ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ছুটি দেওয়া বেশির ভাগ কারখানা আজ বৃহস্পতিবার চালু হয়েছে। এদিকে আজ সকালে কয়েকটি কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এ সময় মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেডে, টাউজার লাইন লিমিটেড, নাসা গ্রুপের কয়েকটি কারখানা আবারও ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে হা-মীম গ্রুপের ফটকে ভাঙচুর করার চেষ্টা করা হলেও কারখানা চালু রয়েছে।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় তিন-চারটি কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনকে আটক করা হয়েছে।
সড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান
এদিকে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে আশুলিয়ায় বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিকেরা টিফিট ভাতা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করা, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা দাবিতে কারখানা–সংলগ্ন নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আশুলিয়ার জিরাবো থেকে নরসিংহপুর এলাকায় আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল সড়কের পাশের বিভিন্ন কারখানা–সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতা–কর্মীদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের হাতে ‘দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি, গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করি’ লেখা লিফলেট দেখা যায়।
আশুলিয়ার বেরন এলাকায় অবস্থানরত আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গার্মেন্টস সবার সম্পদ। আমাদের সবার দায়িত্ব এগুলো রক্ষা করা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই শিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এগুলো রক্ষায় মাঠে আছি, থাকব।’
সকাল ৯টার দিকে নরসিংহপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন শ্রমিক জানান, সকালে কাজ শুরু হলেও সাড়ে ৮টার দিকে বাইরে থেকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল কারখানা লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে এবং ফটকের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। পরে কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে।
একই এলাকার শারমিন গ্রুপের কারখানার সামনে থেকে কারখানায় হামলার অভিযোগে স্থানীয় লোকজন দুজনকে আটক করে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর কাছে হস্তান্তর করেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই এলাকার হা-মীম গ্রুপের কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছেন বিক্ষোভকারীরা। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। তখন উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়েকজনকে ধরে পিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেন। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া তৈয়বপুর এলাকায় নাসা গ্রুপের একটি কারখানা ও ট্রাউজার লাইন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
ট্রাউজার লাইন লিমিটেডের শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, সরকারি গেজেট অনুসারে তাঁদের বেতন, ছুটিসহ অন্যান্য ভাতা দেওয়া হয় না। সরকারি গেজেট অনুসারে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক। যৌক্তিক দাবি জানালে শ্রমিকদের মারধর করে সন্ত্রাসীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পলাশবাড়ী এলাকায় পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে এসে দেখা যায়, শ্রমিকেরা টিফিন ভাতা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করা, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা দাবিতে কারখানা–সংলগ্ন নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত ২৫
এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভের সময় কারখানায় হামলা, ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের আশুলিয়ায় নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ জনের মতো রোগী এসেছে। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়ায় আজ অধিকাংশ কারখানায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হয়েছে। আল মুসলিম, নিউ এইজ বন্ধ রয়েছে। অনন্ত গার্মেন্টস অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করতে না পারায় এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি। নিউ এইজ ও মেডলার কারখানায় কাজ শুরু হলেও পরে ছুটি দেওয়া হয়।
সারোয়ার আলম আরও বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে আগে থেকে ছুটি ও বন্ধ থাকা শিল্প কারখানার সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০। গত কয়েক দিনের বিক্ষোভের কারণে কিছু কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এর তিন-চারটি ছাড়া বেশির ভাগ কারখানা চালু হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: সেপ্টম্বর ০৫, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,