সামরিক আদালত সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে (১৯৭৫ সালের পর) একটা ক্যু হয়েছিল। প্রতিটি ক্যুতে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল। তার নির্দেশে প্রহসনের বিচারের জন্য সামরিক আদালত বসানো হয়েছিল। কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন তার প্রকৃত সংখ্যা বের করা যায়নি।’
যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন (কপ ২৬) ও ফ্রান্স সফর নিয়ে বুধবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতের প্রসঙ্গ নিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।
সামরিক আদালতে নিহত পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময় আমার ফুফাতো ভাই ফিরোজ কবির চৌধুরী, যিনি ক্যামেরাম্যান ছিলেন, তাকেও হত্যা করা হয়। ওই সময় তাদের হত্যা করে বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। জেলখানায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের হয়ত খোঁজ পাবো। কিন্তু কত জনকে যে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে, জানি না। তবে আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিবো। স্বজনদের হারিয়ে অসহায়দের অবস্থা আমি জানি। আমিও তো আপনজন হারিয়েছি।’
এসময় শেখ হাসিনা জানান, ওই সময়ে নিহত অনেকের পরিবারের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের এত বছর পর সেই সামরিক আদালত নিয়ে সরব হয়েছেন নাগরিক ব্যক্তিত্বরা।
তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ব্যাপারটা তো এত দিন কেউ তুলে ধরেনি। তবুও ধন্যবাদ, এত দিন পরে কথা হচ্ছে।’
ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের কারণে সংঘাতের অভিযোগ ঠিক নয়: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় প্রতীক দেওয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত হচ্ছে- কথাটি ঠিক নয়। তবে কোনো সংঘাত গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘কোথাও কোথাও সংঘাত হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক দিয়েছে। নির্বাচন মেম্বার পদেও হচ্ছে। তাদের মধ্যেও মারামারি হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য দলও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও তাদের প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সুতরাং দলীয় প্রতীক দেওয়ার কারণে সংঘাত হচ্ছে- কথাটি ঠিক নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেউ কোনোভাবে সংঘাতে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের বন্দরনগরী গ্লাসগো, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন এবং ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সরকারি সফর করেন। দুই সপ্তাহের এই সফরে ৩১ অক্টোবর গ্লাসগো পৌঁছান তিনি।
সেখানে ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের (কপ২৬) উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মূল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন এবং স্কটল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সফরকালে ৩ নভেম্বর গ্লাসগো থেকে লন্ডন পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে একটি রোড শো উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এছাড়া লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
৯ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখানে এলিসি প্রাসাদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোনের সঙ্গে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। ১৩ নভেম্বর ফ্রান্স থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে ১৪ নভেম্বর সকালে ঢাকায় পৌঁছান শেখ হাসিনা।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ নভেম্বর ১৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,