মাহাবুব সাহেব সাথে পরশের হঠাৎ দেখা ঢাকা নিউ মার্কটের বইয়ের দোকানগুলির সামনে। মাহাবুব সাহেব এক সময় পরশের গৃহ শিক্ষক ছিলেন, নবম ও দশম শ্রেনীতে মাহাবুব সাহেবের কাছে পরশ লেখাপড়া করত। এই ছাত্র ও শিক্ষকের জীবনে ১৫ বছর খুব দ্রুত কেটে গেল , এর মধ্যে তাদের মধ্যেও দেখাও হয়েছে প্রায় তিন বা চার , মাহাবুব সাহেবের জীবন কেটেছে খুব সাধারণ ভাবে যেমনটা একজন সাধারণ শিক্ষকের জীবন কাটে বা অতি সাধারণ চাকুরী জীবির, গত পাঁচ বছর ধরে মাহাবুব সাহেব একজন সাধারণ চাকুরী জীবি, চাকুরী জোটার সাথে সাথে তিনি গৃহ শিক্ষতা জীবনের ইতি ঘটিয়েছেন।
রবি ঠাকুরের “আগুনের পরশ-মণি ছোঁয়াও প্রাণে” বিখ্যাত গানটি থেকে নামটা রেখেছিল পরশের মা, সেই আশায় যে তাঁর সন্তানের যেখানেই পরশ পাবে সেখনেই স্বর্ন হয়ে যাবে, ছেলে একটা সোনার টুকরা হয়ে উঠবে আর ছেলের সাথে থাকবে সব ভালোর পরশ বা ছোঁয়া।
ঢাকা নিউ মার্কটে পরশকে খুব ব্যস্ত দেখাচ্ছিল, কিন্তু গৃহ শিক্ষক মাহাবুব সাহেব শিক্ষকের দাবি নিয়ে পরশকে একটু আটকিয়ে রাখলো নানান প্রশ্ন করতে চাইলো, জানতে চাইলো কেমন শিক্ষা দিতে পেরেছিল তাঁর প্রিয় ছাত্রকে বা তাঁর প্রিয় ছাত্র তাঁর শিক্ষকের দেওয়া শিক্ষা কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছিল !!
মাহাবুব সাহেব বললেন- আচ্ছা পরশ তুমি এখন কোথায় ব্যবসা বা চাকুরী করছো !
– স্যার, সে অনেক কথা, আজ বলতে পারছি না, নানান ব্যস্ততায় আছি, আর একদিন খুলে বলব সব বিস্তারিত ভাবে।
– না, না, কী এমন তুমি ব্যস্ত আছো, হলেই বা তোমার সময়ের ক্ষতি, কত সময় জীবনে আসে যায়, সব সময় কি আর কাজে লাগানো যায় !! আমি কি পেরেছি পরশ সময়কে কাজে লাগাতে !!
– স্যার, তাহলে সংক্ষেপে বলি
– ঠিক আছে সংক্ষেপে বলো, তোমার সময়ের মূল্য বুঝি।
– স্যার, আপনি তো জানেন আমরা ব্যবসায়ী পরিবার, দাদার আমল থেকে ব্যবসা, আর জানেন তো বাবা কেমন ঝানু ব্যবসায়ী। আমাদের কি চাকুরী করা সাজে !! স্যার, আপনি অনেক কিছুই বুঝেন না, ঘুষ ছাড়া দেশে কোন চাকুরী নেই, চাকুরী করলে আপনাকে ঘুষ খেতে হবে, মানে বেতনের বাইরে বাড়তি আয়। না হয় আপনি বেঁচে থাকবেন একজন মৃত মানুষের মত, আর আমি কি ঘুষ ওয়ালা চাকুরী করব !! আমরা রক্ত দিব, না খেয়ে থাকব, প্রয়োজনে রিক্সা চালাব কিন্তু ঘুষের চাকুরী আমরা করব না, বরং আমরা অনেক ভালো চাকুরী আমরা মানুষকে দেই।
– সে আমি জানি আমার দেওয়া শিক্ষা বৃথা যায় নি। জানি নিজে ব্যাবসা প্রতিষ্টান খুলেছো, সেটা কোথায় ! আর কিসের ব্যাবসা !!
– স্যার, সে অনেক ইতিহাস তাই অন্য দিন বলতে চেয়েছিলাম, সংক্ষেপে বলি। নিজেই একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছিলাম, এস. এস, সি পাসের পর আর যখন সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হলাম, লেখাপড়া ভালো লাগলো না, ব্যবসায় মন টানলো। ভালোই চলছিল, কিন্তু রাজনৈতিক চক্রে তা বন্দ হয়ে গেল, বন্দ হয়ে গেল বললে ঠিক হবে না, বন্দ করে দিলাম নিজেই।
– পরশ, তা হলে এটা তো খুব দঃখজনক, বেশি লোকশান তো হয় নি, তাই না !!
কথা বলার সময় ঐ সময়টিতে মাহাবুব সাহেব নিজেকে প্রশ্ন করল তা হলে কী আমার ছাত্র এস, এস. সির পরে আর লেখা পড়া করে নি !!
– স্যার, কি যে বলেন, আপনার ছাত্র বলে কথা, আপনার দেওয়া শিক্ষা কি বৃথা যায় !! আপনি বলতেন না স্যার ! – আমার সকল অর্জিত শিক্ষা আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে যেদিন ডিংগিয়ে যাবে সেই দিন আমার শিক্ষকতা জীবন সার্থক হবে।
– আমার কথাগুলি তাহলে মনে রেখেছ, সেটাই আমার সকল সময়ের প্রত্যাশা।
– স্যার, আমি এখন প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে জড়িত, রাজনীতি এটা এখন আমার পেশা। একটি বড় রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রিয় নেতা, আপাততঃ একটি পদে সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছি, একদিন আমি দেশের মন্ত্রী হব। দেশ শাসন করব। দেশ পরিচালনা করব। দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করব।
মাহাবুব সাহেবের ছাত্র প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে জড়িত- খুন, ত্রাস, মন্ত্রী, বড় বড় দূর্নীতি, বন দখল, জমি দখল এই ধরণের শব্দ গুলি প্রচন্ড গতিতে তাঁর মাথার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের মত কিম্বা সাইক্লোনের মত ঘুরপাক খেতে লাগলো। একই সাথে মাহাবুব সাহেবের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো তাঁর গর্ব করে বলা সেই কথাটা আমার সকল অর্জিত শিক্ষা, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে যেদিন ডিংগিয়ে যাবে সেই দিন আমার শিক্ষকতা জীবন সার্থক হবে।
রেটিং করুনঃ ,