Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সংঘাতময় দিন আসন্ন (২০২১)

Share on Facebook

যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতি চার বছর পরপর নতুন প্রশাসনের কাছে সম্মিলিত প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে পরবর্তী দুই দশকের বৈশ্বিক প্রবণতার আভাস থাকে। ২০০৮ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল পূর্ব এশিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো ‘মহামারির’ কথা। এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস ২০৪০’ শিরোনামে ১৪৪ পৃষ্ঠার ভারী প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে মাত্র বাইডেন প্রশাসনের কাছে পেশ করেছে। প্রতিবেদনটি সংস্থাটির ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাচ্ছে।

এ ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন দারোগার দৃষ্টি দিয়ে তৈরি হয় না, কিংবা ষড়যন্ত্রের খোঁজে হয়রান গোয়েন্দাদেরও কাজ নয় এটা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অধ্যাপক, জাঁদরেল গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সমাজবিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশারদদের বাস্তব পর্যবেক্ষণ দিয়েই এই জিনিস রচিত হয়।

‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস ২০৪০’ বা ২০৪০ সালমুখী বৈশ্বিক প্রবণতার উপশিরোনামের বাংলা এ রকম, ‘আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক পৃথিবী’। কোভিড-১৯-কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বৃহত্তম বৈশ্বিক বিপর্যয়কারী ঘটনা হিসেবে দেখা হয়েছে। আর ভবিষ্যৎ দেখানো হয়েছে আরও ধূসর, করুণ ও কঠিন। এর সারকথা হলো জলবায়ু পরিবর্তন, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আকার বৃদ্ধি, রোগব্যাধির বিস্তার, আর্থিক সংকট এবং মানুষকে বিভক্তকারী প্রযুক্তির দাপটে পৃথিবীর সব সমাজ ‘বিপর্যয়কর ধাক্কা’ খাওয়ার হুমকিতে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় পরিষদ এ ব্যাপারে বলেছে, ‘এর চেয়ে ধূসর চিত্র আর হয় না।’

রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আরও সংঘাতময় হবে। সমান্তরালে পৃথিবী মুখোমুখি হবে চীন ও আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের সংঘাতের। মহামারি অনিচ্ছুক দেশ ও সমাজকে বদলাতে বাধ্য করে। মানুষ দেখছে সরকার ও করপোরেশনগুলো জীবন বাঁচানোর চেয়ে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং মুনাফা বাড়ানোকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারগুলো ব্যবসা ও পুঁজির পক্ষ নিচ্ছে।

সাড়া ফেলা চিন্তাবিদ ইয়ুভাল নোয়া হারিরিও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মহামারি যতটা না প্রাকৃতিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বলে প্রতিভাত হচ্ছে মানুষের কাছে। মার্কিন এই প্রতিবেদনও বলছে, বিশ্বের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ও সরকার মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে হয় চাইছে না, নয়তো পারছে না।

এমনটাই হওয়ার কথা। শাসকেরা যখন নাকের ডগার বাইরের দুনিয়া দেখতে চান না, তখন এভাবে বিপদ ঘনিয়ে আসে। আমরা জানতাম, আসন্ন বৈশ্বিক মহামারির মুখে আমরা অপ্রস্তুত। হাসপাতালের বদলে সেনানিবাস বানাতেই ব্যস্ত ছিলাম আমরা। টিকা বা অক্সিজেনের চেয়ে বন্দুক আর গুলিকে বেশি দরকারি মনে করেছি। জানতাম, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, আর্কটিকের বরফের ঢাকনা গলে যাচ্ছে দ্রুত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে।

তবু কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়ে গেছি, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাইনি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ করিনি। আমরা ভেবেছিলাম ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল সবাই পাবে। অথচ এগুলো এখন ঘৃণা, সন্দেহ আর মিথ্যার বাহন হয়ে গেছে। স্বচ্ছতা আনার বদলে সরকারগুলো ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।

ফলে রাজনীতি বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে, সমাজ আরও বিভক্ত হচ্ছে, ব্যক্তির অধিকার বলে কিছু থাকছে না। আমরা জানতাম ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বড় রাষ্ট্রের চাপে ছোট রাষ্ট্রের অধিকার সংকুচিত হয়ে যাওয়া।

সবকিছুরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া থাকে। প্রতিক্রিয়াগুলো আসতে শুরু করেছে। দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে, মধ্যবিত্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। হতাশ ও বিক্ষুব্ধ মধ্যবিত্তরা গরিবদের সঙ্গে যোগ দিলে কী হয়, তা বিশ শতকের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিপ্লবী অভ্যুত্থানগুলো দেখিয়েছে।

মহামারির আগের ও পরের পৃথিবী প্রায়ই এক থাকে না। এ রকম সময়ে মানুষের বিশ্বদৃষ্টি দ্রুত বদলাতে থাকে। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে দুটি মহামারি পুরো রোমান সমাজকে প্যাগান থেকে খ্রিষ্টান বানিয়েছিল। সপ্তম শতকে আবার যখন পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য মহামারির মুখে পড়ল, তখন ইসলামের খোলাফায়ে রাশেদিন ইরানের সাসানীয় সাম্রাজ্য আর রোমের ইরাক-সিরিয়া, মিসর ও উত্তর আফ্রিকা দখল করে নেয়। সে সময় আরবে ওই মহামারি ততটা ছিল না।

মার্কিন প্রতিবেদনেও দুটি সভ্যতার সংঘাতকে করোনাকালের কেন্দ্র বলে দেখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দুনিয়া বনাম চীন-রাশিয়া-ইরানের জোট। করোনার সময়ে চীন বিভিন্ন দেশে টিকা ও চিকিৎসাসামগ্রী দিতে গিয়ে তৈরি করেছে হেলথ-সিল্করুট। এটা তার বাণিজ্যিক সিল্ক রোড তথা বেল্ট অ্যান্ড রোডের বনিয়াদকে আরও মসৃণ করেছে।

পরাশক্তিদের প্রতিযোগিতার দেশীয় রূপ হলো ধনী-গরিব এবং বড়-ছোট রাষ্ট্রের অসম সম্পর্ক। দেশই বলি আর শ্রেণিই বলি, ধনী ও ক্ষমতাবানেরা দুর্গ মানসিকতায় ঢুকে যাচ্ছেন। নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষাতেই তাঁরা ব্যতিব্যস্ত। ‘আমরা’ নামক যারা দুর্গের ভেতরে আছি, ‘তোমরা’ যদি সেই দুর্গের প্রাচীরের কাছে আসো তো সহ্য করা হবে না। এই হলো সীমান্তগত ও শ্রেণিগত দুর্গ মানসিকতা। মার্কিন প্রতিবেদনে একেই বলা হচ্ছে ‘সেপারেট সাইলোজ’। অর্থাৎ যার যার আঞ্চলিক কিংবা গোষ্ঠীগত জোটে সওয়ার হয়ে বাঁচার চেষ্টা।

এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ যার যার ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত ভাইবেরাদরদের আপন মনে করবে। সেখানেই বন্ধন ও নিরাপত্তা খুঁজবে। এ রকম সময়েই নাগরিক রাজনীতি, সমতার রাজনীতি গোষ্ঠীর বা কৌমের রাজনীতির কাছে পরাস্ত হয়। ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও ধর্মীয় একাত্মতার ঢেউ গত দশকের চেয়ে অনেক বেশি। পাশাপাশি ভারত থেকে ব্রাজিল, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গণতন্ত্রের দুর্বলতা, কোথাও কোথাও একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা।

ওপরতলার লোকদের দেখাদেখি নিচুতলার লোকেরাও যার যার সমাজ ও সম্প্রদায়ের কাছে ভরসা খুঁজতে চাইছে। করোনাকালে গ্রামের বাড়ি কিংবা উপাসনালয়ের দিকে মানুষের স্রোত সেই সত্যটাই বলে।

ইংরেজ আমলে মহামারির পরে ব্রিটিশ সেনানিবাসগুলো দেশীয় লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চল শুরু হলো। মূল কারণ ছিল স্বাস্থ্যরক্ষা। ১৯০৯ সালে ক্যান্টনমেন্ট ম্যানুয়ালে লেখা হলো, ‘এ কথা আমাদের সর্বদা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে…ক্যান্টনমেন্টগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ব্রিটিশ সৈন্যের স্বাস্থ্যরক্ষা…। অন্য সবকিছুরই স্থান তার নিচে।’

করোনাকাল দীর্ঘ হলে কিংবা করোনার পরে ধনী ও ক্ষমতাবানদের মধ্যে এ রকম দুর্গ মানসিকতা আরও গেড়ে বসলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

লেখক: ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ১৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ