পাকিস্তানের নারীশিক্ষা অধিকারকর্মী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই বিয়ে করেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা আসার মালিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিলেন তিনি। লন্ডনের বার্মিংহামে তাঁদের বিয়ে হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মালালা এক টুইট বার্তায় নিজের বিয়ের খবর জানিয়েছেন।
টুইটারে বর আসার মালিকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করে মালালা লিখেছেন, ‘আজকের দিনটি আমার জীবনের একটি মহামূল্যবান দিন। আসার এবং আমি সারা জীবনের জন্য গাঁটছড়া বেঁধেছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্বল্পপরিসরে বার্মিংহামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাকি জীবন আমরা একসঙ্গে কাটাতে চাই।’
মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় পশতুন জাতিগোষ্ঠীর এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তালেবানের বাধার পরও নারী শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাওয়ায় ২০১২ সালে জঙ্গিরা তাঁকে গুলি করে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এ সময় চিকিৎসার জন্য তাঁকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
নারীশিক্ষা বিস্তারের পক্ষে কাজ করার জন্য মালালা ইউসুফজাই সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ভারতের কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন মালালা। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ তাঁকে শান্তির দূত হিসেবে নিয়োগ করে। মালালার নামে জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ জুলাই তার ১৬ তম জন্মদিনে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে আত্মজীবনী লিখেছে এ নোবেলজয়ী কিশোরী। বইয়ের নাম আই অ্যাম মালালা: হাউ ওয়ান গার্ল স্টুড আপ ফর এডুকেশন অ্যান্ড চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড। বইটি ঠাঁই করে নিয়েছে অ্যামাজনের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায়।
মেয়ের বিয়ের কথা জানিয়ে টুইটারে পোস্ট করেছেন মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইও। তিনি লিখেছেন, ‘এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তুর পেকাই ইউসুফজাই (মালালার মা) ও আমি খুবই আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।’
বর আসার মালিকও মালালার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার কথা জানাতে নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি মালালাকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন।
মালালার বিয়ের খবরে টুইটার ব্যবহারকারী তাঁর নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
চার মাস আগে ভোগকে মালালা, ‘আমি বুঝি না, মানুষ কেন বিয়ে করে’
মাত্র চার মাসে আগে ভোগের সাংবাদিক এডওয়ার্ড এনিনফুলকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের একটা অংশ এখন ভাইরাল। সেখানে ‘বিয়ে কবে করবেন?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (২০১৪) বলেছিলেন, ‘আমি বুঝি না, মানুষ কেন বিয়ে করে। আপনি যদি একটা মানুষের সঙ্গে থাকতে চান, তো থাকুন। এর জন্য কাগজপত্র, সই-সাবুদের কী প্রয়োজন? কেন দুটো মানুষ সহজে একসঙ্গে জীবন ভাগাভাগি করতে পারে না?’
এভাবেই মালালা জানিয়েছিলেন তিনি বিয়েতে বিশ্বাসী নন। আর আদৌ কখনো বিয়ে করবেন কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আর এর ঠিক চার মাস পেরোতে না পেরোতেই মালালা বিয়ে করে ফেললেন। তাঁর জীবনসঙ্গী আসার মালিক কাগজে সই করছেন, এমন একটি ছবি প্রকাশ করেই ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় দিয়েছেন বিয়ের খবর। আর স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব দিয়ে এই খবর ছাপিয়েছে ভোগ ইউকে। তাই এই দুই খবর পাশাপাশি রেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লিখলেন, ‘নোবেলজয়ীর এমনও মুড সুইং হয়!’ ‘দেখুন, ভণ্ডামি কাকে বলে’।
তবে মালালার পাশে যে কেউ দাঁড়াননি, তা-ও নয়। কয়েকজনের সুর ২৪ বছর বয়সী সর্বকনিষ্ঠ এই নোবেলজয়ীর পক্ষে। ‘তিনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে বিয়েতে বিশ্বাসী নন। এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব মতামত। হয়তো নিজের পরিবার, ধর্ম আর সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। এখন বিয়ে করেছে, তাই সমালোচনা করছেন। আবার বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকলেও সমালোচনা করতেন। আপনাদের মুখ কখনোই বন্ধ হবে না। অন্তত বিয়ের দিনে মেয়েটাকে ছেড়ে দিন।’
সে যা-ই হোক, এই মুহূর্তের সবচেয়ে বেশিবার করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে একাধিক পাকিস্তানি গণমাধ্যম। ‘প্রেস ট্রাস্ট অব পাকিস্তান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালালার জীবনসঙ্গী আসার মালিক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের হাই পারফরম্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক। গত বছরের মে মাস থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পাকিস্তান সুপার লিগের দল মুলতান সুলতানসের অপারেশনাল ম্যানেজারও ছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আসার লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস থেকে ২০১২ সালে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। দুই বছর ধরে মালালার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ০১, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,