সুপ্রিয় হলুদীয়া
তোমার বিয়ের ঠিক ছয় মাস, তিন দিন, পাঁচ ঘন্টা পড়ে তোমার সাথে আমার প্রথম ঢাকা নিউ মার্কেটে দেখা হলো, তোমার সাথে তোমার বর ছিল, তোমার বরের সাথে তুমি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলে, তোমাকে আগের থেকে সব চেয়ে বেশি সুন্দরী লাগছিল আর যদি তোমার পড়েনে হালকা কাঁরু কাজের জামদানি শাড়ী থাকতো তবে আরও বেশি বেশি সুন্দরী লাগত তোমাকে, বেশ ছিপ ছিপে, গাঁয়ে রঙটা আরও কাঁচা হলুদের মত লাগতো, বিশেষ করে তোমার ভরাট হাত দুইটি। কানে ঝুমকা দুল, কাঁচের চুড়ি এক হাতে দুই ডজন করে। পায়ে ফ্লাট সেন্ডেল এ সব থাকলে। যে সুন্দরী, তাঁর বর্ণনা না আনাই ভালো, বরং তাঁকে খাটো করা হয়। তবে এবার সঠিক ভাবে লক্ষ্য করলাম যে বিয়ের ঠিক পরে বরের পাশে মেয়েরা ভয়ানক সুন্দরী হয়ে উঠৈ।
তোমাকে চিঠিতে লিখছি একটা কারণ আছে, সেল ফোনে কথাগুলি বললে হয়তো তুমি নানান যুক্তি দিতে আমি যা বলতে চাইলাম তা হয়তো বলা হত না। তুমি আশা করেছিলে আমি তোমার বরের পাশে তোমার সাথে আপনি আপনি করে কথা বলি। আমি তোমাকে তুমি তুমি করে কথা বলাতে তুমি কিছুটা অবাক হলে। তুমি হয়তো ভেবেছিলে আমার একটা জ্ঞান থাকা দরকার যে, বিয়ের পরে তোমার সাথে তুমি তুমি করে কথা বলার আর প্রয়োজন থাকে না।
এই কথাটি বলার জন্য তোমাকে চিঠি লেখা, আর তো তোমার সাথে দেখা নাও হতে পারে, তবে কেন তোমাকে আপনি আপনি বলে দূরে সরিয়ে দেই !!! সকল সময়ের জন্য তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো এ ছিল আমার সকল সময়ের আশা, শুভ-কামনা। আমি জানি সব মেয়েই চায় তার বর জানুক একটি মেয়ের এই মাত্র জন্ম হয়েই একজন বরের কনে হয়ে গেল, বউ হয়ে গেল। কোন মেয়ে চায় না যেন তাঁর বর জানুক জন্মের পর আর বিয়ের আগে কোন মেয়ের একটি ব্যক্তিগত জীবন থাকে যেখানে একটি যুবক ছেলে ছুটাছুটি করে – মেয়েদের এই বাসনাটি জানি বলেই তোমার বিয়ের এক মাস আগে থেকে তোমাকে ছুটি দিয়েছিলাম। চির দিনে ছুটি, মুক্ত পাখির মত আকাশে উড়ে বেড়ানোর ছুটি।
আমাদের সমাজের দম্পত্তিদের সুখি হওয়াটাই সকলের বড় লক্ষ্য, আর আমিও সেটা চাই, পরিবারের বড় সদস্যরা আমার জন্য একটি কনের খোঁজে বেশ ব্যস্ত হয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিবাবকরা যাকে পছন্দ বা মনোনিত করবে সেখানে আমার মত থাকবে। আমারও তোমার মত সুখি হওয়াটা খুব প্রয়োজন, এখন আর আমার একা থাকাটা বে-মানান, বিয়ে করে ব্যস্ত থাকার মধ্যে একটি সার্থকতা থাকে। সমাজে, পরিবারে একটি আলাদা মর্যদা পাওয়া যায়।
আমি চাইব যে আমার বিয়ে করা বউ জানুক যে আমার জন্মের পরে কোন মেয়েকে তেমন করে দেখা হয় নাই, কোন মেয়েকে জানা হয় নাই, হাতে হাত রাখা হয় নাই, কোন মেয়েকে কোন ওয়াদা করা হয় নাই এই প্রথম কোন একটি মেয়েকে নিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করালাম, একটি ভিন্ন মাত্রার জীবন কাহিনী শুরু করলাম।
সংসারে সুখি হওয়ার জন্য যদি অভিনয় করতে হয় আমিও তা করব, তুমি যেমন চেয়েছিলে আমি অভিনয় করে তোমার বরের সামনে আপনি আপনি করে কথা বলি। সংসারে সুখি হওয়ার জন্যে আমার ভবিষ্যত বউকে যদি প্রমান করে ছাড়ি কোন কালে কোন মেয়ের সাথে আমার ভালোবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না, আর এটা আমি প্রমানও করতে পারব, তবে মনে করি না এটা কোন ভন্ডামী হবে।
কেন জানি মেজাজটা বেশ বিগড়ে যাচ্ছে, তোমার বরের দিকে খেয়াল রেখো, তাঁকে ঘরমুখি করো, শাড়ীর আঁচলে বেঁধে রেখো, মনে কোন সন্দেহ রেখো না, আমি জানি তুমি খুব সুখি হয়েছো। এক দুই দিনের মধ্যে তোমার বরকে স্বপনে, জাগরনে, ঘরে, বাইরে তোমার চিন্তা চেতনায় তোমার একটি জগৎ তৈরী করে ফেলেছ। ভালো থেকো। সময় করে আমার হট মেইলে বাংলায় চিঠি দিও। পত্র দিও। ভালো থেকো, শরীরের যত্ব নিও। তোমার পরীক্ষা কবে জানাবে। আড়ং এ তোমার পছন্দের জামাটি দেখলাম। আমাদের আম গাছটিতে অনেক আম এসেছে। ভালো থেকো।
ইতি—
হলুদ বরণ
( চিঠি লেখা আয়োজনের চিঠি )
তারিখ : জুন ১৪, ২০১৪
রেটিং করুনঃ ,