আসলে কাকে বলে স্মার্টনেস? ইংরেজি অভিধানে স্মার্ট শব্দটির এক অর্থ হচ্ছে—উজ্জ্বল, নবীন দর্শন, পরিচ্ছন্ন ও সুবেশধারী। আর অন্য অর্থ—চটপটে, তীক্ষ্ণধী বা বুদ্ধিমান। চটপটে মানে অযথা চঞ্চলতা নয়, নয় অকারণ বাচালতা।
বুদ্ধি, মেধা বা ধীশক্তিও তাই। পঠন-পাঠন ও চর্চার মধ্য দিয়ে নিজের জ্ঞান ও মননকে শাণিত করে তুললে স্মার্টনেস বাড়ে। চিন্তাভাবনা আর দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার হয়। তখন যেকোনো বিষয়ে গুছিয়ে কথা বলা যায়, ভাবা যায়।
গুণী মানুষেরা বলেন, আত্মবিশ্বাসই হলো আসল স্মার্টনেস। আত্মবিশ্বাস এমনই এক দ্যুতি, যার প্রভাব একজন মানুষের পুরো আচরণে প্রতিফলিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান স্মার্ট বলতে বোঝালেন সামগ্রিক অ্যাপিয়ারেন্স। তাঁর মতে, বুদ্ধিমত্তা, কথা বলা ও চিন্তাভাবনায় একজন মানুষের স্মার্টনেস প্রকাশ পায়।
সামিয়া রহমান বলেন, ‘আমাদের একটা ধারণা হলো, পোশাক-আশাকেই বুঝি একজন মানুষকে স্মার্ট করে তোলে। আসলে শুধু পোশাক দিয়ে কখনো স্মার্টনেস প্রকাশ পায় না। পোশাকটা আমার সঙ্গে মানানসই কি না, আমি সেটাকে বহন করতে পারছি কি না, সেটি ভেবে পোশাক নির্বাচন করা উচিত। পোশাক পছন্দের বিষয়টি নির্ভর করে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, তাঁর শারীরিক গড়ন ও বয়সের ওপর।’ শিক্ষকতা পেশার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সামিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের অনেককেই দেখেছি, কিছুদিনের মধ্যে পোশাক-আশাক পরিবর্তন করে নিজেকে পাল্টে ফেলে। কিন্তু স্মার্ট হতে হলে শুধু পোশাক-আশাকে নয়, পরিবর্তন আনতে হবে নিজের ব্যক্তিত্বেও। আর সেই ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা সম্ভব জ্ঞান ও বুদ্ধিচর্চার মধ্য দিয়ে। গুছিয়ে কথা বলাটাও স্মার্টনেসের একটি অংশ।’
কেউ কেউ বলেন, স্মার্ট মানুষেরা সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকেন কিংবা সময়কে এগিয়ে নিয়ে যান। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কি স্মার্ট ছিলেন?
তাঁর যে ছবিটা আমরা দেখি বিভিন্ন জায়গায়, মাথায় ঘোমটা টানা সাদা শাড়ি পরা, ফুল হাতা ব্লাউজ, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, হাতে কয়েকটা বই। সেই ছবিতে কি তাঁকে আনস্মার্ট মনে হয়? অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সবাই বলেছে, না, তিনি খুব স্মার্ট ছিলেন। কেন? কারণ, তিনি চিন্তাভাবনায় অগ্রসর ছিলেন। তিনি এমন সব কাজ করেছেন, যেগুলো তাঁর সময়ে অন্যরা বলতে বা করতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম বলেন, একবাক্যে স্মার্টনেস ব্যাখ্যা করা যায় না। যুগে যুগে স্মার্টনেসের ধরন বদলায়। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, কর্মক্ষেত্রে, কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে স্মার্টনেস। ব্যক্তির আচার-আচরণে সেটি প্রতিফলিত হয়। আমার কাছে স্মার্টনেস হলো বুদ্ধিমত্তা। সেই স্মার্ট যে বুদ্ধিমান, সপ্রতিভ ও সুচিন্তা করতে পারেন।
স্মার্টনেস আসলে সামগ্রিক বিষয়। একে শুধু একটি অনুষঙ্গ দিয়ে বিচার করলে হবে না। পোশাক, রুচি, চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব—সব মিলিয়ে একজন মানুষ পরিপূর্ণ স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেন।
সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত
তারিখ: মার্চ ১৭, ২০১৬
রেটিং করুনঃ ,