Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সন্তানের চাহিদা বেড়ে গেলে (২০১৬)

Share on Facebook

লেখক: সুলতানা আলগিন

ঘরেই বেড়ে উঠছে ওরা সবার অজান্তে ও অবহেলায়। এই প্রজন্মের কেউ কেউ যেন অচেনা, অদেখা ও অপরিচিত। যখনই বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে; তখন তোলপাড়, সমালোচনার ঝড়। একজন মাদকাসক্ত সন্তান যখন তার মা-বাবার হত্যায় অংশ নিতে দ্বিধা করে না—সেটা জেনে গোটা সমাজ আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল। এবার এক ছেলে তার বাবা-মাকে অবলীলায় আগুনে পোড়াল নতুন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের জন্য। দগ্ধ বাবাও শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন।

কেন এমন ঘটছে? এটা কি বহুল আলোচিত প্যারেন্টিংয়ের সমস্যা। আমরা কি দরকারি দেখাশোনা করতে পারছি না প্রিয় সন্তানের! সন্তান যখন জন্ম নেয়, পুরো পরিবার যেন আলোয় ভরে ওঠে। আত্মীয়স্বজন, মা-বাবা আনন্দের বন্যায় ভেসে যান। সেই সন্তানই যখন বৈরী কিংবা বেপরোয়া—তখন তা সবার দুঃখ-বেদনার উপলক্ষ।
সমাজে, সংসারে এমন সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুব বেশি ঘটছে না ভেবে মুখ ফিরিয়ে থাকার উপায় নেই। বরং সাবধানতা দরকার।

সন্তান লালনপালন মানে প্যারেন্টিংয়ের সমস্যা তো আছেই। কেউ কেউ বলছেন, ‘এত দিন নেননি কেয়ারিং; সন্তান তাই মস্ত ডেয়ারিং।’ কারও মতে, আগে পরিবার বড় ছিল। দেখাশোনার সুযোগ বেশি ছিল। এখন ছোট পরিবার মানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সন্তান বড় হচ্ছে ফ্যামিলি ফার্মে। অনেকে দুষছেন অযাচিত অর্থ প্রাচুর্যকে। সন্তান যা চাইছে তা-ই পাচ্ছে। চাহিদার ফর্দ বেড়েই চলেছে। সে বুঝতেই পারছে না—কোনটা চাওয়া উচিত, কোনটা নয়। সে জানে না, কতটুকু চাওয়া যায়।

ফরিদপুরের ছেলেটিকে গণমাধ্যমের তথ্যমতে, পাঁচ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু তাতে মন ভরেনি। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল আরও নতুন কিছু। এই যে অদম্য বাসনা—বহু দামি একটা বাইক পেয়েও অপ্রাপ্তির অসুখ—এ জন্য শুধু সন্তানদের দোষারোপ করলে চলবে না। অভিভাবককেই নিতে হবে গুরুদায়িত্ব।
একটি শিশু কোমল মাটির মতো। তার মনোজগৎ যেভাবে গড়ে উঠছে, পরবর্তী জীবনে সেটাই হবে তার জীবনযাপনের নিয়ন্ত্রক।
গুড প্যারেন্টিং

গুড প্যারেন্টিং কাকে বলে! ভালো মা-বাবা বা অভিভাবকই বা কে। কাজটা খুব কিন্তু কঠিন নয়। সময়ে করলে সহজ। বলা হয়েই থাকে, সন্তানের পেছনে ঠিক সময়ের পরিশ্রমে মিলবে সুফল। অবহেলায় মিলবে কান্না।
* সন্তানকে দিন আত্মবিশ্বাস। যেকোনো সমস্যা, বৈরী পরিবেশ সে যেন মোকাবিলা করতে পারে।
* তাকে ধৈর্যও শিক্ষা দিন। প্রতিটি পদে হতে হবে স্থিতিশীল। তাকে দায়িত্বশীলতা সুশিক্ষা দিতে হবে।
* শুধু নিজের জন্য বড় হওয়া নয়, বড় হতে হবে সবার জন্য। শুধু নিজের কল্যাণ বা আত্মপ্রেম নয়। তাকে পরিবারের সবার দেখভালের জন্য যোগ্য হতে হবে। শুধু মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন তাকে ভালোবাসা-আদর দেবে, তা নয়। ছোটবেলা থেকেই সন্তানের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও দায়িত্ব নেওয়ার মনোভাবটি গড়ে দিতে হবে।

* সে যেমন সবার ভালোবাসা পাচ্ছে, বিনিময়ে সে-ও যেন সবাইকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি দেখায়। তাকে জানতে হবে—তার প্রতি যেমন মা-বাবা, আত্মীয়দের দায়িত্ব-কর্তব্য আছে, তেমনি তারও সবার প্রতি কর্তব্য আছে। সেটা যেন ভুলে না যায়।
* সন্তান যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে বড় না হয়। তার মধ্যে সবার সঙ্গে মিলেমিশে বেড়ে ওঠার সদিচ্ছা থাকা চাই।
* সন্তানের আত্মসচেতনতা, স্বাতন্ত্র্য থাকবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই অন্যের জন্য যেন বিব্রতকর না হয়।
* নিজের সুরক্ষার ব্যাপারে সদা হুঁশিয়ার হবে। একই সঙ্গে অন্যের জন্য যেন ক্ষতিকর না হয়।

গুণীজনেরা বলেন
মনস্তত্ত্ববিদ জেমস লেম্যানের মতে, ‘সন্তানের সামনে আপনিই রোল মডেল। আপনিই তার হিরো। আপনার মাঝেই সে খুঁজছে নিজেকে। কাজেই মডেল হিসেবে আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে প্রখর সজাগ থাকার কোনো বিকল্প নেই।’
প্রবাদ আছে—শিশু-কিশোরেরা উপদেশ শোনার ক্ষেত্রে কান বন্ধ রাখে। কিন্তু দৃষ্টান্ত যখন দেখে, তখন দুই চোখ খুলে রাখে।
জনপ্রিয় অভিনেতা বিল কসবি তাঁর সেরা বাবার স্মৃতিচারণে বলেছেন, ‘তিনি আমাকে উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করতে নিরুৎসাহিত করতেন। পাশাপাশি সুন্দর যুক্তি নিয়ে উচ্চকিত হতে উৎসাহিত করতেন।’
মার্কিন চিকিৎসক ও লেখক মেগ মিকার বলেন, প্রত্যয়ী মা-বাবা সন্তানের সামনে কঠিন কাজটি সুসম্পন্ন করে দেখান। অতঃপর সেই কাজে অংশ নিতে সন্তানকে আহ্বান করেন।
যে পদক্ষেপ জরুরি
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাটি আমরা সবাই স্মরণ করি—শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে।
* সন্তানকে আদর-সোহাগ, ভালোবাসা বাবা-মায়ের স্বাভাবিক আবেগ। কিন্তু আদরের বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। সন্তানের সমৃদ্ধ মনোজগৎ গঠনে নজর দিন। সত্য, সুন্দর, কল্যাণের সপক্ষেÿযেন সে বেড়ে ওঠে।
* বিলাসিতা, দেখানেপনা বনাম উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি যেন ছোটবেলা থেকেই শিখতে পারে। বিলাসিতার পথে সন্তানকে ঠেলে দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাকে কর্মের মাধ্যমে অর্জনে সহায়তা করুন।
* তার যেটুকু দরকার, সেটুকু দিন। তার সুখ-আরামের কথা ভেবে অপ্রয়োজনীয় অঢেল তাকে দেবেন না।
* নম্রতা, শিষ্টতা, ভব্যতা, সদাচরণ শিক্ষা এখন আর স্কুলে শেখানো হয় না। এই শিক্ষা পরিবার থেকেই পেতে হবে।
* কর্মজীবনে সে যেন কল্যাণকর কোনো লক্ষ নির্ধারণ করতে পারে, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করুন।
* সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিল্পমনস্ক মনোজগৎ মানবচিত্তকে সুস্থির ও সুস্থ রাখে। সন্তানকে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হতে দিন। শিল্পকলা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, অভিনয়, খেলাধুলা, বিতর্ক, বক্তৃতা—যার যেমন আগ্রহ, সেটা বেছে নিতে দিন। হতে পারে এটা তার মৌলিক পেশার ভিত্তি। আবার হতে পারে এসব তার বাড়তি যোগ্যতা ও মানসিক শক্তির অফুরন্ত জোগান।
* উগ্র কোনো মতবাদ, বদ্ধ ও অনগ্রসর চিন্তা থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন।
* তার মধ্যে আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস, প্রত্যয়, স্বনির্ভরতা জাগিয়ে তুলুন। সে যখন একজনকে সম্মান করবে, মর্যাদা দেবে; সে-ও সম্মান-মর্যাদা পাবে।
* বয়ঃসন্ধিকালে তার মধ্যে নানা পরিবর্তন আসবে। এ সময় তার পাশে থাকুন।
* নিজের মতকে তার ওপর চাপিয়ে না দিয়ে তার মতামতকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার মতামত রাখুন। আলোচনার মধ্য দিয়ে ভালো-মন্দকে তুলে ধরুন।
* সন্তানের বন্ধুদের সন্তানের স্নেহে দেখুন। তাদের ভালো-মন্দ বিবেচনায় নিন। কোনো বাজে সংসর্গে লিপ্ত হলে তাকে বুঝিয়ে পথে আনুন।

* বেড়ে ওঠার দিনগুলোয় একটি শিশু তার চারপাশে আদর্শ বা আইডল খোঁজে। মা-বাবা, নিকটাত্মীয়দের মাঝেই সন্ধান করে। সঠিক আদর্শ যাতে খুঁজে নেয়, তাকে সহায়তা করুন।
* তার সামনে জগতের মহৎ মানুষগুলোকে তুলে ধরুন। তাঁদের জীবনীপাঠে উৎসাহ দিন। ওদের চোখের সামনে যেন কল্যাণী মানুষের ছবি তৈরি হয়। এই ছবিই তাকে বড় হওয়ার দিশা দেবে।
* সন্তানের মানসিক দুর্যোগে আশা হারাবেন না। তার পাশে থাকুন। সে যে আপনারই প্রতিচ্ছবি। ওই বয়সে সমস্যা মোকাবিলায় আপনি যে পথ অনুসরণ করেছেন, তাকেও সেই পথের দিশা দেখান।
সন্তানকে কোনো রকম প্রলোভন দেখাবেন না। ভালো ফল বা কোনো কাজে তাকে উদ্বুদ্ধ করতে লোভের জাল বিছাবেন না। সে জানুক, যা কিছু মানুষের প্রাপ্তি, তা কর্মের কারণে। অলৌকিকভাবে কিছু হয় না। শর্টকাট বলতে কিছু নেই। শ্রম, অধ্যবসায়ই সব অর্জনের মূল চাবি।
প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার কথাটি অনেকেরই স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। সন্তানকে ভালোবাসা দিন। তার চেয়েও বেশি করে সন্তানকে ভালো হওয়ার সুশিক্ষা দিন।

সুলতানা আলগিন : সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ( 09/28/2016 )

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

নভেম্বর ২২, ২০২৪,শুক্রবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ