Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি বাংলাদেশের পরিবর্তনকামী মানুষের কথা ভাবতে হবে ভারতকে (২০২৪))

Share on Facebook

লেখা:মুকুল কেসাভান।

ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও লেখক মুকুল কেসাভান ইতিহাস, রাজনীতি ও সামাজিক বিষয়াবলি নিয়ে লেখেন। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের নীতিনির্ধারকদের কী ভূমিকা নেওয়া উচিত, সে বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয়দের ধারণাসহ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এই অভিমত দিয়েছেন তিনি। মুকুল কেসাভানের লেখাটি প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ (ঈষৎ সংক্ষেপিত) করা হলো।

শেখ হাসিনাকে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে চড়তে বাধ্য করা এবং তাঁর দিল্লিতে আগমনের কারণে আবার ভারতের সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের বাইরের অধিকাংশ ভারতীয়র কাছে বাংলাদেশ একের পর এক গোলমালের আধার। এসব গোলমালের ঘটনা পরম্পরাগতভাবে কেন উল্লেখযোগ্য, তা উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এখন।

ষাটের দশকে আমি শিশু ছিলাম। সে সময়কার স্মৃতি হিসেবে আমাদের কাছে ধরা পড়ে বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ক্ষুব্ধ একটি জায়গা। আমি জানতাম না তখন এই বাঁধ আসলে কী ছিল। পরে আমি জানতে পারি যে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল গঙ্গার পানি হুগলি দিয়ে কলকাতা বন্দরে পাঠানোর জন্য। এ ছাড়া অন্য কোনোভাবে আমাদের কল্পনায় কোনোভাবেই পূর্ব পাকিস্তান ছিল না। এ অঞ্চলটিকে আমরা দেখতাম শুধু পাকিস্তান নামে খামখেয়ালি এক শত্রুদেশের শাখা হিসেবে।

কিশোর বয়সে ভারতে বসে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া যে একজন জননেতার কথা আমি জানতাম, তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী। আমার মনে হয়, যে কারণে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিলেন সেটি হলো—ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো তখন তাঁকে ভারতবিরোধী এক চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছিল। ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে তিনি যে লংমার্চ করেছিলেন, তা এই ভারতবিরোধী তকমাকে আরও পোক্ত করেছিল।

বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার আগে পূর্ব পাকিস্তান বন্যা, ধ্বংসাত্মক এক ঘূর্ণিঝড় ও প্রায় দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার মতো নানা ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল। এতে করে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে তলানিতে রয়েছে বলে ভারতীয়দের যে ধারণা ছিল, তা আরও দৃঢ় হয়। সত্যি বলতে গেলে ষাটের দশকে ভারত নিজেও একপ্রকার খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিল। দুটি যুদ্ধে অংশ নিয়ে তখন জর্জরিত দিল্লি। ১৯৬৬ থেকে ’৬৭ সাল পর্যন্ত বিহারে চলেছিল খাবারের সংকট। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে একই সংকট মহারাষ্ট্রেও দেখা দিয়েছিল। তবে সেগুলো আমাদের আটকে রাখতে পারেনি। ভারতে দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জগুলো উতরে যাওয়ার মতো ছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে এই সমস্যাগুলো ছিল স্থায়ী।

দিল্লিতে বসে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যেভাবে দেখতাম, তার সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির মানুষের আকাঙ্ক্ষার খুব কমই মিল ছিল। পাকিস্তানের পরাজয় এবং বাংলাদেশের জন্ম দ্বিরাষ্ট্রীয় তত্ত্বের ঐতিহাসিক প্রত্যাখ্যান হিসেবেই দেখেছিলেন ভারতীয়রা। আমার মনে পড়ে, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় একজন মুসলমান সহকর্মী আমাকে বলছিলেন, বাংলাদেশের জন্ম বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। কারণ, দেশভাগের পর থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছিল দ্বিরাষ্ট্রীয় তত্ত্ব। সেটি হলো—একটি দেশই কেবল উপমহাদেশের সব মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব দাবি করতে পারে। আরও সাধারণভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের জন্মকে দেখা হচ্ছিল ঐতিহাসিক ভারত যেমন ছিল, সেদিকে যাত্রার সূচনা হিসেবে।

মনে হয়, এটা বলা ন্যায়সংগত হবে যে বাংলাদেশের জন্মের সময় ইন্দিরা গান্ধীকে একজন ধাত্রীর ভূমিকায় দেখেছিলাম আমরা। সদ্য জন্ম নেওয়া এই দেশটির প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল মালিকানাসুলভ। ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচাতে এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপটও তৈরি করে দিয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান বা বঙ্গবন্ধু ভারতেও খুবই জনপ্রিয় ছিলেন এবং তাঁকে ভারতের রাজনৈতিক দীক্ষায় দীক্ষিত বলে মনে করা হতো। সত্যিটা হলো, তিনি যে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তাতে ভারতের বড়ভাইসুলভ এই বন্ধুত্বের ধারণা আরও পোক্ত হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এটি কোনো স্থিতিশীল ভিত্তি ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও ভারতবিরোধী ইসলামি সেনাশাসনের সূচনায় মনে হচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তানের রূপে আবার বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশকে যে ভারতীয়রা এক সময় তাঁদের দীক্ষায় দীক্ষিত বলে মনে করতেন, তাঁরাই আবার বাংলাদেশকে অকৃতজ্ঞ বলে সমালোচনা করতে থাকলেন। তবে বেশির ভাগই বাংলাদেশের বিষয়টা মাথায়ই আনেননি।

বাংলাদেশের বৈষম্যমূলক ও সংখ্যাগরিষ্ঠবাদের রাজনীতির কারণে দেশটিতে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়াটা বর্তমানে ভারতে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির আগেও হিন্দু জনসংখ্যা কমার এই প্রবণতাটা ছিল। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ ছিল হিন্দু। শতকরা এই হিসাবটা ছিল দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনেক হিন্দু ভারতে চলে যাওয়ার পরের। ১৯৭৪ সালে এই হার আরও কমে প্রায় ১৪ শতাংশে দাঁড়ায়। আর ২০২২ সালে আমরা যে সর্বশেষ হিসাব পেয়েছি, তাতে দেখা গেছে তখন বাংলাদেশে হিন্দু ছিল ৮ শতাংশের কিছুটা কম। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় হিন্দুদের ওপর ও হিন্দু মন্দিরে সহিংস হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা এই নোংরা রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ পাশের দেশেও ধর্মান্ধ হামলাকারীদের জন্য পথ তৈরি করে দেয়।

আমার শ্বশুর ১৯২৩ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বেড়ে ওঠার সময় তাঁর কাছে বড় শহর ছিল শিলং, কলকাতা নয়। দেশভাগের পর তাঁদের চার ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই সিলেটে থেকে যান। বাকিরা শিলং, কলকাতা ও লক্ষ্ণৌতে বসবাস করা শুরু করেন। ষাটের দশকের কোনো এক সময়ে সিলেট থেকে শ্বশুরের ওই ভাইও কলকাতায় চলে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় তিনি সে সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। আমার শ্বশুর সিলেট ছেড়েছিলেন ১৯৪৬ সালে। এর প্রায় ৭০ বছর পর তিনি প্রথমবারের মতো সেখানে গিয়েছিলেন। মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সিলেটে নিজ গ্রাম রমাপতিপুর ঘুরে দেখেছিলেন। গিয়েছিলেন ছেলেবেলায় তিনি যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন, সেখানেও। ওই বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আলাপচারিতাও হয়েছে তাঁর। রমাপতিপুর গ্রামে তোলা তাঁর একটি অসাধারণ ছবিও আছে। ছবিতে তাঁর পাশে দুজন হাস্যোজ্জ্বল বৃদ্ধ। তাঁরা আমার শ্বশুরকে চিনতেন না। তবে দেশত্যাগী এই সন্তানকে স্বাগত জানাতে ভোলেননি।

আমার শ্বশুর যে দেশের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেটি অর্থনৈতিকভাবে তলানিতে থাকা কোনো দেশ ছিল না। অস্বস্তিকর হলেও এটা আমরা এখন জানি যে—শিশুমৃত্যু, খোলা জায়গায় মলত্যাগ, এমনকি গড় বয়সের মতো গুরুত্বপূর্ণ মানব উন্নয়ন সূচকগুলোতে ভারতের চেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশ। যে দেশটি আপনাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে ভালো করছে, সেটিকে নিজেদের চেয়ে এগিয়ে রাখার মনোভাব থাকাটা কঠিন। তাই বাংলাদেশকে আমাদের মতোই একটি দেশ হিসেবে চিন্তা করাটা ভালো হবে, যারা আমাদের মতোই অসমতা, দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার মতো নানা উপমহাদেশীয় চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, সেগুলোর সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং প্রতিবেশী দেশটির ভূরাজনীতি–সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আর সে অনুযায়ী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোটাই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক। এর অর্থ হলো বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী, অধিকারকর্মী ও নাগরিক কঠিন এই পরিবর্তনের সময় দেশের হাল ধরতে চাইছেন, তাঁদের বিষয়েও ভারতের নীতিনির্ধারক, নাগরিক ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভাবতে হবে। এখানে সহমর্মিতা থাকবে। তবে তা হবে তাঁদের (বাংলাদেশের আন্দোলনকারী) জন্য, আমাদের জন্য নয়।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১১, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ