বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত, ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ণকে প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক।
নতুন করে সংস্কার না হলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির কাঠামো টেকসই নয়। ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে এ কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ নামের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ণ। এই তিন বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে, এমন মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যেসব কথা বলেছে, তার সঙ্গে আমি পুরো একমত। আমাদের প্রথম প্রজন্মের সংস্কার হয়ে গেছে। এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের সংস্কার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো আমরা দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার শুরু করতে পারিনি। এতে আমরা প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান নীতি দিয়ে আমরা মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিতে পারব না। আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েক দশক ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। অর্থনীতির তেজিভাব কখনো স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সব সময় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। তবে কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ১০-এ থাকা দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ পরের দশকেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০১০-১৯) যেসব দেশ শীর্ষ ১০-এ ছিল, সেসব দেশ আগের দশকে শীর্ষ ১০-এ ছিল না।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যে কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত অতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে আধুনিক নগরায়ণই বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়ণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এদিকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, অনিশ্চয়তার মধ্যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সম্প্রসারণ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংস্কারে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জন্য ২০২৩-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ) তৈরি করছে বিশ্বব্যাংক।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত কয়েক দশকের উন্নয়নে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সূচকের উন্নতি হয়েছে। কোভিড মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য দেশের তুলনায় ভালো করেছে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: সেপ্টম্বর ২৫, ২০২২
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ০৫
রেটিং করুনঃ ,