আজ মধ্য শ্রাবণ, ১৫ই শ্রাবণ; অর্থাৎ শ্রাবণের ভরা যৌবন, আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, ফাঁকে ফাঁকে আবার রৌদ্রের কিছুটা আনাগোনা, বলার অপেক্ষা রাখে না যে শ্রবণ মানেই আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রাণ ছোঁয়ানো বর্ষার গানের সুর –
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
আবার –
ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের খেত জলে ভরভর।
আবার কখনও-
মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি তোমারি আশ্বাসে॥
আর যে কথা বহু দিন ধরে যে অ-বলা কথা, বলা হয় নি বহু কাল ধরে তা যেন আজই বলার সময় ক্ষণ – এ জন্য কবি গুরু সব ঠিক ঠাক মত করে বলার আয়োজন আমাদের মনে সুর জাগিয়ে দিয়েছেন –
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব॥
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার॥
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
এমন ঘনঘোর বরিষায়॥
মনের ভাবনায় বা অংকনে প্রিয় শ্রাবণ বা বর্ষা ঋতু যেমনই হোক না কেন সেই যে জ্যৈষ্ঠের পরে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিধারা যদি শিশু-শিক্ষা বা ধারাপাত হয় তবে শ্রাবণ হচ্ছে আমাদের উচ্চ শ্রেনীর পাঠ্য যা অবিরাম বৃষ্টিধারায় রূপ নেয়। পরিপূর্ণ করে দেয় খাল-বিল নদী নালা।
আকাশে মেঘের খেলা, বিদ্যুৎ চমকানো, গুরু গুরু বা কখনও কান ফাটা ভয় পাওয়া ভয়ংকর শব্দ সবই আমাদের বিচলিত করে তুলে, সেই সাথে যখন খবর আসে দেশের কোথাও কোথাও বন্যারও উপস্থিতি, জন মানুষের কঠিন দুর্ভোগ, আশ্রয় হারা, খাবারের সংকট তখন আমরা আরও বিচলিত হয়ে পড়ি।
তারপরও এই শ্রাবণ বা আষাঢ় আর এই দুই মাস মিলে যে বর্ষা ঋতু এই ঋতুই সবচেয়ে সম্পদ দিয়ে যায় আমাদের বাংলায়। ষড় ঋতুর সকল ভারসাম্য বজায় রাখতেই বাংলার বুকে যতটুকু বৃষ্টি ধারার প্রয়োজন তা আমরা এই বর্ষা ঋতু থেকেই পেয়ে থাকি যার যোগানে বাকি ১০টি মাস চলে সুষম ভাবে আপন বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে।
তারিখ: জুলাই ৩০, ২০১৬
রেটিং করুনঃ ,