প্রিয় ঋতু শরতের এখন প্রায় বিদায় কাল, আর কয়েকটা দিন আমাদের মাঝে আছে, তাইতো আকাশে খন্ড খন্ড সাদা মেঘের ভেলা, মাঠ জুড়ে সাদা তাশ বনের বন যেখানে হারিয়ে যাওয়ার নেশা। মন উদার করা একটি সময়, নিজেকে জানার একটি ভালো সময়, সহজেই মনে প্রফুল্লতা মেলে।
তবে কেন যেন মনে হয় নিজেদেরকে জানা আমাদের অনেক কম ! অনেক রকমের উদাহরণ টানা যায়। কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া আমরা আমাদের মাথার পিছনটা, পিঠটা আমাদের দেহের অনেক অংশই দেখতে পাই না। দেহের ভিতরের অংশের কথা তো বাদ থাকলো। এসব ভাবতে গিয়েই হয় তো ” কেউ কথা রাখেনি” কবিতায় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন – কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
নিজেরাই আমরা, আমাদেরকে নিয়ে নিজেরাই বিভ্রান্ত হই কখনও কখনও , যখন আমারা আমদের কথা গুলি উলট পালট করে ফেলি। পণকে, কথা দেওয়াকে আর প্রতিজ্ঞাকে আর আসল জায়গায় রাখি না, আমরা তখন নিজের অবস্থান বুঝি না, কিন্তু তখন আমরা রীতিমত বিভ্রান্ত !
আমাদের প্রতি নিয়ত অনেক মানুষের সাথে দেখা হচ্ছে, জানা হচ্ছে। প্রিয় সন্তান, স্বামী বা স্ত্রী, বাবা-মা, বন্ধু- বান্ধব। নেতা-অনুশারি। এক কথায় প্রিয় সব মানুষ। ক্ষণ কালের হোক আর বহু কালের হোক, দেখা এবং জানার আবর্তে ঘোকপাক খাচ্ছি জন্মান্তেরের।
আমাদের জানা হয়নি নিজেকে। খুব কাছের মানুষকে। আমাদের প্রিয় মানুষদের, পুরাপুরি ভাবে। সবই খন্ডিত ভাবে। তবুও আমাদের পাশে যারা, সবাই আমাদের ভালো লাগার। ভালোবাসার মানুষ।
আমরা অনেকেই শুধু নিজের কথা বলতে থাকি। নিজের কথা। নিজ বংশের কথা। নিজের ঐতিয্যের কথা। নিজের ভালো লাগার কথা এই সব।
আমাদের জানা হয় না, জানা হয় নি নিজের ভালো লাগার কথা গুলি শ্রোতাকে, পাঠককে ভালো লেগেছে কিনা !! তাঁদের মনের গভীরে জায়গা দখল করে নিয়েছে কিনা !!!
আমাদের অনেকের মন, মনন এখনো ততটা দৃঢ় হয়নি যা বললে বা লিখলে মানুষের মনের অনেক গভীরে কথামালা ঠাঁই করে নিবে।
আমাদের কথা, কথা মালাগুলি হোক একটি শ্রেষ্ট একটি কবিতা, মহা কাব্যের মত। একটি শিশির বিন্দু , পূর্নিমার চাঁদের আলোর মত। শরৎ এর বিশাল নীল আকাশে এক খন্ড সাদা মেঘ, কাশ বনের মত যেখানে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
( যারা শহরে থাকেন, বিশেষ করে এই অসহ্য ঢাকা শহরে যারা থাকেন,
তাদের কাছে বাংলার ছয়টি ঋতু অস্পষ্ট হয়ে গেছে। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর
শীতের মাঝেই তাদের বসবাস। শরৎ হেমন্ত আর বসন্ত কোথা দিয়ে
পার হয়ে যায় বুঝতেই পারনে না। শরতের বড় বৈশিষ্ট্য হলো আকাশ।
শরতের আকাশের মতো এত সুন্দর আকাশ আর নেই। জীবনানন্দ দাশের
কবিতাতেও কিন্তু এ সময়ের আকাশের রঙের কথা আছে। আর আমাদের
জাতীয় কবির ভাষায়, “এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে/
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে…।-
প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি।
বিশেষ করে শরতের শিউলি তাকে মুগ্ধ করেছিল। সে মুগ্ধতার কথা জানিয়েই
তিনি লিখেছিলেন এ কবিতা। শরতের একেক রূপ, একেক পর্ব। শরৎকালের
কিছু অদ্ভুত ব্যাপার আছে। তাই বসন্ত বা হেমন্তের চেয়ে শরৎ একেবারেই আলাদা।
শরতে কিছু ফুল ফোটে, যা অন্য সময় ফোটে না। শরতের নির্মল নীল আকাশ
বিশাল বিশাল অট্টালিকার কারণে শহরের মানুষ দেখতে পান না শরতের
অপরূপ আকাশ। সত্যিই দূর্ভাগা শহরের মানুষ। )
তারিখঃ ১১ অক্টোবর ২০১৫
রেটিং করুনঃ ,