Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

শিক্ষার্থীদের মানসিক অসুস্থতা রুগ্ন শিক্ষাব্যবস্থারই ইঙ্গিত (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:কাজী মসিউর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মসিউর রহমান এই লেখাটি প্রথম আলোতে পাঠিয়েছিলেন। লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিনি ১৩ অক্টোবর, বুধবার এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আমরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি

সম্প্রতি ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’ নামের একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা যে কারও জন্য ভীতিজাগানিয়া। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালিত অনুসন্ধানে বেসরকারি সংস্থাটি দেখাচ্ছে, ৮৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাদের অধিকাংশই ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। সেই সূত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার খবর জনমানসে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এর পেছনে করোনা নিজেই যে একটি কারণ, তা সবাই স্বীকার করবেন। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকলে ভুল হবে।

মানসিক দিক দিয়ে বিপন্ন শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটি এখন ভয়াবহ। এ সমস্যা কিন্তু এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। করোনার আগেও বিদ্যায়তনে বহুজনের আত্মহননের খবর ছাপা হয়েছে কাগজে। সে প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আলোচিত সংকটটি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গভীর কিছু সূত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বলা দরকার, বাংলাদেশের ‘মূলধারার’ শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ঔপনিবেশিক ভাবধারায় চলছে। এখানে ‘সফল’ হওয়ার বাসনা প্রবল। সফলতার সংজ্ঞাটিও ওই উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলো থেকে আমদানি করা। উপনিবেশপ্রভাবিত অসম সমাজে পয়সা ও মর্যাদার অধিকারী হতে পারাটাই তো সফলতা। সে জন্য তরুণদের কাছে ঔপনিবেশিক আদলে সৃষ্ট চাকরিই যেন স্বপ্নপূরণের মোক্ষম উপায়।

সবাই এখন প্রায় একই রকম চাকরি চায়। কিন্তু সবাই তো একভাবে বা একটি অভিন্ন পথে সফল হতে পারে না। কারণ, মানুষের মেধা, সক্ষমতা ও আগ্রহ বৈচিত্র্যময়। অথচ ইউরোপীয় উপনিবেশতাড়িত আধুনিক শিক্ষা এমন অভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা শেখাতে চায়, যা এই আগ্রাসী পুঁজি-নিয়ন্ত্রিত সভ্যতার দোর্দণ্ড প্রতাপ অক্ষুণ্ন রাখায় ভূমিকা রাখতে পারে।

সে পথ ধরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কিছু বৈশ্বিক দক্ষতামানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের মতো চিন্তায় পরনির্ভরশীল দেশগুলো সেই মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখেই শিক্ষাব্যবস্থার দর্শন ঠিক করছে। নয়া ঔপনিবেশিত রাষ্ট্রে শিক্ষা নিজেই পশ্চিমা ‘সাংস্কৃতিক বোমার’ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেনিয়ার সাহিত্যিক ও জনবুদ্ধিজীবী নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো দেখিয়েছেন, এই ‘সাংস্কৃতিক বোমা’ অপশ্চিমা জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব নিজস্ব জিনিসকে বিনাশ করে দেয়।

এর মাধ্যমে শিকড়ছিন্ন ইউরোপীয় মতাদর্শে দীক্ষিত এক অভিন্ন জনগোষ্ঠী বিস্তার লাভ করে। রক্ত, মাংস, ভৌগোলিকতা, ভাষা ও ইতিহাস ভিন্ন ভিন্ন হলেও এই মানুষদের স্বপ্নগুলো এক ও অভিন্ন। সে কারণে এই বৈশ্বিক প্রকল্পের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসেবে প্রায় সবাই স্যুট-টাই পরতে চায়।

উচ্চশিক্ষিতরা বাংলা-ইংরেজির মিশেলে কথা বলেন। তাঁরা সারাক্ষণ পশ্চিমা স্বপ্নে বিভোর থাকেন। এ এক অদ্ভুত প্রজাতি। এই প্রজাতির পরিচয়সংকট সুগভীর। তাঁদের চৈতন্যে প্রগাঢ় দ্বিধা আর বিচ্ছিন্নতা।

এ রকম বিশ্বায়িত শিক্ষা প্রকল্পে জ্ঞানব্যবস্থা স্থানিক বৈচিত্র্য, জনমানুষের প্রকৃত প্রয়োজন ও অন্যান্য প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে গড়ে ওঠে না। তাই অর্জিত জ্ঞানকে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গগুলোর সঙ্গে খুব একটা মেলাতে পারে না। অথচ শিক্ষাকে তো প্রধানত হতে হতো স্থানিক। তারপর বৈশ্বিক।

এ ক্ষেত্রে চীন ও জাপানের নিদর্শন থেকে প্রেরণা নেওয়া যায়। উল্লেখ্য, মানুষের জীবনযাপন তো বৈশ্বিক হতে পারে না। সবাই কোনো না কোনো অর্থে স্থানিক জীবনই যাপন করে। তাই স্থানীয় অধিবাসীদের যাপিত জীবনের সংকট, স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, ভাষা ও ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে উঠতে হয়। তা না হলে তো সবার জন্য ইউরোপীয় স্বার্থতাড়িত অভিন্ন শিক্ষা গাঢ় থকথকে বিচ্ছিন্নতাই জন্ম দেবে। দিচ্ছেও তা-ই।

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে মানবসম্পদ বানানোর বিপুল উৎসাহ ও আয়োজন চারদিকে। তাদের মানুষ হিসেবে গড়ার উদ্যোগ খুব বেশি চোখে পড়ে না। নিয়োগকর্তারাও দক্ষতাকে যতটা বেশি প্রাধান্য দেন, মানবিকতা বা সততাকে ততটা দেন না। এটা আশা করা যায় না যে শুধু বৈষয়িক অর্থে সম্পদ বনে যাওয়া স্নাতকেরা প্রচুরভাবে জীবনকে বুঝতে সক্ষম হবেন। তা হওয়ার কথাও নয়।
বিজ্ঞাপন

জীবনদিগন্তের অনিবার্য আলো-অন্ধকার মোকাবিলার জ্ঞান, দক্ষতা ও মানসিকতার ঘাটতি থেকে যায় তাঁদের। ওদিকে জীবনের প্রয়োজনীয় বিকাশের জন্য যে দক্ষতাগুলোর খুব প্রয়োজন, আধুনিক শিক্ষায় সেসবকে খুব অমর্যাদাকর হিসেবে দেখা হয়। খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ, প্রকৃতি সম্পর্কিত নিবিড় জ্ঞান, সামাজিক সম্পর্কের পরিচর্যা ও উন্নয়ন, উদার আর বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা, গৃহ ব্যবস্থাপনা, সন্তান লালন-পালন ইত্যাদি মানুষ নামের সামাজিক এই প্রাণীর জন্য খুব দরকারি বিষয়।

অথচ হাজার বছর ধরে এ-সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর যে সনাতন পেশাগুলো গড়ে উঠেছে, তা অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষিতদের কাছে খুব সম্মানহানিকর ঠেকছে এখন। উদাহরণ হিসেবে এখানে শুধু কৃষিকাজের কথাই উল্লেখ করলাম।

আধুনিক শিক্ষা খুব আয়োজন করে একটি অতিপ্রতিযোগিতাময় সমাজ কায়েম করেছে, যা সহযোগিতার নয় মোটেই। এই প্রতিযোগিতার পেছনে আছে মুনাফা, স্বার্থপরতা আর ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। আধুনিকতার এ ময়দানে সবাই সবার সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কেউ কারও ওপর বিশ্বাস আর আস্থা রাখতে পারছে না। নির্ভর করার মতো যেন কেউ নেই। ভিড়ের মধ্যে সবাই ভীষণ একা।

কারণ, এ রকম সমাজে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সবাই যেন সবাইকে ঠকাচ্ছে—পেশাজীবীরা সেবাপ্রার্থীদের, ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের, রাজনীতিবিদেরা জনগণকে, সাংবাদিকেরা পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের। প্রশ্ন জাগে, এভাবে সবাই সবাইকে ঠকালে দিন শেষে কোনো মানুষ নিরাপত্তায় থাকতে পারে? এই অসীম-বিস্তৃত ভীতির বিপরীতে শিক্ষাব্যবস্থা ইতিবাচক কিছু কি বুনে দিতে পারছে শিক্ষার্থীর মগজে?

উপরিউক্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে আরও একটি প্রসঙ্গ সামনে আনা জরুরি। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার ধরন আজও প্রচণ্ড কর্তৃত্ববাদী। এখানে শিক্ষক ও প্রশাসন মানবিক বা উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে শিক্ষার্থীদের বিবেচনা করেন বলে দাবি করার কোনো কারণ নেই। কর্তৃপক্ষ সেই ঔপনিবেশিক মাস্টারের ভূমিকায়।

নিজেদের খুব শ্রেষ্ঠ মনে করেন। এই শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা কিন্তু ব্রিটিশদের শিক্ষার সেই ডাউনওয়ার্ড-ফিলট্রেশন মডেল থেকে উৎসারিত। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায়শই একধরনের শ্রেণিবৈষম্য বিরাজমান। এই বৈষম্যের আবহে তো মানবিক যোগাযোগ সফল হতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সংকটে শিক্ষকদের দ্বারস্থ হওয়াও খুব একটা হয়ে ওঠে না।

মাঝেমধ্যে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা সামনে এলেও তা সংখ্যাগরিষ্ঠের বেলায় ঘটছে না। আরও উল্লেখ্য, দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে (বিভিন্ন সময়ের), যেখানে ক্ষমতাসীন দলগুলোর কাঠামোগত নিপীড়নের সার্বিক আয়োজন রয়েছে। গেস্টরুম, গণরুম থেকে শুরু করে বড় ভাইবোনের লাঠিয়াল-চ্যালা গড়ে তোলার উদ্যোগ তো আছেই। শিক্ষকদের একটি বড় অংশও নির্লজ্জ কায়দায় ও যুক্তিহীন উপায়ে ক্ষমতায় থাকা সরকার ও তাদের দর্শনের পক্ষ নিচ্ছেন। নিতে বাধ্যও হচ্ছেন কখনো কখনো। এসবের মধ্যে পড়ে শিক্ষার্থীরা আস্থা ও নিরাপত্তার সংকটে পড়ছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পদের বৈষম্যও বিদ্যমান। শহর ও গ্রামের বিদ্যায়তনগুলোর মধ্যকার নিপাট বৈষম্য এখনো অসহনীয় পর্যায়ে রয়ে গেছে। প্রান্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকছেন। তা ছাড়া আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খাবারের মান খুবই নিম্নস্তরের।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

নভেম্বর ২১, ২০২৪,বৃহস্পতিবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ