বাংলাদেশের সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন ছয় কংগ্রেসম্যান। গত ২৫ মে জো বাইডেনের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসম্যানরা।
২ জুন ভার্জিনিয়ার পঞ্চম ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধি কংগ্রেসম্যান বব গুড প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে লেখা ওই চিঠি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। অন্য পাঁচ কংগ্রেসম্যান হলেন– স্কট পেরি, ব্যারি মোর, ওয়ারেন ডেভিডসন, টিম বুরচেট ও কিথ সেলফ। গত ২৭ মে চিঠির সত্যতা জানতে সমকালের পক্ষ থেকে বব গুডসহ চিঠিতে সই করা কংগ্রেসম্যানদের কাছে ই-মেইল করা হয়েছিল। তবে কোনো উত্তর দেননি তাঁরা।
চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রশ্নে বেশ সমালোচনা করা হয়েছে। সেসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, সে সুযোগ সৃষ্টির জন্য ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করেছেন কংগ্রেসম্যানরা। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের ওপরও নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ করেন তাঁরা।
চিঠির শুরুতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। আসছে সংসদীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অংশ নিতে পারে, তার জন্য ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করা হয়।
২০০৯ সালে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শতাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নথিভুক্ত করেছে বিভিন্ন সংস্থা। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস। এমনকি জাতিসংঘও বলেছে ক্ষমতাসীন সরকার ক্রমাগত গণতান্ত্রিক পন্থাকে অস্বীকার করছে। অভিযোগ করা হয় নিজ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাংবাদিকদের জেলে দেওয়া, বিরোধীদের গুম করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেওয়া মানুষদের হত্যা অথবা লাঞ্ছিত করেছে। বর্তমান সরকারের এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকেনি, সরকার জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। লুটপাট, বাড়িঘর পোড়ানো, মন্দির ও মূর্তি ভেঙে দেওয়া, হত্যা, ধর্ষণ এবং জোর করে ধর্ম পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এতে হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার খ্রিষ্টান সংখ্যালঘুদের ওপরও নির্যাতন চালিয়েছে। তাঁদের উপাসনালয়ে লুটপাট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং ধর্মগুরুদের জেলে দিয়েছে।
সম্প্রতি মাসগুলোতে হাজারও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সমাবেশ করেছেন অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য। পদক্ষেপ হিসেবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি দেখানো ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন এনজিও র্যাবকে ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চিঠিতে সম্প্রতি জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের র্যাব নিয়ে করা প্রতিবেদনটির কথা উল্লেখ করেছেন কংগ্রেসম্যানরা।
কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অসদাচরণ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদের উৎসাহিত করছে। দক্ষিণ এশিয়ার অগণতান্ত্রিক শাসকরা চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে গেলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য হবে উদ্বেগজনক।
সূত্র:সমকাল।
তারিখ:জুন ০৪, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,