করোনার কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে। অর্থনীতিতেও বেসামাল অবস্থা। এমন দুর্যোগের মধ্যেও এ বছর কিছু ভালো খবর মিলেছে। করোনা সংকটের মধ্যে এসব খবর মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন করোনা সংকটে অর্থনীতি নিয়ে খাবি খাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ কিছু সূচকে ভালো করেছে। সেগুলো হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর আশাবাদ। মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া, রিজার্ভের রেকর্ড উচ্চতা করোনাকালে নিঃসন্দেহে আনন্দ দিয়েছে। সুখবর আরও অপেক্ষা করছে। আর চার মাস পরই ঘোষণা আসতে পারে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের চূড়ান্ত সুপারিশ।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলার
করোনার এ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এরই মধ্যে দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। গত এক দশকের ব্যবধানে দেশে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৯২৮ ডলার। মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করেছে। ১০ বছর আগে ভারতে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩০০ ডলারের মতো। সর্বশেষ গত অর্থবছরে তা ২ হাজার ১৩০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের অনেক পেছনে থেকে ভারতকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত মাথাপিছু আয় বাড়েনি।
আরেকটি সুখবর হলো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, চলতি বছরে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার। ভারতের হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলারে। করোনার কারণে ভারতের অর্থনীতি এ বছর ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে মনে করছে আইএমএফ। করোনার পর দুই দেশের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে আগামী বছরগুলোতে মাথাপিছু জিডিপিতে প্রায় ভারতের সমান্তরালেই চলবে বাংলাদেশ।
প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ
করোনায় বিশ্বের ছোট-বড় সব দেশই নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে খাবি খাচ্ছে। অর্থনীতির চাঙাভাব ধরে রাখতে সবাই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জিডিপি সংকুচিত হচ্ছে বহু দেশের। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্য দেশের তুলনায় ভালো আছে, এমন পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)।
আইএমএফের হিসাবে, চলতি বছরে, অর্থাৎ ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে শুধু গায়ানা ও দক্ষিণ সুদান। আইএমএফ আরও বলছে, চলতি বছরে মাত্র ২২টি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে।
গত মাসে বিশ্বব্যাংকও বলেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। করোনার কারণে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তাই আগের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কমার কথা বলছে এই দাতা সংস্থাটি। তবু নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে, মনে করছে না বিশ্বব্যাংক। এশীয় দাতা সংস্থা এডিবি আরও এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস হলো, চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এদিকে সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
করোনার সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না কমে বরং বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এখন তা ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে যাওয়ার মানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিদেশি মুদ্রায় অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়া। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থই মূলত রিজার্ভকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
সুখবর আরও আসছে
২০১৮ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিন বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণা আসতে পারে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) আগামী ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে বসবে। এবার বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশকে বাছাই তালিকায় রেখেছে সিডিপি।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: নভেম্বর ০৬, ২০২০
রেটিং করুনঃ ,