সেখানে শাড়ি পরে গান গাইতে এসেছেন প্রখ্যাত গায়িকা ইকবাল বানু, যাঁর জন্ম দিল্লিতে, দেশভাগের পাঁচ বছর পর বিবাহসূত্রে যিনি হয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানি। প্রতিবাদের রং কালো শাড়ি পরে হলভর্তি দর্শকের সামনে এসে ইকবাল বানু গেয়ে উঠলেন, ‘হাম দেখেঙ্গে…লাজিম হায় কি হাম ভি দেখেঙ্গে!’ মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা হল! গানের মাঝে বারবারই থেমে গেলেন ইকবাল বানু, আর সেই সুযোগে সমস্ত হল কাঁপিয়ে শ্রোতারা স্লোগান দিলেন, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’।

স্বভাবতই জিয়াউল হক ঘটনাটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। কারণ, ১৯৭৯ সালে এই স্বৈরাচারী সেনাশাসকের উদ্দেশেই কবিতাটা লিখেছিলেন ফয়েজ। সেই রাতে লাহোরের শিল্পী-সাহিত্যিকদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী, ধ্বংস করেছিল সেই গানের রেকর্ড যেখানেই পেয়েছে। তবু সেই গান লাখ লাখ ভিউ নিয়ে আজও ঘুরছে ইউটিউবে, ফিরে এসেছে ভারতে ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে, এই প্রজন্মের তরুণদের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। আর সেই ঘটনার দুই বছর পর রহস্যময় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত জিয়াউল হক আজও ইতিহাসের খলনায়ক।

সব দেশে, সব সমাজেই অন্যায় হয়, এই কথাটা ইদানীং খুব শুনি। কিন্তু যে সমাজে শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা সেই অন্যায়ের প্রতিবাদে শামিল হন না, সেই সমাজের অন্যায়ের ভাগ তাঁদের কাঁধেও এসে পড়ে। শিল্পীরা সমাজের চোখ, জাতির মনন। শিল্পীরা নীরব হয়ে গেলে ভাষা হারিয়ে ফেলে জাতি, রাষ্ট্র হারায় পথ। ভূমিকম্প আগে টের পায় কাক, সমাজের ক্ষয় আগে টের পাওয়ার কথা কবিদের।

স্বৈরাচারী সেনাশাসক এরশাদের সময় ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’, শিল্পী কামরুল হাসানের এই এক বাক্যের পোস্টার বইমেলায় আগুন লাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। সেই সময় স্কুল থেকে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেখতাম কবিতা উৎসবের বিশাল মঞ্চ, একেবারে মাথার ব্যানারে লেখা দেখেছি মুক্তিকামী মানুষের আগুন ঝরানো স্লোগান। স্বাধীন দেশে কিসের মুক্তি, সেই দিন না বুঝলেও আজ বুঝি, দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ মুক্ত হয় না। মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিদিন একটু একটু করে চেষ্টা করতে হয়, সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে অগ্রজদের, কবিদের, শিক্ষকদের, শিল্পীদের।

আজকের রাষ্ট্রনায়কেরা হয়তো সমাজপাঠ ভুলে গেছেন। তাই শিক্ষকদের এখন মনে করিয়ে দেওয়ার সময় যে রাষ্ট্রের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয়নি, বরং যূথবদ্ধ মানুষের কল্যাণেই তৈরি হয়েছিল সমাজ আর সমাজের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্র মানুষকে সম্মান করবে না, মানুষও তাকে ছুড়ে ফেলে দেবে—এটাই ইতিহাসের পাঠ। পৃথিবী কোনোকালেই আদর্শ ছিল না, হবেও না হয়তো কোনো দিন। কিন্তু যে সমাজে আলো বা আদর্শের কোনো জায়গাই থাকবে না, সেখানে অন্ধকারে সিঁধ কাটবে বর্ণচোরা উগ্রবাদ, বুঝে ওঠার আগেই খোকলা করে দেবে সমস্ত ভিটেমাটি, পায়ের তলার জমিন। এটাই হওয়ার কথা এখনকার শিল্পীদের ক্যানভাস, অগ্রজদের সাবধানবাণী।

দেশ, রাষ্ট্র, সরকার আর সমাজ—চারটা আলাদা জিনিস। এদের নিজেদের স্বার্থেই আলাদা রাখতে হয়। সরকারের কোনো একটা কাজের বিরোধিতা মানে, সরকার বিরোধিতা নয়, রাষ্ট্রবিরোধিতা তো নয়ই। একটা স্বাধীন দেশে প্রতিটা অন্যায়ই প্রতিবাদযোগ্য, ধিক্কারযোগ্য। একটা স্বাধীন দেশে প্রতিবাদ আমার মৌলিক অধিকার। একটা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্তত এইটুকু আমার পাওনা।

লেখক : কামার আহমাদ সাইমন স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ