শান্তি আলোচনায় ব্যর্থতা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ডেকে আনবে: জেলেনস্কি
ইসরায়েল কেন ‘আয়রন ডোম’ দিচ্ছে না, প্রশ্ন জেলেনস্কির
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে দুই দেশের লড়াই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে। গতকাল রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এসব কথা বলেন।
পুতিনের প্রতি ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আমি গত দুই বছরই আলোচনার পক্ষে ছিলাম। আমি মনে করি, আলোচনা ছাড়া আমরা এই যুদ্ধের ইতি টানতে পারব না।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের যদি ১ শতাংশও সুযোগ থাকে, আমাদের সেই সুযোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের এটা করা উচিত। আমি আপনাকে শান্তি আলোচনার ফলাফল বলে দিতে পারি…।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের নির্মূল করতে, হত্যা করতে এসেছে রুশ বাহিনী। আমাদের জনগণ ও সেনাবাহিনীর মর্যাদা বিবেচনায় বলতে পারি, আমরা শক্তিশালী আঘাত মোকাবিলা করতে পারি, আমরা পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের মর্যাদাবোধ আমাদের জীবন রক্ষা করছে না। তাই আমি মনে করি, সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য আমাদের যেকোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যেকোনো সুযোগ নিতে হবে, এমনকি পুতিনের সঙ্গে কথা বলার সম্ভাব্যতা নিয়েও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মানেই হলো— একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।’
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে এ যুদ্ধ শুরু হতো না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আমার দেশ ও জনগণের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। যদি ন্যাটোর সদস্যরা আমাদের এই জোটে দেখতে চান, তাহলে দ্রুত এটা করুন। কারণ, প্রতিদিনই আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
ন্যাটো সদস্যদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘কিন্তু আপনারা যদি আমাদের জনগণের জীবনের সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত না হন, যদি আমাদের দুই নৌকায় পা দেওয়া অবস্থায় দেখতে চান, আর আপনারা আমাদের গ্রহণ করবেন কি করবেন না, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে যদি আমাদের দ্বিধায় রাখতে চান; আপনারা এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ফেলতে পারেন না, এমন অনিশ্চয়তায় থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের (ন্যাটো সদস্যদের) অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা সরাসরি ও পরিষ্কারভাবে বলুন, আমরা এক বছর, দুই বছর কিংবা পাঁচ বছরের মধ্যে আপনাদের ন্যাটোর সদস্য করতে যাচ্ছি, অথবা রাখঢাক না করে ‘না’ বলে দিন। জবাব ছিল স্পষ্ট—তোমাদের ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, দরজা খোলা।’
ইউক্রেনের ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া নিজেদের (রাশিয়া) নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। শুরুতে ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখায় ইউক্রেন। তবে হামলা শুরুর পর সুর নরম করেন জেলেনস্কি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে কিয়েভ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথ থেকে সরে আসতে রাজি বলেও জানান তিনি।
ইউক্রেনে রুশ হামলা আজ সোমবার ২৬তম দিনে গড়িয়েছে। কয়েক দফার সংলাপে দুই পক্ষ কিছুটা অগ্রগতির কথা জানালেও সহসাই যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আজ দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবার অনলাইনে শান্তি আলোচনায় বসতে পারেন বলে জানা গেছে।
ইসরায়েল কেন ‘আয়রন ডোম’ দিচ্ছে না, প্রশ্ন জেলেনস্কির
ইউক্রেনের কাছে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রিতে ইসরায়েলের অনীহা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল রোববার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে দেওয়া ভার্চ্যুয়ালি ভাষণে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। খবর বিবিসি ও হারেৎজের।
আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রত্যেকে জানেন, আপনাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেরা। আপনারা নিশ্চিতভাবে আমাদের জনগণকে সাহায্য করতে পারেন। ইউক্রেনীয় ইহুদিদের জীবন বাঁচাতে পারেন।’ জেলেনস্কি নিজেও ইহুদি পরিবারের সন্তান।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ক্রেমলিনের মুখের ভাষা শুনুন। তারা নাৎসিদের পরিভাষা ব্যবহার করছে। ইহুদি প্রশ্নে চূড়ান্ত সমাধানের কথা আপনাদের ভালোই স্মরণ আছে। মস্কো এখন কী বলছে শুনুন। চূড়ান্ত সমাধানে এখন সেসব পরিভাষা আবার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সেটা এখন আমাদের লক্ষ্য করে ইউক্রেন বিষয়ে। তারা দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসব কথা বলছে।’
রাশিয়া ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচয় সমূলে উৎপাটন করতে চায় বলে অভিযোগ করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইহুদি ও ইউক্রেনীয়দের অভিজ্ঞতার সরাসরি তুলনা করা চলে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, ১৯২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যেদিন নাৎসি পার্টির যাত্রা ঘোষণা করেন অ্যাডলফ হিটলার, ১০২ বছর পর সেদিনেই ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা পৃথক দেশ ও পুরোপুরি ভিন্ন বাস্তবতায় আছি, কিন্তু আমরা একাই হুমকি মোকাবিলা করছি।’ তিনি আরও বলেন, নাৎসিরা লাখো মানুষকে হত্যা করেছে, আর রাশিয়া মাত্র কয়েক সপ্তাহে হাজারো মানুষ হত্যায় সফল হয়েছে। তারা বাবি ইয়ার ম্যাসাকার স্থাপনা ও পুণ্যার্থীদের শহর উমানে বিমান হামলা চালিয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন কেবলই একটি সামরিক অভিযান নয়, যেমনটা মস্কো বলে আসছে। এটা সর্বাত্মক ও অন্যায্য যুদ্ধ, যার উদ্দেশ্য আমাদের জনগণকে ধ্বংস করে দেওয়া। রাশিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, আর গোটা বিশ্ব তা কেবলই দেখছে। তাই আমাদের আর তোমাদের (ইহুদিদের) ইতিহাসকে আমি একইভাবে দেখতে ও তুলনা করতে পারি।’
এদিকে পরে দেওয়া নিয়মিত রাত্রিকালীন ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের শান্তি আলোচনার জন্য জেরুজালেম ভালো ভেন্যু (স্থান) হতে পারে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে শীর্ষপর্যায়ের সংলাপ আয়োজনে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
জেলেনস্কি বলেন, ‘সংলাপ আয়োজনের একটি উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। আমরা তাঁর এ প্রচেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। আগে হোক, পরে হোক আমরা খুব সম্ভবত জেরুজালেমে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারব।’
ইউক্রেন সংকটে সতর্কভাবে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি মেনে চলার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। মস্কোকে না খেপিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। শান্তি আলোচনা আয়োজনেরও চেষ্টা করছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মার্চ ২১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,