Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সম্ভব না থেকে অপার সম্ভাবনা (২০২২)

Share on Facebook

একে তো বৈরী নদী, তার ওপর টাকার টানাটানি। প্রশ্ন ছিল, কীভাবে নির্মাণ হবে পদ্মা সেতু? জবাব ছিল, সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। শত বাধা পেরিয়ে অসম্ভবকে জয় করে সেই ‘সম্ভব না’ শব্দগুচ্ছকে হারিয়ে প্রমত্ত পদ্মার ওপর নির্মিত হয়েছে অপার সম্ভাবনার সেতু।

পানিপ্রবাহে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী পদ্মা। পদ্মায় গত দুই যুগে যত পানি গড়িয়েছে, সেতু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, বিতর্ক তার চেয়ে কম হয়নি। রাজনীতিতে বারবার ঝড় তুলেছে। সব ঝড়ঝাপ্টা জয় করে খরস্রোতা পদ্মায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে এ সেতু।

পদ্মাসেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। এই সেতু দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

সবচেয়ে বড় সংশয় ছিল, এত বড় সেতু বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পারবে কিনা। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হালের লেবুখালীর পায়রা সেতু- সব বড় অবকাঠামো নির্মাণে ছিল বিদেশি ঋণ, অনুদান এবং পরামর্শ। ঋণের শর্ত মেনে বিদেশি প্রকৌশলী ও পরামর্শকদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে এসব সেতু।

টাকার চাপ মোকাবিলা :সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মায় সেতু নির্মাণে ১৩টি চ্যালেঞ্জ ছিল। তাদের মতে সবচেয়ে বড় চাপ ছিল, অর্থায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার জোগান। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখা ছিল বিশাল চাপ। এ কারণেই মনে করা হয়েছিল নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার জোগান ঠিক রাখা সবচেয়ে বড় চাপ ছিল। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তার কারণে কখনোই সংকটে পড়তে হয়নি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা হয়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে। প্রকল্পের অনুমোদনের সময়ও ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। সেই টাকা জোগাড়েই দাতাদের কাছে ঋণ চাইতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজ টাকায় এর তিনগুণ ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ।

নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ হলেও ঠিকাদারের বিল ও সেতুর যন্ত্রাংশ আমদানি ব্যয় ডলারে মেটাতে হয়েছে। গত ৯ বছরের বাজেটে প্রতিবছর পদ্মা সেতুর জন্য তিন থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হলেও সেই টাকায় শুধু বেতন-ভাতা ও দেশীয় বাজার থেকে কেনাকাটার ব্যয় মেটানো হয়েছে। একটি মাত্র প্রকল্পে প্রতিবছর বাজেটে এত টাকা বরাদ্দ রাখাকে অসম্ভব ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাধা বলা হয়েছিল। এই চাপ গত আট বছর সইতে হয়েছে দেশের অর্থনীতিকে।
২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিস্তারিত নকশাসহ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট খরচ ৩০ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। নকশার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে পৌনে দুই কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সেতু বিভাগ। সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এত ব্যয়ে সেতু নির্মাণের সমালোচনা ছিল। একে বিলাসী প্রকল্পও বলা হচ্ছিল। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে প্রতিদিন ৪১ হাজার ৫৫০টি যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার হবে। সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ১৮ বছরেই যানবাহনের টোল থেকে উঠে আসবে পদ্মা সেতুর সমুদয় নির্মাণ ব্যয়। ৩৫ বছরে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি আসবে টোল থেকে। ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণ লাভজনক হবে দেশের জন্য।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর কারণে বছরে ৬৮০ কোটি টাকা পরিবহনে সাশ্রয় হবে। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে এ সেতু।
রাজনৈতিক চাপ :দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তি বাতিল করে ২০১২ সালে। সরে যায় সহ-অর্থায়নকারী জাইকা, এবিডি ও আইডিবি। দুর্নীতির অভিযোগ তখন দেশের রাজনীতিতে ভূমিকম্প সৃষ্টি করেছিল। ঋণদাতাদের চাপে সেই সময়কার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধেও। প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুর্নীতির মামলায় জেলে যান সেই সময়কার সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। দুর্নীতি তদন্তে দুদকও মাঠে নেমেছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরাও এসেছিলেন তদন্তে।

আওয়ামী লীগকে দুর্নীতির এই অভিযোগে প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয় রাজনীতিতে। তখনও অভিমত এসেছিল, পদ্মা সেতু আর হবে না। বিরোধী দল, বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের প্রবল সমালোচনায় তখন জেরবার ছিল সরকার। আবার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে সেতু নির্মাণেরও চাপ ছিল। এই উভয় সংকট কাটাতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের চাপ নিতে হয়। শুরুতে এটা অসম্ভব মনে হলেও, ধীরে ধীরে স্বপ্নের সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়েছে। এ সেতু নির্মাণের জন্য প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নদী ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ :নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ নিলেও বড় বাধা ছিল পদ্মা নদী নিজেই। পদ্মাকে বশ মানিয়ে সেতু বানাতে প্রায় সাত বছর লেগেছে। কখনও তীব্র স্রোত, কখনও ভাঙনের মতো খামখেয়ালি বারবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এককভাবে এত বড় প্রকল্প নির্মাণের অভিজ্ঞতাই ছিল না বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখিয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণে। কিন্তু পদ্মার উত্তাল রূপ দেখে এখানে সেতু নির্মাণ অসম্ভব মত দিয়ে চলে যায় তারা। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও আশঙ্কা করেছিলেন, পদ্মা সেতু হবে না।

কিন্তু বিদেশি পরামর্শকদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নির্মাণকাজ শুরু হয় মাওয়া প্রান্তে ছয় নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের মাধ্যমে।

মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, পাইল ড্রাইড শুরুর পর হতবুদ্ধি হয়ে যান তাঁরা। ৬০ মিলিমিটার পুরো স্টিলের পাইল পাইপ ১২২ মিটার গভীরে ঢোকানোর পরও মিলছিল না পাথরের স্তরের। নদীর অত গভীরেও কাদামাটির কারণে পাইল দেবে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এর সমাধান না হলে সেতু ধসে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এই বাধা জয় হয় বিদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের প্রকৌশল জ্ঞানে। পাতালে মিহি সিমেন্টের জমাট বাঁধানো ভিত্তিতে গড়ে ওঠে পদ্মা সেতু।
আবদুল কাদের প্রায় ১৬ বছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছেন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষও মনে করতেন সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তারা বলতেন, এ সেতু হবে না। ২০১৭ সালে স্প্যান স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত এ কথা শুনেছেন তিনি। তবে সেতু যত দৃশ্যমান হয়েছে- মানুষের মনোভাবও তত বদলেছে।

বর্ষার তিন মাস বন্যায় আর শীতের দুই মাস ঘন কুয়াশায় পদ্মা সেতুর কাজ বারবার ব্যাহত হয়েছে। পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য পানিবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, পদ্মায় বর্ষায় স্রোতের গতি সেকেন্ডে চার থেকে সাড়ে চার মিটার। স্রোতের তোড়ে ইস্পাতের শিকল ছিঁড়ে মাঝনদীতে সেতুর মালপত্রসহ রাখা বার্জ ভেসে গেছে। থরথর করে কাঁপত বার্জ।

করোনা মহামারির কারণে বিদেশ থেকে মালপত্র আনা এবং বিদেশি জনবলের আসা-যাওয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে আকস্মিক ভাঙনে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড সংশ্নিষ্ট এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ১২৬টি রোডওয়ে ডেক স্ল্যাব এবং ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিঞ্জারসহ কয়েক কোটি টাকার মালপত্র নদীতে চলে যায়।

প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, চোখের পলকে মালপত্র টেনে নিয়ে যায় পদ্মা নদী। মালপত্র উদ্ধারে ক্রেন দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল; বরং ক্রেন বাঁচাতে মালপত্র বাঁচানোর আশা বাদ দেওয়া হয়। এমন দানবীয় নদীর সঙ্গে লড়াই করে নির্মিত পদ্মা সেতু অসম্ভব জয় করার এক রূপকথা।

সূত্র: সমকাল।
তারিখ: জুন ২৪, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ