অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার যড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি তিনি ঐক্যের আহবান জানান।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে তিনি এই আহবান জানিয়েছেন।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এই বিরাট অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা একে মুছে দিতে চায়। আড়াল করতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। এখানে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের বিষয় না। জাতি হিসাবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে এমন ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা একটা মস্ত বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অস্তিত্বের বিষয়। এই জিনিসটা যেন আমরা ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ভুল না করি। এ জন্য সবার পরামর্শ নিয়ে আমরা যেন একযোগে কাজ করতে পারি। সবাই মিলে করলে একটা সমবেত শক্তি আসবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট থেকে যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবে এখন যে চেষ্টা চলছে, তার বিশেষ একটা রূপ আছে। সে জন্য আপনাদের বিশেষভাবে আহবান জানিয়েছি। এটা হচ্ছে যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনি তারা রচনা করছে। সারাক্ষণ এটার নানা রূপরেখা তারা দিয়ে যাচ্ছে। এটা যে এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তা নয়। বিশেষ বিশেষ বড় বড় দেশের মধ্যে জড়িয়ে গেছে।’ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের আমরা বারবার বলছি, আপনারা আসেন, দেখেন। এখানে কোনো বাধা নেই। এখানে কী বলার বাধা আছে? দেখার বাধা আছে? কিন্তু না, তারা কল্প-কাহিনি বানিয়ে যাচ্ছেন। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে পাইনি, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সেই জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কীভাবে তুলে ধরব, সে ব্যাপারে পরামর্শ জানতে চাই। সবাই মিলে যেন কাজটি করতে পারি।’
সরকারের আহবানে সংলাপে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা কেন জানি যড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জগদ্দল পাথর সরাতে পারলাম, এ নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, আমাদের এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা জায়গা থেকে এটাকে উলটে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে কত রকম ভাবে তা এসেছে, আপনারা সেগুলো দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা আসছে, এটা নিয়ে একটা হাঙ্গামা শুরু হবে। সেখানে আমরা ঐক্যের আহবান জানিয়েছিলাম, সবাই সেই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে। আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।’
ড. ইউনূস বলেন, সারা দেশে পূজার আনন্দে সবাই শরিক হয়েছিল। কোনো জায়গা থেকে কোনো রকমের বিশৃঙ্খলা, কট‚ক্তি কিছুই হয়নি। সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। আবার নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে।
যড়যন্ত্রকারীদের উদ্ধৃতি করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তারা গণ-অভ্যুত্থানকে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হিসাবে দেখাতে চাইছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে একটা ভয়ংকর কাণ্ড হয়ে গেছে। সেই ভয়ংকর কাণ্ড থেকে রক্ষা করতে হবে। তারা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের এই অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাস্তবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করলাম অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সেটাকে তারা মুছে দিতে চায়। তারা আগেরটাতে ফিরে যেতে চায়। আগেরটা কীভাবে তারা নিয়ে আসবে? তারা একটা কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি করে রাখতে চায়। তাদের শক্তি অনেক বেশি। অর্থশক্তি এবং আয়োজনের শক্তি এত বেশি ক্রমে ক্রমে তারা মানুষকে বোঝাতে নতুন নতুন কল্প-কাহিনি তৈরি করছে। তবে সেটাতে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।’
সূ্ত্র: যুগান্তর।
তারিখ: ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,