দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি।
শনিবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে উল্লেখ করে এনামুর রহমান বলেন, ‘ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। যে কারণে আমাদের দেশে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। মঙ্গল ও বুধবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানি কমতে শুরু করবে। তবে ওই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের বন্যায় সিলেটের ৬০ শতাংশ প্লাবিত হয়েছে। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জের ৮০-৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। তিনি বলেন, গত দুই দিনে চার ফুট করে আট ফুট পানি বেড়েছে ওই এলাকায়, যা চিন্তাতীত।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী একসঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, শনিবার (১৮ জুন) রাতের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের তহবিলে ৮০ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে চিড়া, মুড়ি,বিস্কুটসহ শুকনা খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দুই এলাকায় দেড় হাজার টন চাল পাঠানো হয়েছে। হাতে ৫ কোটি টাকা রয়েছে, আরও ২০ কোটি টাকা সাধারণ ত্রাণ (জিআর) তহবিল থেকে চাওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের পাহাড়ি ঢলে আবারও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সুনামগঞ্জের পর সিলেটও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানির উচ্চতা বাড়ায় বিদ্যুৎ বিতরণের উপকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এসব কথা জানিয়েছে।
পিডিবির পরিচালক সাইফুল হাসান বলেন, পানির উচ্চতা বাড়ায় সিলেটে বিদ্যুৎ বিতরণের উপকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় দফার বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট অঞ্চল। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হুহু করে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা। শহরতলিতে অবস্থিত এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
সিলেটের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুতের খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রায় দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ১৮, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,