জীবনে সঞ্চয় একটি বড় বিষয়, সহজ কথায় সঞ্চয় বলতে প্রথমতঃ অর্থ সঞ্চয়ের কথা বুঝায়। সঞ্চয়ের অনেক রূপ থাকে বয়স সঞ্চয়ও একটি সঞ্চয়ের ধরণ।
অর্থ সঞ্চয়ের কথায় আসি, দরিদ্র ও ধনিক শ্রেনী থেকে শুরু বরং মধ্যম শ্রেনীর মধ্যে অর্থ সঞ্চয় প্রবণতা বেশি। আয়ের একটি বড় বা খুব সামান্য অংশ মানুষ সঞ্চয় করে আবার অনেক হত দরিদ্র মানুষের সঞ্চয় করা হয় না, সামর্থ থাকে না বা সঞ্চয় প্রবনতা মনের মধ্যে আসে না।
সঞ্চয় করার অনেক ধরণ – কারও সঞ্চয়ের প্রবণতা অনেক বেশি, কেউ খুব স্বাভাবিক আবার কেউ সঞ্চয় বিষয়ে উদাসীন। জীবনের প্রথম ভাগে যারা একটি দারিদ্রতা পরিমন্ডলের মধ্য দিয়ে দিন কাটায় বেশি ভাগ ক্ষেত্রে তারা সঞ্চয়ের প্রতি বেশি যত্নশীল, সঞ্চয়ের প্রবণতা বেশি। তারা বর্তমান জীবনের কিছু চাহিদা পূরণ না করে সঞ্চয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয় এবং অবশেষে তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশ সমৃদ্ধ হয়।
সঞ্চয় একটি শক্তি, জীবন যাপনকে সহজ করে, মনে শক্তির সঞ্চার ঘটাতে থাকে মনে আত্ম-বিশ্বাস জন্মায় অবশেষে সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়।
আবার যাদের সঞ্চয়ের প্রবণতা অনেক বেশি তাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবন যাপনকে অনেক দরিদ্র রেখায় নিয়ে আসে, জীবনের অনেক সুখ আনন্দ আল্লাদকে বিসর্জন দিয়ে কেবল ভবিষতের দিকে তাকিয়ে থাকে, এই ধরণের জীবনের কোন সার্থকতা থাকে না ভবিষৎ সুখের ও নিরাপদ জীবনের পরিবর্তে নিয়ে আসে এক বিপদ সঙ্কুল জীবন। ধরা যাক অর্থ সঞ্চয়ের প্রবণতার কারণে শরীরের কোন চিকিৎসা না করে হঠাৎ করে বড় একটি শারীরিক সমস্যার মধ্যে পরে যাওয়া। অন্য দিকে সঞ্চয়ের প্রবণতা না কারণে কোন সঞ্চয় না থাকায় বড় ধরণের বিপর্যয় থেকে উদ্ধারে রাস্তা বন্দ থাকা।
সব দিক বিবেচনা করে এক দল মানুষ আছে তারা বর্তমান ও ভবিষতের কথা চিন্তা করে নানান ভাবে সঞ্চয়ের হিসাব করে খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সঞ্চয় করে থাকে, এমন কি পরিস্থিতি বুঝে সঞ্চয়ের প্রবনতা বাড়িয়ে দেয় বা কমিয়ে দেয়।
জীবনের শুরু থেকে যারা এক ধরণের প্রাচুর্যের মধ্যে থেকে বড় হতে থাকে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবনতা কোন কাজ করে না, তাদের ধারাণ যে অর্থ সম্পত্তি আছে তা ভোগ করে শেষ করা যাবে না অযথা কেন আবার সঞ্চয় ভাবনা নিয়ে অর্থ সম্পত্তির পরিমান বাড়ানো ! একদিক দিয়ে ধারণা সঠিক হলেও জীবন যাত্রা গতি বিপরীত মূখি হলে অর্থ সম্পত্তির মধ্যে নানান ধরণের ছিদ্র তৈরী হয়ে খুব দ্রুত সময়ে অর্থ সম্পত্তি শূণ্যের খাতায় দাঁড়িয়ে আবার ঋণও বাড়ায়।
সঞ্চয় শুরু করার কোন সুনিদৃষ্ট বয়সসীমা না থাকলেও ছোটবেলা থেকে সঞ্চয়ের প্রবনতা মনের মধ্যে থাকলে জীবনের মধ্য সময়ে সঞ্চয়ের পরিমান সমৃদ্ধ হয়, জীবনের বাকি সময়টা পরিকল্পনা মত চালানো যায়। জীবনের শুরুতে যদি দশ হাজার টাকা ব্যয় না করে ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখা যায় তা বেশ কয়েক বছর পরে এক লক্ষ টাকায় পরিণত হয়।
ছোটবেলা থেকে অধিক সঞ্চয় প্রবনতা জীবনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা হয়ে কাজ করে, সঞ্চয় প্রবনতার কারণে একটি কম্পিউটার কেনা হলো না, একটি স্মার্ট মোবাইল কেনা হলো না, দেশে বা বিদেশে ভ্রমণ করা হলো না ভবিষৎ সঞ্চয়ের আশায় এখানে যে ক্ষতিটি হয় পরবর্তিতে সঞ্চয়ের টাকা ভেঙ্গে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় না।
জীবনকে সার্থক করতে, শক্তিশালি ও জীবন যাপনকে সহজ করতে সঞ্চয়ের আর কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। জীবনের একটি প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে সঞ্চয় বা সঞ্চয়ের প্রবনতা, তা ভালো ভবিষৎ জীবেনর ক্ষেত্রে হোক আর প্রকৃত জীবনের ক্ষেত্রে হোক।
সঞ্চয়কে কেন্দ্র করে যত অর্থনৈতিক কর্ম-কান্ড, এক কথায় সঞ্চয়ই হচ্ছে অর্থনীতির মূল কথা, সাফল্যের প্রথম সূচনাও।
তারিখঃ অক্টোবর ৩১, ২০১৯
রেটিং করুনঃ ,