‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এর দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই’-রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এমন বক্তব্যে দেশজুড়ে তোলপাড় অবস্থা বিরাজ করছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ‘স্ববিরোধী’ ও ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল। তিনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক মশাল মিছিল থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংসদ বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ আর থাকে না, এখন এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এদিকে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত না করার আহ্বান জানানো হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার পদত্যাগের কথা প্রথমে জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেদিন রাতেই বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে রেখে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা জানিয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে।
এতদিন পর আবার আলোচনায় এসেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি। সাপ্তাহিক ‘জনতার চোখ’ ও দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লেখেন, বঙ্গভবনে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তাকে রাষ্ট্রপতি জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এর দালিলিক কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শপথ পড়ানোর পর রাষ্ট্রপতির সবশেষ মন্তব্যকে ‘স্ববিরোধিতা’ বলে মনে করেন সিনিয়র আইজীবীরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন মানেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। পদত্যাগপত্রেরও প্রয়োজন নেই।
আইনজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রপতির এই ধরনের কথার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেছেন, একজন রাষ্ট্রপতি হয়ে দুরকম কথা বলতে পারেন না। একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।
যদিও শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানদের পেছনে রেখে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’ বিটিভিসহ দেশের ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমগুলোতে সেই ভাষণ সম্প্রচার হয়। এছাড়া একইদিন (৫ আগস্ট) বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক টেলিভিশন ভাষণেও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন।
সোমবার বিকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমার কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা মিথ্যাচার। এটা তার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।
কারণ তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে তার (রাষ্ট্রপতি) কাছ থেকে আপিল বিভাগের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়-এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে? এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবং অন্য সব বিচারপতি মিলে ১০৬-এর অধীনে একটা মতামত প্রদান করেন রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সেটার প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন…। তারপর অন্যান্য কথা। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এসব কথা। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করি। রাষ্ট্রপতি এই অভিমত দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজেই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রপতি ৫ আগস্ট রাতে নিজের ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এরপর একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তিনি পুরো জাতির কাছে নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পর যদি তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়, এটি তার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এ পদে থাকার আর তার যোগ্যতা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসাবে আপনি থাকতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সংবিধানে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এতকিছুর পর তিনি (রাষ্ট্রপতি) এটা কীভাবে বলতে পারেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি এটি গ্রহণ করেছেন। এখন তার স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনোরকম সুযোগ নেই। যদি তিনি এই বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। এটি উপদেষ্টামণ্ডলীতে আলোচনা হতে পারে। বিষয়টি আলোচনা হওয়ার মতো মনে হচ্ছে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতির দপ্তরে থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, এটি নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটি তার কাজ। তিনি নিজেই বলেছেন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি যদি বলেন নেই, তাহলে পদত্যাগপত্র কী করেছেন, ওনাকেই জিজ্ঞাসা করেন।’
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘যদি আপনি আপনার নিজের কথা, পুরো জাতির সামনে বলা কথা স্ববিরোধিতা, সেটা তো অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে। তখন এই প্রশ্ন আসে, আপনার আসলে মানসিক সক্ষমতা আছে কি না, রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নগুলো আসতে পারে। এই প্রশ্নগুলো আসার সুযোগ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ বিভিন্ন জায়গায় যখন দেখি, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ-আয়োজন করছে, তখন হঠাৎ করে তিনি (রাষ্ট্রপতি) আড়াই মাস পর এমন কথা বললেন কেন, সেটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক।’
সংসদ বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী পদ আর থাকে না-আইন বিশেষজ্ঞ : রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরাও। সিনিয়র আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এ ভাষণ সারা দেশের মানুষ শুনেছে।
রাষ্ট্রপতি নিজে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই। আমি বলব, রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের দুই মাস পরে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেছেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এই সরকার গঠনের আগে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বৈধতা নেওয়া হয়েছে। তাই পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ নাও করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার কোনো সংকট নেই। এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতির পদে থেকে তিনি অসত্য কথা বলেছেন, তাই দেশের মানুষ মনে করেন তার পদত্যাগ করা উচিত।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছেন। পালানোর পর রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। সংসদ না থাকলে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কোথা থেকে। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেবেন এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। এই দুটো নিয়োগের ক্ষেত্রে তার কারও কাছে পরামর্শ করার প্রয়োজন নেই। তাহলে যেখানে তিনি সংসদ ভেঙে দিলেন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর আর প্রধানমন্ত্রীর পদের কোনো অস্তিত্ব থাকল না।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হওয়ারও কিছু নেই, এখানে আইনের বিশাল ব্যত্যয় ঘটারও কিছু নেই। তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রী আছেন বলে মনে মনে সুখ পেতে পারেন এই আলোচনাটা করে ।
ছাত্র সমন্বয়কদের কড়া প্রতিক্রিয়া, পদত্যাগের দাবি : এদিকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। সোমবার রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর আমরা হয়তো ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে পারিনি। সে অর্থে বিপ্লবী সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন করতে পারিনি। যে কারণে চুপ্পুর মতো মানুষ এখনো রাষ্ট্রপতির মতো পদে বসে আছেন। তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার রিজাইন পেপার নাকি দেখেননি। কোন সাহসে তিনি (রাষ্ট্রপতি) এ কথা বলতে পারেন? সারজিস আলম আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সিস্টেম এখনো সরেনি। বিভিন্ন এজেন্সি ও কুচক্রী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আবার রাজপথে নামব।’
শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র তার কাছে নেই-রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে; একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।’
আরেক ভিডিওবার্তায় এই অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, দেশে যে যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যারা ১৬ বছর ধরে বিভিন্ন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আমরা আপনাদের কাছে আহ্বান জানাব, নিজ নিজ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ৫ আগস্টের আগে যেভাবে একসঙ্গে মজলুম হিসাবে জনতার কাতারে দাঁড়িয়েছিলাম, ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থার জানান দিয়েছিলাম। ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং ৫ আগস্টের আগে মজলুম হিসাবে জনতার কাতারে এসেছি, আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য এবং বাংলার মাটিতে যে কোনো ধরনের তাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মজলুম পরিচয়ে আমাদের মাঠে অবস্থান করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। শেখ হাসিনা বারবার ফোন রেকর্ড ছেড়ে দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা মিছিল করছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি অতীতে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন। তিনি ফ্যাসিবাদ কায়েমে জড়িত ছিলেন। নানাভাবে রাষ্ট্রপতি পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা করছেন। তারই অংশ হিসাবে তিনি দুরকম কথা বলছেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মো. জাহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, একজন রাষ্ট্রপতি হয়ে দুরকম কথা বলতে পারেন না। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এখনো তার হয়েই কাজ করছেন। সরকারকে অনুরোধ করব তাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কোনো আইন মেনে বিপ্লব হয়নি। তাই কোনো আইনের দোহাই না দিয়ে ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়া দরকার। বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে না সরালে তিনি শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করবেন।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন।
সূত্র: যুগান্তর।
তারিখ: অক্টোবর ২২, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,