বাংলা মাসের পরিক্রমায় কার্তিক যে একটি বাংলা মাসের নাম তা দিনের শুরুতে বেশ ভোরে শীত শীত অনুভূতির মধ্য দিয়ে প্রকাশ ঘটে আজ যে কার্তিক মাস। ষড় ঋতুর মধ্যে যার উদারতা বেশি সেই ষড় ঋতুর হেমন্ত মাসের প্রথমার্ধ মাসটি কার্তিক মাস।
আাজ পহেলা কার্তিক আর হেমন্ত ঋতুর যাত্রা শুরু, খুব ভোরে শীত শীত অনুভূতির মধ্য দিয়ে কার্তিকের জানান দেওয়া এসেছি এই বাংলা আবারও। কার্তিক মাস বাংলা সনের সপ্তম মাস অর্থাৎ বাংলা বছরের অর্ধেক কাল অতিক্রম করে পরের অর্ধেকে যাত্রা শুরু করা যেখান প্রকৃতির সময়গুলি একটু সুখকর অনুভূতির সাথে মিশানো, নাই গ্রীষ্মের খর তাপ দাহ, আকাশ ফেটে পড়া রৌদ্র, শ্রাবণের ঢল, উত্তাল পানির প্রবাহ, স্রোতের তান্ডবে বিলিন হয়ে যাওয়া বসত ভিটা, ফসলের মাঠ যেন মুক্ত পাওয়া প্রকৃতির ভয়াল দূর্যোগ থেকে, নিশ্চিতে সময় কাটানোর একটি সুযোগও বটে।
কবি জীবনানন্দ দাস তার কবিতার ভাষা দিয়ে কার্তিক দিয়েছেন আলাদা মর্যদা, তাঁর ভাষায় কার্তিক নবান্নের বড় অংশীদার। কৃষি প্রধান এই দেশে যেখানে কৃষকেরা খাদ্য ভান্ডার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে খুব শুদ্ধ মন ও চেতনা নিয়ে। কার্তিক মাসকে স্মরণে রেখে তিনি লিখেছেন ‘
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় হয়তোবা শাঁখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়। “
কার্তিক মাসের সূচনার মধ্য দিয়ে যে হেমন্ত ঋতুর যাত্রা শুরু তার আগমনের কথা লিখতে গিয়ে কবি জীবনানন্দ দাস তার কবিতার ভাষা দিয়ে অংকন করেছেন হেমন্তের চিত্র।
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা,শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে:
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে;-চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি;
ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে- শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে; “
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হেমন্তের আগমন নিয়ে “নৈবদ্যে স্তব্ধতা” কবিতায় লিখেছেন
“- ‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।
বাংলা মাস পরিক্রমায় কার্তিক মাস যেমনই হোক না কেন বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রকৃতি দেখার সবচেয়ে সুন্দর সময় এই কার্তিক। এ গড় তাপমাত্রা ক্রমেই নিচে নামতে থাকে যেন খরদাহের খাঁচা থেকে মুক্ত পাওয়া। হঠাৎ বৃষ্টি বা প্রবল বৃষ্টির বলয় থেকেও মুক্ত থাকা, সাথে নাই তীব্র শীতের প্রকোপ সব মিলিয়ে খুব আরাম দায়ক আবহাওয়া।
বিদায় নেওয়া শরৎ আর আগামীর ঋতু শীত এর মধ্যে কার্তিক ও অগ্রায়ন মিলে যে হেমন্ত ঋতু প্রকৃতির বিবেচনায় বাংলায় যে সৌন্দর্য বিরাজ করে তা খুব সহজে তার চিত্র ফুটিয়ে তোলা খুব কঠিন বিষয় তারপরও নদী খাল বিল, বৃক্ষ রাজি ফসলের ক্ষেত সব খানে্ই যেন একটি ধনী ধনী ভাব কোথাও যেন নেই দারিদ্রতা এই অপূর্ব বাংলায় সেই সাথে আকাশ থেকে খন্ড খন্ড মেঘ সরে গিয়ে আমরা পাই একটি বিশাল নীল আকাশ, যে আকাশের দিকে তাকালে আমাদের মন হয় আরও প্রশস্ত ও উদার।
মাঠের সবুজ মাঠ আর গাছের পাতায় শিশিরের আগমনে পাতায় পাতায় শিশিরে মাখানো রোদের এক মন জুড়ানো এক দৃশ্য।
আমাদের প্রধান ফসল ধান পেকে মাঠের পর মাঠে যেন সোনালী-হলুদ রঙে সেজে উঠবে সেই সাথে গ্রামগুলি হয়ে উঠবে স্বর্ণ-ভাণ্ডারে আর শষ্য ভান্ডারে, কৃষকের মুখে দেখা দিবে এক অনাবিল সুখের হাসি তার আগে শুরু হবে ঘরে ঘরে সোনালী ফসল তোলার মহা-আয়োজন।
এই কার্তিক মাস কম উৎসবের মাসও নয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি কার্তিক মাস বিষ্ণুপ্রিয় মণিপুরীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। কার্তিক মাসের শুক্ল পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মণিপুরীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব মহারাসলীলা।
মহারাস উৎসবের আগে পুরো কার্তিক মাস জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ, গ্রাম ও শহরতলর মণিপুরী লেইসাং বা মন্দিরগুলো ঢাক ঢোলের করতালে ও নানান ধর্মীয় শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।
শুভ হোক কার্তিক মাসের আগমন এই বাংলায়, প্রাণে জাগিয়ে দিক শান্তির পরশ শিশিরের বিন্দু বিন্দু দিয়ে প্রকৃতির মাঝে যে অপূর্ব সৌন্দর্য ভান্ডার।
তারিখঃ অক্টোবার ১৭, ২০১৯
ছবি: নেট থেকে সংগ্রহিত।
রেটিং করুনঃ ,