ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত ‘গণতন্ত্রের অঙ্গীকার’ রক্ষা করছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট, অত্যাচারী, নিপীড়নকারী, হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নবনিযুক্ত মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিব।
ছাত্র-জনতার বিপ্লব নস্যাৎ করার চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সেখান (ভারত) থেকে তিনি (শেখ হাসিনা) আবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব, সেটাকে নস্যাৎ করার বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছেন। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার কমিটমেন্ট টু ডেমোক্রেসি রক্ষা করছে বলে আমার মনে হয় না।
ভারতের কাছে আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা তাকে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে দেন। দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে তার বিচার করা। সেই বিচারের সম্মুখীন তাকে হতে দেন। এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার যে অপরাধ সেই অপরাধকে খাটো করে দেখে না। তারা (জনগণ) মনে করে যে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে, জাতিকে আহত করেছে।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই জাতিকে তিনি (শেখ হাসিনা) ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণের আবদ্ধ করে গেছেন। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে দূর করতে অবশ্যই কিছু সময় দরকার। একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচন করার জন্য হলেও একটি সময়ের দরকার। যে সময়ে নির্বাচনকালীন নতুন সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারবে, সংস্কারগুলো করতে পারবে; সেই সময় অবশ্যই এদেশের মানুষ তাদেরকে দেবে।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১১ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ১৬ বছর আগে বিএনপি শুরু করেছিল। শেষ পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গেছে। এ আন্দোলনে শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতজন শহিদ হয়েছেন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। আবু সাঈদ জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। মানবাধিকার এতদিন লঙ্ঘিত ছিল, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজ একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেল, স্বাদ পেল স্বাধীনতা কাকে বলে, কথা বলার স্বাধীনতা, বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা কাকে বলে। মানবাধিকার ছিল না। এক ব্যক্তির শাসন ছিল। সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রাপথের মুক্তিকে আমাদের সম্মুন্নত রাখতে হবে।
এ সময়ে বিএপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর।
তারিখ: আগষ্ট ২০, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,