লেখক: মহিউদ্দিন।
রাশিয়ার কোম্পানি গাজপ্রমকে দিয়ে দেশে একটি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করতে ১৮০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর একটি অনুসন্ধান কূপে মাত্র ৭৫ কোটি টাকা খরচ করে সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। এখান থেকে যে পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, তার বর্তমান বাজারমূল্য ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
বাপেক্সের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ২০১৬-১৭ সালে জকিগঞ্জ এলাকায় ১০৩ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালায় বাপেক্স। ওই প্রকল্পে বাপেক্সের খরচ হয় ৩ কোটি টাকা। এতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় অনুসন্ধান কূপ খননের প্রস্তাব তৈরি করে তারা। এতে ৮৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা থাকলেও বাপেক্স খরচ করেছে ৭৫ কোটি টাকা। সব মিলে জকিগঞ্জে ৭৮ কোটি টাকা খরচ করেছে বাপেক্স।
বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট (হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম ৩ মার্কিন ডলার ধরে (২৬৬ টাকা) বাজারমূল্য হিসাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৩ ডলার দরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি হচ্ছে।
বাপেক্স বলছে, জরিপের পর জকিগঞ্জে শুরুতে ১৫ হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। গত ১ মার্চ এখানে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু হয়। ৭ মে খননকাজ শেষ হয়। এতে চারটি স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনটিতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। একটি স্তরে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনের মতো গ্যাস পাওয়া যায়। এখানে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ৭০ শতাংশ উৎপাদন বিবেচনায় এখান থেকে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা যাবে। দিনে ১ কোটি ঘনফুট উৎপাদনের মাধ্যমে আগামী ১০ থেকে ১২ বছর জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা আছে।
দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে গতকাল সোমবার জকিগঞ্জের নাম ঘোষণা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে এ ঘোষণার পর তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, অনুসন্ধানের জন্য বাপেক্সকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে।
বাপেক্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, জকিগঞ্জ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা। সীমান্তের ওপারে আসামের করিমগঞ্জে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই যত দ্রুত এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে, ততই ভালো। ইতিমধ্যে এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প নিতে নির্দেশনা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এখানে ৩৫ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করতে হবে।
বাপেক্স এ পর্যন্ত ১৬টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। আরও একটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। দেশের স্থলভাগে এখন এককভাবে কাজ করছে বাপেক্স। গত এক বছরে বাপেক্সকে শক্তিশালীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এখন একসঙ্গে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে তারা। আগামী তিন বছরে অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বাপেক্স।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক প্রকল্পের চাপ আছে ঠিক, তবে এতে সমস্যা হবে না। জনবল বাড়ানো হচ্ছে। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে অনুসন্ধান করার সরকারি নির্দেশনা নিয়ে কাজ করছে বাপেক্স। করোনার মধ্যেও গত এক বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে এখন প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ করা হচ্ছে ৩৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এ হিসেবে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সরবরাহ সক্ষমতা ১৫ দিনের মোট জাতীয় সরবরাহের সমান। তবে জকিগঞ্জে আরও বেশি এলাকাজুড়ে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ এবং আরও তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাপেক্স। এর ফলে আরও বেশি গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, একটি চক্র বিদেশি কোম্পানির হাতে কাজ দিতে চায়। বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র ভোলায় গাজপ্রমকে কাজ দেওয়া সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হলে কম খরচে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। তাই বাপেক্সের কাজ আরও বাড়ানো উচিত।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: আগষ্ট ১০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,