তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর আফগান নারীদের স্বাধীনতায় ছেদ টানা হয়েছে। বোরকা ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাধীনভাবে চলাফেরাতে আসছে বাধা। চাকরিজীবী অনেক নারীকে বেতনও দেওয়া হচ্ছে না ঠিকমতো। এমন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার ভাবনা আসছে অনেক নারীর মাথায়।
রাজধানী কাবুলের কাছের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে বসে কথাগুলো বলছিলেন চার আফগান তরুণী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে চোখের পানি মুছতে মুছতে তাঁদের একজন বলেন, ‘শুধু বেঁচে আছি আমরা। তবে এটা কোনো জীবন না।’
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, ওই ছাত্রীরা যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তরুণীদের সামনে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। গত সপ্তাহে কাবুল সফরে যান তিনি।
ডেভিড ল্যামির কাছে ওই তরুণীদের একজন বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী। পড়ালেখা ঠিকঠাক চলছিল। তবে পরিস্থিতি মোড় বদলায় তালেবান ক্ষমতায় আসার পর। একদিন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটকে বলা হয়, বোরকা না পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী আরও বলেন, ‘আগে আমাকে কখনোই এমনটি করতে বলা হয়নি। এমনকি তারা (তালেবান) আমার বাবা ও ভাইদের সঙ্গে দেখা করেছে। বলেছে, আমাকে মানিয়ে নিতে। বাইরে ঘুরতে যেতেও পারছি না, যেখানে ছেলেরা অহরহ যাচ্ছে। আমি আশা হারিয়ে ফেলছি।’
ওই তরুণীর পর একে একে মুখ খোলেন শ্রেণিকক্ষে থাকা বাকি তিনজনও। তাঁরা সবাই আফগান যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। একজন বললেন, তালেবান শাসনের অধীনে তাঁর মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসে। আরেকজন টেনে আনলেন ইউক্রেন যুদ্ধের কথা। তিনি বলেন, সবাই জানে ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। এখানকার মানুষও কিন্তু মারা যাচ্ছেন, বিশেষ করে নারীরা।’
গত তিন মাস ধরে বেতন পাননি ওই তরুণী। তাঁর স্বামীও অসুস্থ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দুই–তিন প্রজন্ম ধরে আফগান নারীরা ভোগান্তির মুখে রয়েছেন। আরও একটি প্রজন্ম কি এভাবেই ভুগবে? আমরা কি আশার আলো দেখব না? নাকি এভাবেই নিরাশ থাকব?’
এই তরুণীদের কথা শুনে ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছ থেকে আজ যা শুনলাম, তা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সাহসের কথা। আমি ভাগ্যবান কারণ, আমি বিশ্বের অনেক জায়গায় গিয়েছি, অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আপনাদের সঙ্গে কথা বলার পর, আমি হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি, অনেকদিন আপনাদের কথা আমার মনে থাকবে।’
এদিকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক মাইল দূরে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) অধীনে আফগানদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। কড়া রোদের নিচে দাঁড়িয়ে ওই খাবার সংগ্রহ করছিলেন শত শত মানুষ। আশপাশে অনেকেই আবার দাঁড়িয়েছিলেন ওই খাবার বহন করে আয়–রোজগার করার আশায়।
খাবার সহায়তা পেতে অপেক্ষা করছিলেন নারীরাও। তাঁদের মধ্যে একজন জয়নব (৩৬)। তিনি বলেন, একজন ধাত্রী হিসেবে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কাজ করতে চাইতেন আফগানিস্তানের গ্রামাঞ্চলে। তবে তালেবান সরকারের আইন অনুযায়ী, তিনি পুরুষসঙ্গী ছাড়া বাইরে যেতে পারবেন না। ফলে প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজে নামতে পারছেন না। আর আইন অমান্য করলে শিকার হতে হবে মারধরের।
একই অবস্থা বিধবা নারী নাজিফার (৪০)। কোনো কাজ করার সুযোগ নেই তাঁরও। অভাবের সংসার সামাল দিতে এখন কালো বাজারে তাঁর কিডনি বিক্রির কথা ভাবছেন নাজিফা। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ছে। এ দিকে তালেবান আমার পেনশনের অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে। সন্তানদের নিত্যদিনের প্রয়োজন কীভাবে মেটাব তা আমি জানি না।’
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ১৩, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,