আলো ব্লগ প্রিয় চিঠি আয়োজন ২০১৩ জন্য একটি চিঠি লেখার আশা আছে যেমন করে চিঠি আয়োজন ২০১২ জন্য একটি চিঠি লিখেছিলাম।
—————————————————————-
সুপ্রিয় হলুদ বরণ,
আজ তোমার বিবাহ বার্ষিকী, কাল সন্ধ্যা থেকে তোমাকে চিঠিটি লেখা শুরু করে সকালে তোমার অফিসে পাঠালাম, আর পাঠিয়ে তোমাকে একটি এস.এম. এস ও দিয়েছি।
তোমার বউ ও তোমাকে, তোমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা। তোমার বউকে নিয়ে তোমাকে সুখি দেখার শুভ-কামনা সব ছিল, আছে। আমার বাবুটার বয়স এখন আট মাস, একটু করে দাঁড়াতে পারে, আমার বর চার দিনের জন্য হংকংএ, বাবুর জন্য কান্না করে এমন একটি পুতুল কিনেছে আর সব নানান খেলনা।
তোমাকে এক সময় অনেক চিঠি লিখতাম, আর তুমি বলতে চিঠিতে গুছিয়ে কথা বলা যায়, এক চিঠি বার বার পড়া যায়, বইয়ের পাতায় লুকিয়ে লুকিয়ে, বাথরুমের দরজা বন্দ করে।
থাক সে সব কথা, একটি খুব গুরুত্ব পূর্ণ কথা তোমাকে বলা হয় নি বা তুমি ভাবেতেও পারবে না, কী একটি রোমান্চিত ঘটনা সেদিন ঘটে গেল আমার জীবনে। সেল ফোনে সে সব কথা বললে কথার পিঠে নানান কথায় অন্য প্রসংগ টেনে আমার বর্ণনার মোড় অন্য দিকে নিতে, যে ভাবে তোমাকে বলতে চাইলাম তা হয়তো বলা হত না তাই তোমাকে চিঠিতে লিখছি।
ঢাকা নিউ মার্কেটে যে বইয়ের দোকানে আমরা বই কিনতাম, বই কেনার ছলে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিতাম সেই দোকানটিতে তোমার বউকে দেখলাম। তিনি ক্লাসের বই কিনছিল, আমাকে কখনো তোমার ব্উকে দেখাও নি বা পরিচয় করিয়ে দাও নি, তাই নানান ছলে তোমর বউকে দেখলাম, তোমার বউকে ভাবিই বলি। ভাবির মাথার চুল থেকে, কোমড়, পা, পায়ের স্যান্ডেল সবই দেখলাম। মনে হলো ভাবিকে তুমি খুব সাজাতে ভালোবাস, সাজ-গোজ তোমর খুব পছন্দ আর যাকে সাজাতে ভালো মানায় তাকে সাজিয়ে ঘর আলো করে চাঁদের আলোতে পরী বানানো তোমার সখ। খুব সুখি হলাম যে তোমার সে সখ পূরণ হয়েছে।
আমিও বই কেনার ভান করে শুধু ভাবিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম, সত্যি বলছি আমি কোন তুলনা করি নি, প্রতি মানুষেই বিশ্ময়, একজন অসুস্থ শিশুকে মা যেমন গভীর পর্যবেক্ষণে সবই লক্ষ্য করে, প্রতিটি অংগ-প্রতংগ পর্যবেক্ষণ করে, আমিও ভাবিকে তেমন করেই পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এক জন মেয়ে হয়ে আমার চোখে আর একজন মেয়ে যে এত সুন্দরী হতে পারে !! ঘর আলো করা পরীর মত, একবার ইচ্ছা হয়েছিল ভাবীর পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত নরম হাত দুটি শক্ত করে চেপে ধরি। একটি নূতন সুঁতির শাড়িতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেহের পুরা গড়নটাই মনে হল আঁকা বাঁকা একটি নদী আর সে নদীতে স্রোতে ভেসে চলেছে সুখ আর সুখ। তোমার বউকে দেখে প্রাচীন গ্রীক একটি মীথের কথা মনে পড়ে গেল – হে নারী তোমার দেহে সৌন্দর্য দান করেছি এই কারণে যে এর বিপক্ষে তোমাকে সন্তান ধারণ করতে হবে, প্রায় বিশটা শরীরের হাড় ভাংগার মত তোমাকে প্রচন্ড কষ্ট আর কঠিন প্রসব যন্ত্রনা সহ্য করতে হবে। গর্ভের সন্তানের নিরাপদ অবস্থান, গর্ভে সন্তানের মোভমেন্ট ও সু-রক্ষার জন্য গর্ভের বিপরিতে তোমাদের নিতম্বকে করেছি পুরুষদের তুলনায় প্রস্থতঃ ও ভারি।
তুমি কখনো লক্ষ্য করেছো কিনা জানি না তবে ভাবির ওয়েষ্ট অনেক চিকন আর হিপ অনেক প্রস্থতঃ ও ভারি অনেকটা ওয়েষ্টার্ন মেয়েদের মত। তোমার বউকে অনেক গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণের একটি অধিকার আমি নিজেই করে নিয়েছি, তাই আমার বর্ণনার মত করে লিখছি, আজ তোমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে আমার বর্ণনার মত করে তোমার বউকে দেখ, দেখবে কিছুটা পুরাতনের মাঝে ভাবিকে নূতন করে আবিষ্কার করতে পেরেছ। জীবনকে একঘেয়িমী বানিয়ো না, প্রতিদিন একটি করে নুতন দিন, ক্ষণ আবিষ্কার করে নিও।
আমার মনে হলো ভাবি বেশ হিসাবি বেশ কয়েক বার ছোট্ট ব্যগটা থেকে এক বার পাঁচ শত টাকার নোট,এক বার এক হাজার টাকার নোট বের করল আবার গুছিয়ে ব্যগে রাখলো মনে হল ভাবি ভাবছে মাসের শেষ, সাবধানে টাকা খরচ করতে হবে। বার বার জানতে চাইছিল বইগুলির দাম কত হল, মনে হচ্ছিল বাজেট বার বার মিলাচ্ছে, ঘরের বউ হিসেবি হলে সংসার আরও সুখের হয়।
অনেক কথা হলো, আমার বরটা সত্যি খুব ভদ্র, কখনো জোড় গলায় কথা বলে না আমার কাছে মিনমিনে মনে হয়, বর কিছুটা রাগী ,মেজাজী না হলে সংসারে কি রোমান্চ থাকে !! মান অভিমান কথা বন্দ রাখা, দুই এক দিন না খাওয়া এ- সবই তো সংসারের অংশ। এখন বুঝতে পারি মেয়েরা আসলে কিছুটা রাগী বর পছন্দ করে আমার মনে হয় আমার কপালে তা জুটল না। শুনেছি যে সব প্রানীর শিং আছে যেমন হরিণ, গাভী এরা শক্ত গাছে বা শক্ত কিছুতে শিং চুলকিয়ে নেয়, নরম জায়গা শিং চুলকায়ে মজা পায় না ওরা যেমন ধর কলাগাছে। তাই নরম সরম বরের সাথে সংসার করে কেমন যেন নিরামিশ, পানসে জীবন যাপন করিছি, আমার সব কিছুতে ওর হ্য হ্য আমার মোটেই পছন্দ হয় না।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বরটা কি আমার সাথে ভন্ডামী করে !! বিয়ের আগে ও কি কখনও কোন মেয়ের দিকে তাকাই নাই ! কোন কথা বলে নাই !! হাতে হাত রাখা এসব কথা বাদই দিলাম, তবে ও কি অনেক কিছু ঢাকার চেষ্টা করে !! মাঝে মাঝে মনে হয় আমার কাছে ওর কিছুই চাওয়ার-পাওয়ার নেই, আমি তো বেশ বুঝি দাম্পত্ত জীবনে দম্পত্তিদের কত কিছু চাওয়া পাওয়ার থাকে !!
কোন রকম একটি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে একটি জীবন কাটিয়ে দেওয়াকে আমার কাছে কেন জানি জীবনকে জীবন বলে মনে হয় না, সকালে ঘুম থেকে উঠা, সকালের নাস্তা, বাবুকে কোলে নেওয়া, খাওয়ানো, বরের অফিসে যাওয়া, সন্ধ্যায় ওর বাসায় ফেরা, মাঝে মাঝে মার্কেটে যাওয়া, আত্মীয় স্বজনের বাসায় যা্ওয়া, রাতে খাওয়া, টুকটাক গল্প, ঘুমানো এ-সবকে জীবন বলে না। এ জন্য আমাদের জন্ম, বা সংসার পালনের কোন অর্থ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমার এ সব মনে হওয়ার কারণ – আমার কাছে মনে হয় আমার উচ্চ শিক্ষা। ভীতরের মন বলে আমার মধ্যে যে মেধা তা কাজে লাগানো হচ্ছে না, বড় হতাশ লাগে, আমি বন্দী হয়ে পড়েছি সংসারের বৃত্তে।
হা হা হা, আর একটি কথা বলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক জায়গায় লিখেছেন মেয়েরা হচ্ছে শূণের মত বা শূণ্য ( ০) আর ছেলেরা সংখ্যায় এক (১) । যখন কোন ছেলের পিছনে মেয়ে বা বরের পিছনে কনে থাকে তখন সংখ্যার মান হয় দশ (১০)। কিছুতেই একের আগে শূণ্য বসানো যায় না আর বসাতে গেলে একের আগে একটি দশমিক বসাতে হয় তখন সংখ্যার মান হয় দশ ভাগের এক ভাগ (০.১) । আমি বাংগালী মেয়ে, বাংগালী পরিবেশে বড় হয়েছি, বাংগালী মতাদর্শের। আমি আমার বরের পিছনেই থাকতে চাই সংসারের মান দশে রাখতে চাই, দশমিক বসিয়ে বরের আগে থেকে সংসারকে দশ ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনার ইচ্ছা আমার অন্ততঃ নেই।
এ কথাগুলি তোমাকে বলা কি খুব বেশি প্রয়োজনীয় ছিল !! মনে হয় এ কথাগুলি কাউকে বলার মানুষ পাই নি বলে তোমাকে বলা। এখন মনে হয় এ পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে – সব মানুষকে সব কথা বলা যায় না, আর মন দিয়ে বানানো মানুষ হয় একজনই।
তোমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে আমার অন্তর থেকে শুভেচ্ছা তোমাদেরকে। বাসার দাড়োয়ান দিয়ে তোমার অফিসে তোমাকে চিঠি পাঠালাম, তোমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে তুমি অনেক বড় আয়োজন করবে তোমাকে সেই সাহসও দিলাম। অনেক ভালো কাটবে তোমাদের এই দিনটি, ফুল দিয়ে ঘর সাজাবে,পরীর মত ঘর আলো করা, নরম হাতের সেই মোমের মত সেই মানুষের সাথে বিছানায় বসে অনেক কথা বলে যাবে কোন কিছু না ভেবে।
ইতি —
তোমার হলুদিয়া।
তারিখ: জুন ১১, ২০১৩
রেটিং করুনঃ ,